ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

এবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলছে বিএনপি?

মোস্তাফিজুর রহমান
প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল লোগো- ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার  রাতে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে দাবি করেছেন, কয়েকজন নেতাকে সামনে রেখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা চলছে।

‘ক্যান্টনমেন্ট থেকে’ এ পরিকল্পনা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বিষয়টিকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে ‘নতুন ষড়যন্ত্র’ হিসেবেও ব্যাখ্যা করেছেন  তিনি।

হাসনাত আবদুল্লাহ’র ওই বিস্ফোরক বক্তব্যে পুরোদেশে যখন তোলপাড়, ঠিক তখনই বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজেও একটি কার্ড শেয়ার হয়েছে।

 

যেখানে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের সাম্প্রতিক (৫ ফেব্রুয়ারি) একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না। সেই আওয়াজ আমরা উঠাচ্ছি। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আ. লীগের সাংগঠনিকভাবে বিচার দাবি করছি।’

এমন বক্তব্য প্রচারের তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন,  তাহলে দলীয়ভাবে বিএনপি কি আওয়ামী লীগ ‘নিষিদ্ধের’ দাবি তুলতে যাচ্ছে।

অনেকে এও বলছেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের ওই বক্তব্যটি ছিল ব্যাক্তিগত। কিন্তু এখন সেই বক্তব্য বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে নতুন করে দেওয়ার অর্থ এটি এখন দলীয় বক্তব্য।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘ফেসবুকের পোস্ট দেওয়ার বিষয়টি দেখে আমাদের মিডিয়া সেল। তারাই বিষয়টি বলতে পারবে।’

আওয়ামী লীগ ‘নিষিদ্ধের’ দাবি বিএনপি তুলবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয় আমার বক্তব্য নেই। এটা দলীয় ব্যাপার।’

আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারবে কিনা আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক না। এটা তাদের (আওয়ামী লীগ) বিষয়। অপরাধ করে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের ফেরার বিষয় আমাদের সামর্থের মধ্যে নেই।’

 

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা  ফ্যাসিবাদীদের (আওয়ামী লীগের) বিচার চাই। তারা এ দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। শত শত মানুষ হত্যা করেছে। ঘুম করেছে। এসবের বিচার অবশ্যই হতে হবে।’

প্রসঙ্গত, ছাত্রজনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারমধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের ক্ষমতার পতন ঘটে।

গণঅভ্যুত্থানের পর দলটির অনেক নেতাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। যারা দেশে অবস্থান করছেন তারাও আছেন গা ঢাকা দিয়ে। অনেকে আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ থেমে নেই। বিদেশে বসেই নানা ষড়যন্ত্রের খবর প্রতিনিয়তই আসছে।

এরমধ্যেই নানা অপকর্মে জড়িত থাকা দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। শুধু ছাত্রলীগই নয়, বিভিন্ন পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগ ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের।

সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। একই সুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির বক্তব্যও আসছে।

কিন্তু নিষিদ্ধের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান এখনও অস্পষ্ট রেখেছে। যদিও দলটি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলেও বিভিন্ন সময় বলেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে দায়িত্বশীল নেতার বক্তব্যে দিয়ে কার্ড শেয়ারে দলটির অবস্থান নিয়ে নতুনভাবে ডালপালা মেলেছে।