ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদন

জ্বালানী তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৪, ০৬:০১ পিএম

জ্বালানী তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

জ্বালানী তেলের দাম প্রতি লিটারে অন্তত ১৫ টাকা কমানো সম্ভব। অন্যদিকে, ভোক্তার স্বার্থকে আমলে না নিয়ে জ্বালানী খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করেছে সাবেক সরকার। একদিকে ভ্যাট-ট্যাক্স নিচ্ছে, অন্যদিকে মুনাফাও করছে। সরকার সব সময় জ্বালানী খাতকে আয়ত্বে রাখতে চায়। তবে বাজারভিত্তিক মূল্যনির্ধারণ করা হলে জ্বালানি তেলের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কমানো সম্ভব বলে জানিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দ্বৈত্য চরিত্রে থাকা অগ্রহণযোগ্য। বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) প্রাইস মেকার হিসেবে থাকলেও কখনো তথ্য প্রকাশ করে না বলে ডায়ালগে অভিযোগ তোলেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। তারা শুধু সরকারি নিয়ন্ত্রণে থেকে ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে মুনাফা করছে।

রাজধানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার সকালে এসব কথা বলেন তারা। ডায়ালগে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ফয়সাল কাইয়ুম।

উপস্থিত ছিলেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম, বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

‘বাজারভিত্তিক জ্বালানির মূল্য: সরকারের নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ এবং সম্ভাব্য সংশোধন’ শীর্ষক ডায়ালগে বক্তারা বলেন, বিপিসির একটি হাত এনার্জি কিনছে এবং অন্যহাত ট্যাক্স দিচ্ছে। মধ্যখানে বিশাল শুভঙ্কারের ফাঁকি।

অভিযোগ আমলে নিয়ে ‘মার্কেট বেজ প্রাইসে যাচ্ছে সরকার’ জানিয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, জানলে অবাক হবেন- দেশে মাত্র একটি রিফাইনারী রয়েছে, যার লাইফ মাত্র ২৮ বছর। তাও ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার তৈরি করেছে, তা দিয়েই চলছে বাংলাদেশ। আমরা জ্বালানীর রিজার্ভ করতে পারি মাত্র ৪৫ দিনের।

করোনাকালে অর্থ ছিল কিন্তু রিজার্ভ সংকট। অর্থ থাকলেও অতিরিক্তি রিজার্ভ করতে পারি না; যা ভারত পারে। তবে দাম কমলে পাশের দেশে পাচারের আশঙ্কা থাকে এবং এখনো ভারতের চেয়ে কম দামে আমরা জ্বালানী বিক্রি করছি।

পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সীমাবন্ধতা অনেক জানিয়ে তিনি বলেন, সংবেদনশীল হওয়ায় সরকার জ্বালানী খাত আয়ত্বে রাখতে চায়। বিপিসি মুনাফা করে এবং উন্নয়নেই ব্যয় করে। তবে সরকার এখানে কোন সাবসিডিয়ারি দেয় না। গত বছরের বিপিসি সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে। চলতি বছরেও ৩ হাজার কোটি টাকার মতো হতে পারে বলেন চেয়ারম্যান।

এখানকার আয় দিয়েই বিপিসিকে চালিয়ে নিতে হয়। প্রডাক্ট কস্টসহ বিভিন্ন খরচ কমিয়ে কম দাম কমায়ে আনতে পারি। আগামী জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আরো কম দামে জ্বালানী দেয়া সম্ভব বলেন বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান।

এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বিপিসিকে সরকার চার হাজার কোটি টাকা অনুদান দেয়নি, দিয়েছে ঋণ। তবে বিবিসি এনার্জি ক্রয়ের চিত্র প্রকাশ করবে ভোক্তাকে। কারণ মুনাফার বদলে লোকসানে পড়লে ভোক্তাকেই সেই দায় পরিশোধ করতে হবে। 
  
সিপিডির গবেষক ও পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সব খাতে সংস্কার চলছে। জ্বালানি খাতেও এর হাওয়া লাগছে। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনা করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার সুযোগ রয়েছে। বিপিসির ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ে না, কারণ তারা বড় মুনাফা করে। এই মুনাফা সমন্বয় করলে ভোক্তাস্বার্থ প্রাধান্য পাবে, এছাড়া ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিদ্যুতে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব, কর্তৃত্ব বা মূল্য নির্ধারণ মডেল তৈরি করার আইনি কাঠামো দেওয়ার প্রস্তাব দেয় সিপিডি। অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, এনার্জি প্যাকের সিইও হুমায়ুন রশীদ, বিপিএমআই এর রেক্টর মো. আলাউদ্দিন, ইমা পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকী প্রমুখ।

আরবি/এস

Link copied!