অন্তর্বর্তী সরকার গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শতভাগ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয়বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি।
তিনি অভিযোগ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, খুন, ধর্ষণ এবং মব সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে, যা জনগণের জানমালের নিরাপত্তাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এর দায়ভার অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে।
রোববার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনের উত্তর ইবরাহীমপুর দরুল উলুম মাদ্রাসা মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর কাফরুল থানা বিএনপির কর্মিসভা ও `রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা` কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমিনুল হক বলেন, আমরা স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে চাই। কিন্তু এখনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বৈরাচারের প্রেত্মাতারা বিদেশি প্রভুদের সহায়তায় দেশের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দেশে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি গোষ্ঠী মব জাস্টিসের নামে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, যা কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য নয়।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা বিএনপির নাম শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই তারা অস্বস্তিতে ভোগেন। তারা কেন যেন নির্বাচন মেনে নিতে পারেন না।
বিএনপি নেতা আমিনুল হক বলেন, গত ১৭ বছর ধরে বিএনপি আন্দোলন করে যাচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা ও জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্কার এবং স্বৈরাচারের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা নির্বাচনে যাবেন না। কিন্তু নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে দেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার এ দেশের সাধারণ মানুষ চায়, আমরাও চাই। তবে স্বৈরাচারের বিচার ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না। এ দেশের মানুষ গত ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি, তারা ভোট দিতে চায়। জনগণের নির্বাচিত সরকারই পারবে পরিপূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার করতে।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন আমিনুল হক। তিনি বলেন, আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করব। জনগণের প্রত্যেকটি দাবি পূরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাকস্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের জন্য কাজ করব। এ লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান `রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা` রূপরেখা দিয়েছেন।
কাফরুল থানা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ একরাম হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক আকরামুল হক আকরাম ও সাব্বির দেওয়ান জনির যৌথ সঞ্চালনায় এ কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুন হাসান, তারিকুল আলম তেনজিং, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোঃ মোস্তফা জামান, মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, এবিএমএ রাজ্জাকসহ অন্যান্য নেতারা।