বুধবার, ০২ এপ্রিল, ২০২৫

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে শঙ্কিত ভারত?

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৫, ১০:১৭ পিএম

চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে শঙ্কিত ভারত?

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিকাশ ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং সামরিক খাতে ব্যাপক সহায়তা প্রদান করছে  চীন , যা ভারতের নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে চীন স্বাগত জানিয়ে গত বছরের আগস্ট থেকে সরকারের গৃহীত সংস্কার কর্মসূচি ও অগ্রগতির প্রশংসা করেছে।

আর এতেই সতর্ক অবস্থান নিচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার (৩১ মার্চ) পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় হওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।

অনেকে ধারণা করছেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর ইতিবাচক হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়েই বাংলাদেশের প্রতি তার অবস্থান পরিবর্তন করছে ভারত।

চীন সফরে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানসহ নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি ভৌগোলিক নানা ইস্যুতে তিনি কথা বলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ভারতের ৭টি রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা তুলে ধরেন ড. ইউনূস।  

ইংরেজিতে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ল্যান্ডলকড (স্থলবেষ্টিত) অঞ্চল। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।’

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যের জন্য এটি একটি বিশাল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। সুতরাং, এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণও হতে পারে। পণ্য তৈরি করা, উৎপাদন করা, বিপণন করা এবং তা আবার চীনে নিয়ে যাওয়া এবং বাকি বিশ্বে তা ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ হতে পারে এখানে।

ড. ইউনূসের এমন মন্তব্য নিয়ে ভারতের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে রাজনীতিক মহল এবং সংবাদমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তারা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যে রীতিমতো হতভম্ব।

ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ এটিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন, কেউবা এমন বক্তব্যে অবাক হয়েছেন। যদিও ভারত সরকার এ নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

চীন বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। এর পাশাপাশি, চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম আমদানি এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির ফলে ভারত মনে করছে  এটি দক্ষিণ এশিয়ায় তার আঞ্চলিক আধিপত্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারতের জন্য একটি বড় সমস্যা হলো চীনের ভূ-রাজনৈতিক উপস্থিতি। কারণ, এতে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হয়।

তাদের চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে চীনের অবকাঠামোগত বিনিয়োগ এবং ঋণ সহায়তার মাধ্যমে চীন এই অঞ্চলে তার কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করছে। এটি ভারতের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে শক্তিশালী হলেও, চীনের প্রভাব বাড়ানোর ফলে ভারত আশঙ্কিত হচ্ছে যে, এটি ভবিষ্যতে তার সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন বা সহযোগিতায় বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভারতের জন্য একটি নতুন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দেশটি কূটনৈতিক ও নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

আরবি/এসএম

Link copied!