পবিত্র ঈদুল ফিতরে ৩৯টি নির্বাচনি আসনে জনসংযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। তাদের অনেকে নির্বাচনি এলাকার মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারও সাঁটিয়েছিলেন। ঈদ উদ্যাপন শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন এনসিপির নেতারা।
গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতরের আগেই এনসিপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় চলে যান। এর আগে রমজানের শেষ দিকে অনেকে নিজ নিজ এলাকায় জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। শহীদ পরিবারগুলোকে ঈদ উপহারও দিয়েছেন অনেক নেতা। ঈদের দিন এবং আগে–পরে এনসিপির স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় ও জনসংযোগ করেছেন। কেউ কেউ নিজ এলাকায় ঈদের জামাতে বক্তব্যও দিয়েছেন। কোথাও কোথাও প্রীতি ফুটবল, ক্রিকেট খেলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব আয়োজনের পাশাপাশি স্থানীয় সংখ্যালঘু ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করতে দেখা গেছে।
ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে এলাকায় পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটানো, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে গিয়ে জনসংযোগ, ঈদ পুনর্মিলনী ও মতবিনিময়ে ব্যস্ত সময় পার করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণদের গড়া এই দলের নেতারা।
কোনো কোনো এলাকায় এনসিপি নেতাদের সাঁটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক ও কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠানের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার কথা জানা গেছে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, আমাদের ঢাকাকেন্দ্রিক পোস্টারগুলো অক্ষত আছে। ঢাকার বাইরে অনেক জায়গায় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-১ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি ঈদের এক সপ্তাহ আগে ২৪ মার্চ শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে পঞ্চগড়ে নিজ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারাভিযানে গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন। এলাকার মানুষকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পঞ্চগড় জেলাজুড়ে ২ হাজার পিভিসি লাগিয়েছিলেন সারজিস। এলাকায় যাওয়ার পর থেকে একেক দিন একেক ইউনিয়নে জনসংযোগ করেছেন।
সারজিস আলম বলেন, আমি মানুষকে বলেছি, মার্কা ও দলের নাম দেখে ভোট দেওয়া বন্ধ করতে হবে। আপনারা মানুষ দেখে ভোট দেবেন। যোগ্য ও সৎ মানুষ জনপ্রতিনিধি হলে ভালো সেবা পাবেন। টাকার বিনিময়ে কেউ যাতে ভোট না দেয়।
তিনি বলেন, এলাকার মানুষ আসলে বেশি কিছু চায় না। তারা চায় যিনি সংসদ সদস্য হবেন তিনি নির্বাচনের সময় ছাড়াও মাঝে মধ্যে এলাকায় যাবেন তাদের খোঁজ-খবর নেবেন, কথা শুনবেন। বাসার সামনের কাঁচা রাস্তাটা যাতে পাকা করা হয়, সেটাও তাদের চাওয়া।
সারজিসের মতো আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এনসিপির অন্তত ৪১ জন কেন্দ্রীয় নেতা ঈদের সময় এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। এর মধ্যে দুটি আসনে (ফেনী-২ ও ঝালকাঠি-১) দুজন করে নেতা জনসংযোগ করেছেন। সেই হিসাবে অন্তত ৩৯টি নির্বাচনি আসনে এনসিপির নেতারা ঈদে নানামুখী তৎপরতা চালিয়েছেন।
তবে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা–১১ আসনে (রামপুরা–বনশ্রী এলাকা) প্রার্থী হতে চান বলে আলোচনা আছে।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ঈদের দিন ঢাকায় ছিলেন। তবে তিনি রমজানে ভোলা-১ আসনে দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ইফতারসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এর আগেও এলাকায় তার যাতায়াত ছিল।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ঈদের কয়েক দিন আগেই নিজ এলাকায় (রংপুর-৪) গিয়ে জনসংযোগ শুরু করেন। তিনি ঈদে নিজ এলাকায় শুভেচ্ছা বিনিময়, শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও জনসংযোগ করেন। ঈদের আগে ২৭ মার্চ পীরগাছা-কাউনিয়া এলাকায় বেশকিছু অটোভ্যানে করে নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘শোডাউন’ করেন।
প্রচার শুরুর আগে আখতার হোসেন বলেন, এনসিপি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার শর্তাবলি পূরণ করতে সক্ষম হবে। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন।
ঢাকা-১৪ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি ঈদের দুই দিন আগে থেকে এই এলাকার ১২ জন শহীদের (জুলাই অভ্যুত্থানে) পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন, ঈদ উপহার দিয়েছেন। তিনি ঈদের দিন মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বরে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছেন। পাশাপাশি মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা সংবলিত প্রায় ২ হাজার পোস্টার সাঁটিয়েছেন।
দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ঈদে নরসিংদী-২ আসনের বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেন। তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের কবর জিয়ারত, শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসন্তীপূজা ও সংকীর্তনেও অংশ নিয়েছেন।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসেইন ঢাকা-১৩ আসনের (মোহাম্মদপুর–আদাবর) বিভিন্ন এলাকায় ঈদকে কেন্দ্র করে পোস্টার সাঁটানোর পাশাপাশি জনসংযোগ করেছেন।
আরেক যুগ্ম সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের ফতুল্লার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জনসংযোগ করেছেন। এই আসনের যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবার ও গুরুতর আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া, নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ব্যক্তি, গণমাধ্যমকর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও পেশাজীবীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।
একইভাবে ঈদে নিজ এলাকায় সক্রিয় ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী (চাঁদপুর-৫), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ (নোয়াখালী-৬), যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম (কুষ্টিয়া-১), যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক (চট্টগ্রাম-১৬), মশিউর রহমান (ঝালকাঠি-১), মো. নিজাম উদ্দিন (ঢাকা-৫) ও মাহিন সরকার (সিরাজগঞ্জ-৫)।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন (নওগাঁ-৫), মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন (পটুয়াখালী-২), আতিক মুজাহিদ (কুড়িগ্রাম-২) ও মাহবুব আলম (লক্ষ্মীপুর-১), যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ (সিরাজগঞ্জ–২), যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (গাজীপুর-৩), মোল্যা রহমতুল্লাহ্ (বাগেরহাট-৩), যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত (ফেনী-২), দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার (ঢাকা-৫), উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিয়ন (নীলফামারী-৪), যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিম (ঠাকুরগাঁও-৩), আরিফুর রহমান তুহিন (ঝালকাঠি-১), সাকিল আহমাদ (মেহেরপুর-২), আশিকিন আলম (ময়মনসিংহ-৯), তুহিন মাহমুদ (নারায়ণগঞ্জ-৩), আবদুল্লাহ আল ফয়সাল (নরসিংদী-৫), খান মুহাম্মদ মুরসালীন (ঢাকা-৬), নাভিদ নওরোজ শাহ্ (কুমিল্লা-৬), উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আবদুল্লাহ আল মনসুর (ফেনী-২) ও মিরাজ মেহরাব তালুকদার (ময়মনসিংহ-৫) এবং সদস্য আবদুল্লাহিল মামুন নিলয় (নরসিংদী-৩), মো. ইমরান হোসেন (ঢাকা-২), এহসানুল মাহবুব জোবায়ের (ফেনী-১), ফাহিম রহমান খান পাঠান (নেত্রকোনা-২), সোহেল রানা (মেহেরপুর-১) ও সাইয়েদ জামিলও (রাজবাড়ী-২) নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ঈদের সময় জনসংযোগ করেছেন।
ঈদকেন্দ্রিক জনসংযোগে এনসিপির নেতারা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের বাসায় আমাদের নেতারা গিয়েছেন। এর জন্য তারা দলীয় নির্দেশনার অপেক্ষা করেননি। ঈদের আনন্দের মধ্যেও ভাবগাম্ভীর্যটা ছিল।
তিনি বলেন, তারা এখন সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক কার্যালয় স্থাপন, গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করাসহ নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি আগামী ২ মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা থাকবে তাদের।