ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির বিক্ষোভের ডাক

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২৫, ০১:৪৫ এএম
ছবি : সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি গণহত্যার বিচারসহ দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আগামীকাল শনিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

শুক্রবার (২১ মার্চ) রাতে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল ও গণহত্যার বিচারসহ দলটির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারের ১৫ তলায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

যেখানে অবিলম্বে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দাবি করে দলটি। একই সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে এনসিপি।

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম লিখিত বক্তব্য পাঠকালে বলেন, ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের ৭ মাস অতিবাহিত হলেও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের খুনিদের বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল। আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে এত সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক বক্তব্য থাকার পরও বিচারিক প্রক্রিয়ার ধীরগতি অত্যন্ত নিন্দনীয়।

তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ ফ্যাসিবাদী রেজিমির সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। আমরা তার এই বক্তব্যের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম, ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।

এনসিপি মনে করে, বিচারিক কার্যক্রমের পরিণতি দৃশ্যমান হতে হবে। আত্মপ্রকাশের পর থেকে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি- কৃত অপরাধের বিচার, দায় স্বীকার, অনুশোচনা, পাপ মোচন ব্যতীত আওয়ামী লীগের দল হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকার পক্ষে যেকোনো ধরনের তৎপরতা ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের শামিল। এনসিপি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত অপরাপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চয়তা চায়। বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়া গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে ফেরানোর যেকোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে মনে রাখতে হবে আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেনি। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রেজিমি দেশ থেকে উৎখাত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করছে। বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়ার যেকোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে।

তিনি বলেন, আওয়ামী মতাদর্শী দল ও মার্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ‘৩৬ শে জুলাই’ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দল ও মতাদর্শী হিসেবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার সব অধিকার হারিয়েছে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সব সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজনৈতিক ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ঘোষিত জুলাই সনদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।