আ.লীগের পুনর্বাসন ও নিষিদ্ধকরণ প্রশ্নে উত্তপ্ত রাজনীতি, কে কী চায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৫, ১০:০৮ পিএম

আ.লীগের পুনর্বাসন ও নিষিদ্ধকরণ প্রশ্নে উত্তপ্ত রাজনীতি, কে কী চায়?

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রশ্নে দেশের রাজনীতি এখন উত্তপ্ত। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তোলেন।

এরপর দলটিকে নিষিদ্ধের পাশাপাশি নির্বাচনের দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। একই দিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। মানবতাবিরোধী অপরাধে দলের মন্ত্রী-এমপিসহ নানা পর্যায়ের নেতাদের বিচার শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি সামনে আসে।

তবে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। কোনো দাবির কারণে নির্বাচন স্থগিত হবে না।’

এদিকে, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে একটি নতুন ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চলছে, যার মূল পরিকল্পনায় রয়েছে ভারত। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে এই ষড়যন্ত্র সাজানো হচ্ছে।

হাসনাত আব্দুল্লাহর এই পোস্টের পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আরও জোরালো হতে থাকে।

বিএনপির অবস্থান: দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণহত্যা ও লুটপাটে জড়িত নয়, এমন নিরপরাধ কেউ নেতৃত্ব নিলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আপত্তি নেই। তবে বিচার শেষে জনগণ চাইলে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরতে পারে।

শুক্রবার (২১ মার্চ) সকালে রাজধানীর উত্তরা ফায়দাবাদ মধ্যপাড়া হাজি শুকুর আলী মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে এক জনসভায় রিজভী বলেন, শুধু শেখ হাসিনার বিচার নয়, আদালতের ন্যায়সঙ্গত বিচার হলে ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ আর মাথাচাড়া দিতে পারবে না। তখন কে রাজনীতি করবেন বা করবেন না, সেই সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে।

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ৩৬ জুলাই বন্ধ হয়ে গেছে, নতুন করে খোলার কোনো সুযোগ নেই। গণহত্যার বিচার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় পার্টির অবস্থান: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে নই। আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল, এর নেতাকর্মীরা খারাপ হতে পারে, কিন্তু দলকে নিষিদ্ধ করা সঠিক হবে না।

শুক্রবার (২১ মার্চ) বিকেলে রংপুর নগরীর সেনপাড়ায় তার বাসভবন ‘দ্য স্কাই ভিউ’-তে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসিনা ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছেন। তিনি জোর করে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, যা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তবে, পুরো দলকে নিষিদ্ধ করা সমাধান নয়।

হেফাজতে ইসলামের হুঁশিয়ারি: হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, এ দেশের তৌহিদি জনতা আওয়ামী লীগকে বিদায় করেছে। তাদের পুনর্বাসনের কোনো চেষ্টা বরদাশত করা হবে না। যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়, তাহলে তা আমাদের লাশের ওপর দিয়ে করতে হবে।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শুক্রবার (২১ মার্চ) রাতে বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই। খুনিদের বিচারের কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে।’

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন ও নিষিদ্ধকরণ প্রশ্নে দেশের রাজনীতি চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন তাদের নিজ নিজ অবস্থান স্পষ্ট করেছে। কেউ দলটির নিষেধাজ্ঞার পক্ষে, কেউ বা পুনর্বাসনের বিষয়ে শর্তসাপেক্ষে ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন। তবে বিষয়টি এখনো রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে অবস্থান করছে।

আরবি/একে

Link copied!