ঢাকা সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

শিগগিরই নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাচ্ছে জামায়াত

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখনও বিচারাধীন রয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলা। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আট মাস পেরিয়ে গেলেও দলটির ঐতিহাসিক নির্বাচনি প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
 
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারা আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পেলেও এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দি রয়েছেন জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলও এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে আপিল বিভাগে। নিবন্ধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অপেক্ষমাণ।

দলের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আইনি জটিলতায় কিছুটা বিলম্ব হলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। চলতি সপ্তাহেই আপিল বিভাগে এই দুটি মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনের তারিখ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলেও রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি শুরু করেছে। জামায়াতও প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তবে নিবন্ধন এবং প্রতীকের অনিশ্চয়তা দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করেছে। তারা আশা করছেন, নির্বাচনের আগেই নিবন্ধন এবং এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।

জামায়াতের আইনজীবী শিশির মনির জানান, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত একটি ‘সার্টিফিকেট আপিল’ করেছে, যা সংবিধানিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের আওতাভুক্ত হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ শুনানি প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘শুনানি শুরু হলেও বিপক্ষের আইনজীবী দেশের বাইরে থাকায় বিলম্ব ঘটে। এরপর মামলার সংশ্লিষ্ট বিচারপতি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় দীর্ঘদিন আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে শুনানি দ্বিতীয় দফায় পিছিয়ে যায়।’

তিনি আরও জানান, ‘আগামী ২০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট খুলবে। প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল ও বুধবার শুনানি হয়। সে অনুযায়ী ২২ এপ্রিল শুনানি শুরু হলে দ্রুত নিষ্পত্তি হতে পারে। তবে ২৩ থেকে ৩০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে থাকবেন।’

জামায়াতের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক বলেন, ‘জামায়াতের নিবন্ধন মামলাটি এখন শুনানির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ) মঞ্জুর করেছে আপিল বিভাগ। শুনানির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে ২২ এপ্রিল।’

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল হালিম জানান, ‘১৯৭৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতের ৫৫ জন প্রতিনিধি জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।’

তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন না পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। আশা করি, আমরা সাংবিধানিক ও আইনগত পন্থায় ন্যায়বিচার পাব।’

জামায়াতের আইনজীবীরা আরও জানান, দলটির গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। দল গঠন ও রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে দলটি বঞ্চিত হতে পারে না।

তারা বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দ নির্বাচন কমিশনের বিষয়। জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটির প্রতীক দাঁড়িপাল্লা। যদি আপিল বিভাগ আমাদের আপিল গ্রহণ করে, তাহলে প্রতীকের বিষয়টিও পুনর্বহাল হবে বলে আশা করা যায়।’

২০০৯ সালে ২৫ ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করে জামায়াতের নিবন্ধন বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট দলটির নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ জামায়াতের করা আপিল ও লিভ টু আপিল খারিজ করে। পরে ‘দেরি মার্জনা’ চেয়ে পুনরুজ্জীবন আবেদন করলে ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর আপিল বিভাগ তা গ্রহণ করে শুনানির আদেশ দেয়।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। আপিলে ২০১৯ সালে এই রায় বহাল রাখা হয়। এরপর ২০২০ সালে রিভিউ আবেদন করলে শুনানি শেষে ২০২৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ তাকে আপিল করার অনুমতি দেয় এবং ২২ এপ্রিল শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে।