সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

ভারতে পলাতক আ.লীগ নেতারা প্রস্তুত করছে অ্যাকশন প্ল্যান

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৮, ২০২৫, ১০:২১ এএম

ভারতে পলাতক আ.লীগ নেতারা প্রস্তুত করছে অ্যাকশন প্ল্যান

ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পলাতক শীর্ষ নেতাদের অনেকে বিদেশে ইফতার পার্টির নামে মেতে উঠেছেন নয়া ষড়যন্ত্রে। বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করতেই এই ষড়যন্ত্র। এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দেশি-বিদেশি চক্র এখন পুরোমাত্রায় সক্রিয়। এজন্য ভারতের কলকাতা, আগরতলা, মেঘালয় ও দিল্লির মাটিকে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছেন পলাতক আওয়ামী নেতারা।

এদিকে, ভারত ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারাও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হটাতে একাট্টা। কীভাবে বিদেশে বসে দেশের মধ্যে নানারকম অঘটন ঘটিয়ে সাধারণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা যায়, সে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সবশেষ ষড়যন্ত্রের উত্তপ্ত কড়াইয়ে ঘি ঢালার অবস্থা তৈরি হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান চীন সফরকে কেন্দ্র করে। এ সফরে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ ভারত। কেননা, ঢাকা যদি এ মুহূর্তে ভূরাজনৈতিক স্বার্থসুরক্ষার প্রশ্নে চীনের কবজায় চলে যায়, তাহলে ড. ইউনূস সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে বেশ বেগ পেতে হবে।

ষড়যন্ত্র সফল করতে কোর গ্রুপ তৈরি করে ঘনঘন বৈঠকে বসছেন পলাতক আওয়ামী নেতারা। মধ্য রমজান থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তাদের অন্তত ৫ দফা বৈঠকে মিলিত হওয়ার খবর জানা গেছে।

সম্প্রতি কলকাতার রাজারহাট এলাকায় একটি ইফতার পার্টির আয়োজন করেন সেখানে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, মইনুল হোসেন খান নিখিল, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ অনেকে। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও সস্ত্রীক ছিলেন এই ইফতার পার্টিতে।

পরদিন একই স্থানে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পলাতক শতাধিক নেতা ইফতার পার্টির নামে মিলিত হন। দুটি ইফতার পার্টিতেই আসাদুজ্জামান খান কামাল অন্তর্বর্তী সরকারকে যে কোনো মূল্যে উৎখাতে যার যার অবস্থান থেকে জোরালো ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেন।

জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নেতাদের মধ্যে অন্যতম আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম।

এর আগে, তিনি ১০ জানুয়ারি কলকাতার নিউ টাউন এলাকার ‘কলকাতা নিউ টাউন অ্যাক্সিস মহলে’ একটি বৈঠকের আয়োজন করেন। ওই বৈঠকেও শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মোতাবেক অন্তর্বর্তী সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।

সূত্র জানায়, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম একসময় ছিলেন পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার। এর বাইরে তিনি শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার ফান্ড ম্যানেজার হিসাবেও পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুস-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করা পলাতক এই আওয়ামী লীগ নেতার ঢাকায় রয়েছে বড় পরিসরের মদের ব্যবসা। যিনি নিজ এলাকা ফেনীতে গড়ে তোলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। একইভাবে মাদক ব্যবসা, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ঘুস-চাঁদাবাজির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ।

অভিযোগ রয়েছে, ড. ইউনূস সরকারকে উৎখাত করতে পতিত এবং পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ এখন ব্যয় করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, কলকাতার বাইরে বুধবার (২৬ মার্চ) যুক্তরাজ্যের সেন্ট্রাল লন্ডনে অবস্থিত একটি মিলনায়তনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ইফতার পার্টি এবং বিজয় দিবসের আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীল সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেটের সাবেক সংসদ-সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবসহ দেড় শতাধিক নেতা এতে অংশ নেন। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করতে ওই বৈঠক থেকে আবদুর রহমান দলের নেতাকর্মীদের সর্বশক্তি নিয়োগ করার আহ্বান জানান।

জানা যায়, একই দিন অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায়, বেলজিয়াম, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক জায়গায় ইফতার পার্টির পাশাপাশি বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনাসভার আয়োজন করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। বেলজিয়ামের আলোচনাসভায় সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ছিলেন প্রধান অতিথি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, হঠাৎ গদিহারা হয়ে কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা প্রথমদিকে কিছুদিন চুপচাপ ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তারা বেশ সরব এবং সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে কলকাতা, আগরতলা, দিল্লি, মেঘালয়সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা কিছুদিন ধরে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকের মূল এজেন্ডা অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ করা। দেশকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি আসন্ন ঈদ ও বৈশাখকে ঘিরেও চলছে সরকার উৎখাতের নানামুখী ষড়যন্ত্র।

সূত্রগুলো বলছে, ঈদের পর দেশে নাশকতামূলক বড় ঘটনার যেসব গোয়েন্দা আভাস ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে, এর নেপথ্যে রয়েছে আওয়ামী এই কোর গ্রুপসহ দেশি-বিদেশি একাধিক চক্র।

জানা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে আগে থেকেই হাজার হাজার বৈধ ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্র নাশকতা পরিকল্পনায় ব্যবহার করতে ছক কষা হচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি করতেও পরিকল্পনা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানায়, আপনাদের মনে রাখতে হবে, যেসব পরিকল্পনা বাইরে ফাঁস হচ্ছে, বাস্তবে এগুলো কখনো প্রয়োগ করা হবে না। এ ধরনের পরিকল্পনা যদি ফাঁস হয়ে যায়, সেটি তো আর ‘ষড়যন্ত্র’ থাকে না। ফলে সরকার উৎখাতের অংশ হিসাবে যা ঘটবে এবং যা যা করা হবে, তা কেউ আগাম জানতে পারবে না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার দলের লোকজন বিদেশে বসে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় ফিরে আসতে নানারকম ষড়যন্ত্র করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এজন্য দেশপ্রেমিক সবাইকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কোনো শক্তি কিছু করতে পারবে না।

তথ্যসুত্র: যুগান্তর

আরবি/এসবি

Link copied!