ছাত্র-জনতার গণঅভুত্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি বরাবরই আলোচনায়। এরই মধ্যে দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দফায় দফায় আন্দেলন হলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সরকার।
তবে এরই মধ্যে দলটিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঝটিকা মিছিল বের করতে দেখা গেছে। এতে অনেকেই ধারণা করছেন, দলটি আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারে।
তবে দলটি যেন রাজনীতির মাঠে ফিরতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষেরও দাবি, দলটি যেন রাজনীতিতে না আসতে পারে।
অনেকেই বলছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকারের দোটানা মনোভাবের কারণে দলটি মাঠে নামার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে ষড়যন্ত্র করছে তারা। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দ্রুত দলটিকে নিষিদ্ধ করা জরুরি। নয়তো দলটি অপতৎপরতা চালিয়েই যাবে।
তবে এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানায়, জনবিচ্ছিন্ন ও বেআইনি সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।
এদিকে, একই দিন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ও ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের কোনোরকম নিষ্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যদি এগুলো ভালোভাবে কন্ট্রোল করতে না পারে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবারের চারুকলা থেকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের নানান দাবি এবং পতিত স্বৈরাচারের নানা মোটিফ।
স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তারা রাজনীতি করেনি। রাজনৈতিক দলসুলভ যে আচরণ, সেটা গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের কাছে দেখতে পাইনি। যে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে চায়নি, রাজনীতির নামে গণহত্যা করেছে, তাদের বাংলার জমিনে রাজনীতি করার অধিকার নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যে দেশে কোনো দল গণহত্যা চালিয়েছে, তারা পরবর্তীতে আর রাজনীতি করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ যে শুধু গণহত্যা চালিয়েছে তা নয়, তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বর্গা দিয়েছে। তাই আমরা আমাদের ভাগ্যকে কারো হাতে বর্গা দেওয়ার মতো সুযোগ আর দিতে চাই না।’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের একটি সুযোগ দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দিল্লির স্বার্থ বাস্তবায়ন করে গিয়েছে। যখনই কেউ প্রতিবাদ করেছে, তাকে আয়নাঘরে পাঠানো হয়েছে অথবা গুম করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার ভাইদের তুলে নিয়ে জঙ্গি তকমা দিয়েছে। এরপরে জুলাইয়ে অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলে দেশব্যাপী গণহত্যা চালায় আওয়ামী লীগ। দুনিয়াতে এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা উৎসাহ নিয়ে করেনি। এই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা হলে আমাদের শহীদদের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজিব বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিতে নাৎসি পার্টি গণহত্যা চালানোর দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল। তারা এখনো নিষিদ্ধ হয়ে আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশে গণহত্যা চালানোর পর এখনো নিষিদ্ধ হচ্ছে না। যে আওয়ামী লীগের গায়ে শাপলা হত্যাকাণ্ড, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের রক্ত লেগে আছে, সেই আওয়ামী লীগকে কোনো স্বার্থ বাস্তবায়ন করার জন্য নিষিদ্ধ করা হচ্ছেছে না, তা আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, আপানারা অতি দ্রুত গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন। সারা বাংলার ছাত্র-জনতা আপনাদের সঙ্গে আছে।’
এই সাবেক সমন্বয়ক নিজের ফেসবুকে শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে এক পোস্টে লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শীঘ্রই আমরা গণআন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছি। আজকে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্পটের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
‘ঢাবি, বুয়েট, জবি, জাবি, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি, ঢাকা কলেজ, জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্স, এন্টি ফ্যাসিস্ট কোয়ালিশন, স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিরা আলোচনায় ছিলেন।’
‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আবারও আন্দোলন গড়ে তুলছি। গণহত্যার বিচার, খুনি লীগ নিষিদ্ধ, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র আমরা আদায় করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। সবাই প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে পুরো দেশব্যাপী।’-বলেন সাবেক এই সমন্বয়ক।