জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যার বিচার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি, ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্রশিবিরসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ দাবি জানান।
তারা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের রাজত্ব কায়েম করে। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও নিরস্ত্র মানুষের ওপর বর্বর গণহত্যা চালায়। জুলাই সংগ্রামে দুই সহস্রাধিক শহীদ এবং অগণিত আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীর রক্তের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।’
এই দুই নেতা বলেন, ‘আমরা গণহত্যার বিচারকার্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদাসীনতা লক্ষ করছি। অপরাধীদের অর্থের বিনিময়ে মুক্তি প্রদান এবং পুনর্বাসনের চেষ্টাও চলছে বিভিন্ন মহল থেকে।’
ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি বলেন, ‘জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে দেশপ্রেমিক আলেম ও রাজনীতিবিদদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ফ্যাসিবাদ সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এটিএম আজহারুল ইসলামকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে ২০১২ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। ভিত্তিহীন ও প্রহসনমূলক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।’
‘এ মামলায় যেখানে একজন সাক্ষী ৭ কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনাদর্শী দাবি করেন, অন্যজন নিজেকে ক্লাসমেট বললেও ডকুমেন্ট অনুযায়ী তিনি ভর্তি হন ভিকটিম কলেজ ছাড়ার দুই বছর পর।’
তারা আরও বলেন, ‘গত ১৬ বছর ছাত্রশিবিরের ওপর ফ্যাসিস্ট সরকার নির্মম নিপীড়ন চালিয়েছে। হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর চালিয়েছে নির্যাতন। ঘরোয়া, গ্রাম, মসজিদ, এমনকি নামাজরত অবস্থায়ও তুলে নিয়ে গুম-হত্যা করা হয়েছে।’
‘আওয়ামী লীগ আমলে ১০১ জনকে শহীদ, সহস্রাধিককে পঙ্গু এবং অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়। বর্তমানেও ৭ জন গুম অবস্থায় রয়েছেন।’
তারা বলেন, ‘এখনো ১১ হাজারের অধিক মিথ্যা মামলা বলবৎ আছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে।’
এ সময় নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ৮ মাস অতিক্রান্ত হলেও আন্দোলনে অগ্রভাগে থাকা অংশীজনদের মিথ্যা মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। এটি জাতির জন্য লজ্জার এবং গাদ্দারির শামিল।’
তারা বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে পল্টন, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পাদনের জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি, এটিএম আজহারের মুক্তি ও ছাত্রশিবিরসহ সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আমরা ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে দাবি আদায় করতে বাধ্য হব।’