পতিত স্বৈরাচার দেশ ধ্বংসে উঠেপড়ে লেগেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ১০:১৭ পিএম

পতিত স্বৈরাচার দেশ ধ্বংসে উঠেপড়ে লেগেছে

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে নারী হেনস্তাসহ ধর্ষণের ঘটনা। দেশ-বিদেশ থেকে করা হচ্ছে নানা ষড়যন্ত্র, প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা এবং সদিচ্ছা নিয়েও। কবে জাতীয় নির্বাচন সেই প্রশ্নে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। সংস্কার, ভোট, আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ।

রূপালী বাংলাদেশ: দেশে হঠাৎ করেই নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রকাশ্য মিছিল, নারী হেনস্তা ঘটনা বেড়ে যাওয়া কিসের ইঙ্গিত বহন করে?

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ: দেশে ধর্ষণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে সাথে নারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। তৃণমূলে, ওয়ার্ডে, থানায় প্রশাসনের কর্তৃত্ব প্রয়োগ হতে দেখা যাচ্ছে না। যার দায় পড়বে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরে। একই সাথে, সার্বিক পরিস্থিতি অস্থির করে ঘোলা পানিতে সুযোগের উদ্দেশ্য একটি মহল পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশকে কীভাবে ধ্বংস করা যায় সেই পরিকল্পনা মতোই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পতিত ফ্যাসিস্টসহ প্রতিবেশী দেশ। ফ্যাসিস্টের দোসরদের বহু অবৈধ অর্থসহ আরও সাহায্যকারী দেশ আছে, তারাও নানাভাবে অর্থবিত্ত জোগান দিচ্ছে। পতিত এই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সব শক্তি দিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তাদের উসকানিতে ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা, যা মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তবে, বিএনপি একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সফল নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করা সম্ভব হতে পারে।

রূপালী বাংলাদেশ: চলমান অস্থিরতা নিরসনে সরকারের ভ‚মিকা কেমন হওয়া উচিত?

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ: অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স সাত মাস শেষে আট মাস চলছে। সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি, তিনি সম্মানি এবং সফল ব্যক্তি তাকে আমরা সম্মান করি। তবে, বুঝতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনা অনেক দুরূহ কাজ। রাষ্ট্র এবং এনজিও পরিচালনা এক বিষয় নয়। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দরকার রয়েছে। দক্ষ-অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে দক্ষতা অভাব বিদ্যমান তার বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট হয়েছে দেখা দিয়েছে। চলমান অস্থিরতা পুরোপুরি নিরসনে জনগণের প্রতিনিধিত্বপূর্ণ সরকার প্রয়োজন। একমাত্র, জনগণের সরকারই পারে চলমান অস্থিরতা নিরসন করতে। আমরা আশা করি, সরকার এটি উপলব্ধি করবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দিবে, যারা জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকারে আসবে তারা নিশ্চয় অতীতের সব সরকারের চেয়ে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেবে।

রূপালী বাংলাদেশ: সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি, প্রশাসন পুরোপুরি কাজ করছে না, অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে?

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি দুর্বল সরকার। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া যারাই ক্ষমতায় আসে তাদের পক্ষে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব নয়, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। এই সরকার জনগণের কাছে পুরোপুরি জবাবদিহিতার জন্য বাধ্য নয়। ফলে, তারা সিন্ডিকেট ভাঙতে সফল হয়নি। প্রশাসনের কর্তৃত্ব না থাকায় একইসঙ্গে পতিত ফ্যাসিস্টের হাতে গড়া প্রশাসন এখনো ট্রমার ভেতর রয়েছে। পতিত স্বৈরাচার সরকার পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে তাদের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছিল। তাদের সঠিকভাবে গাইড করতে একটি নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। তা ছাড়া সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না তারা।

রূপালী বাংলাদেশ: ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়ে বিএনপির কোনো কর্মসূচির প্রয়োজন হবে কি না?

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ: অন্তর্বর্তী সরকার যদি চলতি বছরের ডিসেম্বের ভেতর নির্বাচন অনুষ্ঠিত না করতে চায়, বা নির্বাচন দিতে না চায়। তবে, আমাদের সঙ্গে যুক্ত সব দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

রূপালী বাংলাদেশ: জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবে স্থানীয় নির্বাচন সম্ভব কি না?

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ: জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যদি সেটা হয় তাহলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশটাকে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় নিয়ে যাবে। যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হবে, তত দ্রæত দেশের পরিস্থিতি সহজ হবে। বিগত ১৭ বছরের যত সব গণহত্যা হয়েছে তার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী। তবে, একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, দেশে কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচন করতে পারবে বা নিষিদ্ধ হবে তা জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।

রূপালী বাংলাদেশ: ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ আছে কি না?

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ: সব রাজনৈতিক দলই তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য জোটবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নিয়ে থাকে। বিএনপিও তাদের নির্বাচনি শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যুগপথ আন্দোলনের সব সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনের কথা ভাবছে। যেন আমরা আরও জোটবদ্ধ এবং শক্তিশালীভাবে ভোটের মাঠে জানান দিতে পারি। বিগত সময় বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় গেছে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে তা আরও পরিষ্কার হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যদি বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তবে জাতীয় সরকার গঠনের চেষ্টা করবেন। সে স্থান থেকে আমরা চেষ্টা করব ইসলামি দল, বাম-ডাম সবাইকে সঙ্গে নিয়েই জোটবদ্ধভাবে একটি শক্তিশালী নির্বাচন করব। যা দেশের জন্য এবং দেশের জনগণের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

রূপালী বাংলাদেশ: আপনাকে ধন্যবাদ।

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ: আপনাকে এবং দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!