ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন ৫ আগস্টের এই ভয়ঙ্কর ট্র্যাজিডির মধ্যে দিয়ে আমরা যা অর্জন করেছি সেটাকে এখন পূর্ণাঙ্গরুপ দিতে হবে। এখনো গণতন্ত্রের সুফল পাইনি। তবে এটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে যে আশাবাদ তৈরি হয়েছে সেই আশা সেই স্বপ্ন নিয়ে আমাদেরকে প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা রাখতে হবে। কোনো মানুষ যদি ভুক্তভোগী হয়; সেই মানুষ যাতে নির্বিগ্নে কথা বলতে পারে বাক-স্বাধীনতা প্রয়োগ করতে পারে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর গুলিস্থান জিরোপয়েন্ট এলাকায় আমরা বিএনপি পরিবার- এর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ। তারেক রহমানের পক্ষ থেকে গুলিস্থানে বেশকয়েকজন পথশিশুর সাথে দেখা করে তাদের চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নেয়ার বার্তা পৌঁছে দেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশের গুলিতে এসব পথশিশুদের অনেকে আহত হয়েছে। সুমন, ইব্রাহিম, হৃদয় ও বৃষ্টিসহ এমন আহত পথশিশুদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমান।
রিজভী বলেন, এই দেশে স্বৈরাচারের দোসরা নানাভাবে নিজেদের খোলস ছেড়ে বের হবার চেষ্টা করছে। অরাজকতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। আমরা বলেছি বারবার- এদেরকে চিহিৃত করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারলে গোটা সমাজে, রাষ্ট্রের ভেতরে এরা ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর নাশকতা তৈরি করবে। তার আলামত আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি। আমরা দেখেছি আনসার বিদ্রোহ, পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের কিছু কর্মচারীরা বিদ্যুৎ ব্ল্যাক আউট। এভাবে একের পর এক দেখে যাচ্ছি। এই যে পরাজিত অগণতান্ত্রিক খুনি সরকারের পেতাত্মারা পানির মধ্যে থেকে মাথা তোলার চেষ্টা করছে; উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা আবারো সেই নিষ্ঠুর হিংসাত্মক স্বৈরাচারকে ফিরিয়ে আনতে চায়।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, যার পতন ঘটাতে ছিন্নমূল পথশিশু থেকে শুরু করে কিশোর তরুণ শ্রমিক ছাত্র জনতা প্রত্যেকে জীবন দিয়েছে। তাই জীবন দেয়া পঙ্গু হওয়া মানুষ এদের সাথে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজকে যে পরিবারের মধ্যে এখনো আতর্নাদ-এখনো ঘুমরে ঘুমরে কান্না আমরা তা শুনতে পাই। যে পরিবারের সন্তান পৃথিবী থেকে চলে গেছে, যে পরিবারের একটি সন্তান হাত হারিয়েছে; পা হারিয়েছে অন্ধ হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ নিয়েছেন তারেক রহমান। আমরা বিএনপি পরিবার নামক একটি সংগঠনের ব্যানারে আতিকুর রহমান রুমনের নেতৃত্বে যতটুকু সম্ভব পাশে এসে দাড়াচ্ছি।
ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, আজকে এখানে থাকা ছিন্নমূল পথশিশু; যাদের কোনো ঠাই নেই গৃহ নেই। এরা কোথায় রাত্রে থাকবে সকালে কোথায় থাকবে; এটার কোনো নিশ্চয়তা নাই। এদের কে খোজে বের করে তাদেরকে সহযায়তা দেয়ার জন্য আমরা বিএনপি পরিবার উপস্থিত হয়েছি। এই কাজ গুলো আমাদের চলতেই থাকবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না সর্বশেষ ভুক্তভোগী পরিবার যে পরিবার এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অকাতরে জীবন দিয়েছে; তাদের সঙ্গে আমরা থাকবো, যতটুকু সম্ভব মনুষত্ত্বের তাগিদ নিয়ে তাদের পাশে আমরা এগিয়ে যাব।
রিজভী বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে যে আন্দোলন; শুধু আন্দোলন বলব না- এটা দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো। এটি মহা বিপ্লব; শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর গণতন্ত্রকামী মানুষকে বিপুলভাবে এটা নাড়া দিয়েছে। আর এই মহা বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা গণতন্ত্রের পথে যাত্রার একটা সুযোগ পেয়েছি। যেটা প্রত্যাশা করছিল মানুষ দীর্ঘ ১৫,১৬ বছর।
তিনি বলেন, এখানে কথা বলা যেত না, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যেত না। সরকার-রাষ্ট্র এবং ব্যক্তি একাকার হয়ে ভয়ঙ্কর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন তারা তৈরি করেছিল। তাদের যে অপরাধ তারা গুম করেছে, খুন করেছে, তারা ক্রসফায়ার দিয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মী হত্যা করেছে। তারপরও এদের বিরুদ্ধে কোথাও কথা বলা যেত না। আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তারা বিভিন্ন জায়গায় আয়না ঘর তৈরি করেছে। সেখানে নিয়ে গেছে বিরোধী দলের ও মতের মানুষদের। তবে এরা যে সবাই রাজনীতি করতেন তাও নয়। অনেকেই সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু যেহেতু তারা বিরোধী দল ও পরিবারের সন্তান এই কারণে অনেক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, আইনজীবী এদেরকে ধরে নিয়ে আয়না ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। এইরকম দু:সহ পরিস্থিতি বেদনাদায়ক পরিস্থিতি থেকে অতিক্রম করে আজকে এই পর্যায়ে আমরা এসেছি। এই অতিক্রম করতে গিয়ে যারা রাজপথে বীরের ভুমিকা পালন করেছেন এবং অকুতোভয় সাহস নিয়েছেন, সাহস নিয়ে যারা এগিয়েছেন গুলি বিদ্ধ হয়েছেন, শাহাদৎ বরণ করেছেন পঙ্গু হয়েছেন, অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। তাদের অধিকাংশই হচ্ছে ছিন্নমূল পথশিশু, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা। এরা অকাতরে নিজের জীবন দিয়েছে। গুলি খেয়ে একফোটা পানির জন্য কাতরাচ্ছে; তখন তার আরেকজন সঙ্গি গিয়ে বলেছে আরোও পানি লাগবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন।এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ডাঃ জাহিদুল কবির,স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার,যুবদলের ডাঃ তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :