ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পতন হয় স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
১৫ বছরের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হাজারখানেক মানুষের প্রাণ নিয়েছিলেন তিনি।
দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে পালালেও মাঠে এখনো সক্রিয়ে আছে দলটি। এ অবস্থায় দলটি ক্ষমা চাওয়ার বদলে উল্টো হুমকি-ধমকি দিচ্ছে জনসাধারণকে। এমনকি প্রকাশ্যেই ফের সংগঠিত হতে শুরু করেছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের নানা অ্যাক্টিভিটি বর্তমানে চোখে পড়ার মতো।
একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া অব্যাহত আছে। শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা সংখ্যায় কম থাকলেও ক্রমেই তা বড় হচ্ছে এবং এই ঝটিকা মিছিলের সংখ্যাও বাড়ছে।
গত বছর ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে রাজপথে নামার ঘোষণা দিয়েছিল পতিত আওয়ামী লীগ। কিন্তু ছাত্র-জনতার কড়া অবস্থানে ধোপে টেকেনি তাদের সেই ‘ফাঁকা’ আওয়াজ।
এদিকে, ক্ষমতাচ্যুতির মাত্র ৮ মাসের মাথায় আওয়ামী লীগের এই সক্রিয় হওয়া এবং ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিল নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, কারা তাদের নেপথ্যে থেকে মদদ দিচ্ছে? কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দলটি আবারও রাজনীতির মাঠে নামছে দলটি?
ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে বসে একের পর এক উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আবারও নেতা-কর্মীদের মাঠে নামার জন্য ইন্ধন দিচ্ছেন। একের পর এক অডিও বার্তা দিচ্ছেন নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে। সেই বার্তা শুনে অনেকেই রাজপথে নেমে আসছেন। গেল ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ভোরে রাজধানীর গুলিস্তানে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
রোববার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কিশোরগঞ্জে সদরের পাকুন্দিয়া সীমান্তে পুলেরঘাট এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। বিকেল ৩টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন তার ফেসবুক আইডিতে মিছিলের ছবি শেয়ার করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় থাকতেই সতর্ক না হলে এবং দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হলে ক্ষমতাচ্যুত দলটির নেতাকর্মীদের অপতৎপরতা বাড়তেই থাকবে।
ফলে নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা হলে আওয়ামী লীগ পুরোনো চেহারায় ফিরে আসবে। ফের অশান্ত হবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পরবর্তী সময়ে যার খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে। নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও ৩ বছরের মধ্যে দল বা ভবিষ্যৎ জাতীয় সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে আওয়ামী লীগ একের পর এক ‘ষড়যন্ত্র কার্ড’ খেলবে।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে মাঠে নামানোর পেছনে দেশি-বিদেশি চক্র ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ও সরকারে পুনর্বাসন করতে ‘বিকল্প প্ল্যান’ নিয়েও তারা ব্যস্ত সময় পার করছে। কাজে লাগাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত।
এদিকে, সন্দেহের তির পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন ছাড়াও রাজনৈতিক কয়েকটি দলের দিকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনের মধ্য থেকে সবুজ সংকেত না থাকলে এত বড় গণহত্যার পরও দলটির মাঠে নামার কথা নয়। বিশেষ করে প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসররা কৌশলে সমর্থন ও উসকানি দিচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :