ঢাকা বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

জিয়া হত্যা থেকে এরশাদের ক্ষমতা দখল

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৫, ০২:৫১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

১৯৮১ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গভীর রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। যা পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের হত্যার মাধ্যমে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এরশাদের ক্ষমতা দখলও এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

৪৩ বছর আগে এই দিনে সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন জেনারেল এরশাদ।

এরশাদের ক্ষমতালাভ

১৯৮১ সালের ৩০ মে, চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর এক বিদ্রোহী দলের হাতে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জিয়া হত্যার ঘটনা একটি চরম রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি করে। যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সামরিক বাহিনীর একাংশের সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং তাদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তীব্র বিরোধ চলছিল। তবে, কখনোই পুরোপুরি পরিষ্কার হয়নি যে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে কাদের সরাসরি সম্পর্ক ছিল।

জিয়া হত্যার পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ অস্থির হয়ে পড়ে। জিয়ার মৃত্যু-পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকারের মধ্যে কোন্দল শুরু হয় এবং দেশ চলছিল নেতৃত্ব শূন্যতার দিকে। এরশাদ তখন সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে এক ধরনের অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে নিজের অবস্থান শক্ত করার সুযোগ পান।

এরশাদের ক্ষমতা দখলের পেছনে মূল কারণ ছিল সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি। তিনি দেখেছিলেন, দেশের রাজনীতিতে বিরোধিতা এবং দলীয় কোন্দল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে এবং সেনাবাহিনীকে একটি শক্তিশালী ভূমিকা দিতে হলে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরাসরি ক্ষমতা দখল করা প্রযোজ্য হবে।

১৯৮১ সালের শেষের দিকে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখেন তিনি। এর ফলে, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

এছাড়াও, এরশাদ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন। যেমন দেশের সংবিধানকে স্থগিত করে সামরিক শাসন চালু করেন এবং জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বাতিল করেন।

এরশাদ জানতেন যে, সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হবে এবং সঙ্গত কারণে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাত্তারের প্রতি সমর্থন জানান। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তার অবস্থান নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সুযোগ নিয়ে তিনি ক্ষমতা দখল করেন।

এছাড়া, এরশাদ খুব সাবধানতার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং প্রভাবশালী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। এরশাদ জানতেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সামাল দেওয়া কঠিন হবে।

এরশাদের ক্ষমতা দখল একটি পরিকল্পিত এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ফল ছিল। যা সেনাবাহিনীর সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়েছিল। যদিও এটি ছিল রক্তপাতহীন একটি অভ্যুত্থান। তবে এরশাদের শাসনকাল ছিল বিতর্কিত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভরা। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থান এবং আন্দোলনের পর এরশাদকে পদত্যাগ করতে হয়। 

এরশাদের পদত্যাগ

এরপর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসে।