ঢাকা বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

‘স্পষ্ট’ কিছু জানতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যাচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা, হিসাব-নিকাশ ও উদ্বেগ। এ প্রেক্ষাপটে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন ইস্যুতে সুস্পষ্ট রূপরেখা জানতে চায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে।

আগামী বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বিএনপি মনে করে, নির্বাচনী বিষয়ক ঘোষণায় সরকারের পক্ষ থেকে নানা সময় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ও সময়সীমা তুলে ধরায় সাধারণ জনগণসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিভ্রান্তি নিরসন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সময়সীমা স্পষ্ট করতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আহ্বান জানানো হবে।

ড. ইউনূস এর আগে একাধিক বক্তব্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, বড় সংস্কার হলে নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনে এবং ছোট সংস্কার হলে নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে হতে পারে। তবে বিএনপি ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানে একরকম বিরোধিতা করছে। তারা ২০২৫ সালের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায়। এই দাবির সঙ্গে একমত হয়েছে আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

একদিকে জামায়াতে ইসলামী সংস্কারের পর যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন চায়, অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায়, আগে সংস্কার, পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন। এনসিপি কখনো কখনো গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিও তোলে। কেউ কেউ পাঁচ বছর পর্যন্ত এই সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে মত দিচ্ছেন—এসব মিলে রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে দ্বিধা ও অস্থিরতা।

তবে এসব জল্পনা-কল্পনা উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চলতি ডিসেম্বরকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ১৭ বছর ধরে আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। এ কারণেই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আমরা বারবার আন্দোলনে নেমেছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি বলেছেন ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে, আবার বলেছেন জুনেও হতে পারে। কিন্তু জুন তো বর্ষাকাল, তখন নির্বাচন সম্ভব নয়। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো আওয়ামী বাহিনী লুকিয়ে রয়েছে। তারা প্রধান উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। তাই আমরা সরাসরি তার সঙ্গে বৈঠক করে জানতে চাই, আসল রোডম্যাপ কী।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও হাসিনা গেছে, কিন্তু তাদের প্রেতাত্মা সচিবালয় থেকে শুরু করে মিডিয়া, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র জেঁকে বসে আছে। প্রধান উপদেষ্টার একেক বক্তব্যে যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে বৈঠকের প্রয়োজন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার নির্বাচনের রূপরেখা না দিলে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর, ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। শুরু থেকেই বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে বিএনপি বারবার দাবি জানিয়ে আসছে—প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।

বিএনপি বলছে, ডিসেম্বরের পর নির্বাচন দেওয়া না হলে তারা বিরোধিতা করবে এবং প্রয়োজনে রাজপথে কর্মসূচি দেবে।

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের মনোভাব বুঝে পরবর্তী রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করবে বিএনপি। যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি মেলে, তাহলে তারা নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। আর যদি নেতিবাচক সাড়া আসে, তবে রাজপথে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৬ এপ্রিলের বৈঠকে কী হয়, আগে দেখি। তারপর আমরা কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা নির্ভর করে সরকার ও প্রধান উপদেষ্টার অবস্থানের ওপর।

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ড. ইউনূস বড় ও ছোট সংস্কার বলে যা বোঝাতে চাচ্ছেন, তা পরিষ্কার হওয়া জরুরি। ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন দিতে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক বাধা নেই। তাহলে রোডম্যাপ দিতে বিলম্ব কেন?

তিনি আরও বলেন, আপনি (ড. ইউনূস) আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত একজন ব্যক্তি। নির্বাচনী সময় নিয়ে আপনার বারবার অবস্থান পরিবর্তনে জাতি ও বিশ্ব সম্প্রদায় বিভ্রান্ত হচ্ছে।

বিএনপি নেতারা বলেন, তারা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করে আসছে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা মামলার মধ্যেও দলটি অটুট রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে হাজারো নেতাকর্মী রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন।

তারা জানান, নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার না হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন নিশ্চিত করতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়ে মাঠে নামবে বিএনপি।

আগামী বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিএনপির প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসবে। বৈঠকে নির্ধারিত রোডম্যাপ না এলে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। প্রতিটি জেলা ও শহরে সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।