ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি

মাইদুর রহমান রুবেল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪, ০১:২৩ এএম

যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে টানা ৪ বার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলেও অবশেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যেতে হয়েছে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে। 

সংসদ ভেঙে দিয়ে দেশ চলছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে। এই সরকারের মেয়াদ কতদিন তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়, তবে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। আওয়ামী লীগ যখন প্রায় অস্তিত্বহীন তখন নির্বাচনী মাঠ প্রায় পুরোটাই দখলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির। ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর আর রাষ্ট্রক্ষমতার স্বাদ পায়নি দলটি। ১/১১ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করলে সেই নির্বাচনে বিরোধীদলের আসনে ছিল বিএনপি।

তবে তারপর সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিলসহ আওয়ামী লীগের কূটকৌশলের কাছে হেরে গিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। ২০১৮ সালে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগের ইলেকশন ইঞ্জিয়ারিংয়ের কাছে হেরে আসন পায় মাত্র ৬টি। দেরি করে হলেও বুঝতে পারে বিএনপি। সেই নির্বাচনে জয়লাভ করলেও শপথ নেনটি মির্জা ফখরুল। অন্যরা সংসদে গেলেও সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিকে অংশ নেওয়ার সুযোগই দেয়নি আওয়ামী লীগ। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের জেলে রেখে নির্বাচন করে দলটি। নির্বাচনের প্রায় ১ মাস পর দেয় তাদের জামিন। এরই মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে ক্ষমতা ফেলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এই বিল্পবে প্রাণ হারায় প্রায় ১ হাজারের মতো মানুষ। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এবার দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি।

এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশের কথা হয় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে বিএনপি, কত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায় এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমদের সঙ্গে কথা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। তার আমন্ত্রণে আমরা যমুনায় গিয়েছিলাম। আমরা তাদের কোনো টাইম ফ্রেম বেঁধে দেইনি। আশা করছি, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিপ্লব-পরবর্তী একটা দেশে কিছু সমস্যা থাকে। সেসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠে নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। সেই সংস্কারের জন্য তাদের সময় দিতে হবে। দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নির্বাচনের দিকে যাবে অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকার।

দল গুছিয়ে বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি দল গোছানোর কিছু নেই। বিএনপি একটি বিশাল দল। আমাদের সারা দেশে নেতাকর্মী আছে। আমাদের সহযোগী ও অঙ্গসংঠন আরও শক্তিশালী করতে পুরোনো কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। যেকোনো সময় নির্বাচন দিলে আমরা অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত আছি। এরই মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করছেন। সেখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য অগ্নি পরীক্ষা হবে বলেও মনে করছেন তিনি। গুঞ্জন রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার লম্বা সময় ধরে থাকবে। 

বিএনপি কি চায় তারা লম্বা সময় থাক নাকি নির্বাচন চায় বিএনপি এমন প্রশ্ন ছিল দিলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের কাছে। 

রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, এই সরকারের দায়িত্ব কেয়ারটেকার গভর্মেন্টের মতোই। আমি মনে করি, দেশের মানুষও মনে করে এই সরকারের জন্য ৯০ দিন কম সময় বিপ্লব পরবর্তী সময়ে, তবে এই সময়টা যদি আমরা ডাবল করে দেই অর্থাৎ ১৮০ দিন, ৬ মাস কিন্তু কম সময় না। আমরা মনে করি, তারা এখন নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচারবিভাগসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানতম কাজ এটি। আশা করি, তারা ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারবে। তার জন্য একটি রোডম্যাপ জাতির সামনে প্রকাশ করবে।

প্রয়োজনীয় যে সংস্কারগুলো আনলে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা যায় আশা করছি সেই কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করবে এই সরকার।

সালাহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ৬ মাসের বেশি সময় নিলে দুষ্কৃতকারীরা আবার সুযোগ নিতে পারে। যাতে আবার বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। রাষ্ট্র মেরামতে বিএনপি আগেই ৩১ দফা প্রকাশ করে রেখেছে। ক্ষমতায় গেলে সেই কাজ নিশ্চয়ই করবে। আর যাতে দেশে কোনো স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের দল আসতে না পারে তার জন্য আমাদের সবাইকেই কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে, প্রতিশ্রুতি দিতে হবে আমরা ক্ষমতায় গেলে এসব বাস্তবায়ন করব। আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে দাবি করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রের  সবকিছু সংস্কার কিংবা বাস্তবায়ন আইনি, জুডিশিয়াল, প্রশাসনিক, শিক্ষা, চিকিৎসাব্যবস্থার পরিবর্তন এক দিনের কাজ নয়। এটা লম্বা সময়ের কাজ, এটা একটা রাজনৈতিক সরকারের কাজ। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়। তারা বড়জোড় এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করতে পারে। তারপর সব মহলের মতামত নিতে হবে এবং গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করতে হবে। লুকোচুরির কিছু নাই। 

এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, কবে নির্বাচন হবে তা ঠিক করবেন ছাত্ররা।

 এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আশা করি, তারা বাস্তবতা বুঝবেন। আমরা আশা করব, যত দ্রুত সম্ভব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদেরও হয়তো কিছু পরিকল্পনা আছে। তাদের সামনে ভিশন ডিজায়ার দিয়ে এসেছি আমরা। ওনারা বসে নেই, কাজ করছে। কবে নির্বাচন হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিষয়টিকে পজেটিভ দেখছেন বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে এই সরকার সব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসবেন সবার মতামত নেবেন, তারপর নির্বাচন। এরই মধ্যে দেশে চলছে ভয়াবহ বিপর্যয়। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে এবারের বন্যা নাজেহাল করে দিয়েছে। আমরা সাধ্যমতো ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের সব মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে এমন ঐক্য আগে দেখেছেন। শেখ হাসিনা মানুষের মাঝে যে বিভেদের দেয়াল তৈরি করে রেখেছিলেন সেই দেয়াল ভেঙে দিয়েছে তরুণরা।

তিনি মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দ্রুতই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। তিনি মনে করেন, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ।

তার পরিণতি ভোগ করছে শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাকর্মীরা। ভোটবিহীন নির্বাচন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পরিণতি ভোট করতেই হয়। দেশে স্বাভাবিক রাজনীতির পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। দেশের মানুষ চায় নিজের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে। আশা করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত মানুষের ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!