দেশের সকল রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমরা অবশ্যই বাস্তবধর্মী সমালোচনা করতে পারি, তবে যদি আমরা এসব বিষয় সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে না পারি, তাহলে দেশের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা কেউই তা চাই না। আসুন, আমরা জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি এবং চিন্তা করি। রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমালোচনা থাকবে, তবে জনগণের বিষয়গুলো যেন কখনো ভুলে না যাই। সমালোচনা করতে গিয়ে জনগণের প্রয়োজন থেকে সরে যাওয়া উচিত নয়। এমন কিছু ঘটলে দেশের সকল সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা আমাদের কারো কাম্য নয়। সবাই একসাথে বসে জনগণের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারি—আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তবে জনগণের চাহিদা অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচন ও সংস্কারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, বাজার ব্যবস্থা এবং নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। নিত্যপণ্যের দাম নাগালের মধ্যে আনতে রাজনৈতিক দলগুলো কেন বিতর্ক করছে না? এ সময় তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসহ নতুন আটটি বিষয়ে নিজের সংস্কার ভাবনা তুলে ধরেন।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তারেক রহমান। রাজধানীর গুলশানে শুটিং ক্লাবে এনডিএম দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের সম্মানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল, কূটনীতিক ও পেশাজীবীদের প্রতিনিধিরা।
এ সময় তারেক রহমান আটটি সংস্কার বিষয় তুলে ধরেন:
১. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে দেশের মানুষ দুশ্চিন্তায় আছে। আমরা কেন রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে আলোচনা করছি না? যদি আমি ক্ষমতায় আসি, তবে কীভাবে এসব বিষয় সমাধান করা হবে এবং কীভাবে এগুলো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা হবে, সে বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা থাকা উচিত।
২. আমাদের ২০ কোটি মানুষের জন্য কমপক্ষে একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত—এ নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।
৩. দেশের উন্নতির জন্য সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত।
৪. কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কীভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব, সেই বিষয়ে আমাদের আলোচনা করা উচিত।
৫. শিল্প গড়ে তোলা এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা, এ বিষয়ে আমাদের সংস্কার প্রস্তাব থাকতে হবে।
৬. পরিবেশ দূষণজনিত অসুস্থতা থেকে দেশকে রক্ষা করার উপায় ভাবা জরুরি, এবং এই বিষয়ে সংস্কারের পরিকল্পনা থাকা উচিত।
৭. দেশের ২০ কোটি মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়েও সংস্কার প্রস্তাব হওয়া উচিত।
৮. জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য কীভাবে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই বিষয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে গণতন্ত্র ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবাই একমত।
তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর আগে সব দল মিলে ৩১ দফা প্রণয়ন করেছিল। তখন অনেকেই সংস্কারের কথা বলেননি, কিন্তু আমরা স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সংস্কারের বিষয় তুলে ধরেছিলাম। আমরা জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করি এবং আমাদের সবার উচিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে মতামত দেওয়া।