গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, জুলাই আগস্টের গণহত্যায় প্রায় ২ হাজার শহীদের এবং ৩০ হাজার আহত ছাত্র-শ্রমজীবী জনতার এক বিশাল আত্মত্যাগের উপর দাঁড়িয়ে, আর কোনো ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা এদেশে চলবে না। ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর করতে হবে।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাজশাহী সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে গণসংহতি আন্দোলন রাজশাহী জেলা শাখার আয়োজনে গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। গণসংলাপে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ শীর্ষক গণসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
গণসংহতি আন্দোলন রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে জননেতা সাকি বলেন, ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা জিইয়ে রেখে জনগণের কাঙ্খিত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে যেতে হবে। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙ্গে সংবিধানকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। ৭২ এর সংবিধান একটা ফ্যাসিস্ট সংবিধান, এই সংবিধান দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। এ সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব না। ৭২ এর সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। নতুন সংবিধান ধর্মীয়, জাতিগত স্বার্থের উর্ধ্বে গিয়ে সকল নাগরিকের অধিকার সংরক্ষণ করবে। চাকমা- মারমা সবার জন্য সমতা, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ এবং জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই সংবিধানকে রুপান্তর করতে হবে। ৭০ নং অনুচ্ছেদ বাতিল, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, বিচার বিভাগ থেকে নির্বাহী বিভাগকে আলাদা করতে হবে। গণমাধ্যমসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন করতে হবে। ভোটের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, শেখ হাসিনা সরকার লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। তার আমলে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে ভয় আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো। একদিকে ত্রাসের রাজত্ব অন্যদিকে জনগণের একটি অংশকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা দিয়ে দিয়ে শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিলো। জনগণের সমস্ত অধিকার ও মর্যাদা কেড়ে নিয়েছিলো। আইনের শাসনকে পদদলিত করে এই রাষ্ট্রে হাসিনা হয়ে উঠেছিলো সর্বেসর্বা। সে আন্দোলনরত হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ‘রাজাকার’ উপাধি দিয়ে ভেবেছে পার পেয়ে যাবে, কিন্তু শিক্ষার্থীরা শ্লোগানে বলে দেয় তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের তরুণরা তাদের মর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করে দেখিয়ে দিয়েছে, এই রাষ্ট্র
আমরা চাই না। এই স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা আমরা চাইনা। শিক্ষার্থীরা তাদের আত্মমর্যাদার প্রশ্নে সর্বাত্মক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হাসিনাকে বিদায় করেছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ২৪ এর অভ্যূত্থানে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যারা এর সাথে যুক্ত ছিলো সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন যেসব আমলারা এখনো এই ফ্যাসিস্ট সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দিচ্ছেন আমাদের তরুণরা তাদের ছুড়ে ফেলে দিবে। ফলে সাবধান হয়ে যান। তরুণদের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না। গণসংহতি আন্দোলনরাজশাহী জেলা।
অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায়ের জন্য ২৪ অভ্যুত্থানে যেভাবে সকল জনগণ দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছে, ঠিক একইভাবে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ ঘটানোর জন্য সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষকে দল-মত নির্বিশেষে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণ যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আকাঙ্খা নিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে আজ সময় এসেছে সেই `আকাঙ্খার পূর্ণ বাস্তবায়নের। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রের সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা রাজশাহীবাসীর কাছে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যুক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানাই।
আপনার মতামত লিখুন :