ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টার সংস্কার দ্রুত শেষ হবে আশা বিএনপির

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম

প্রধান উপদেষ্টার সংস্কার দ্রুত শেষ হবে আশা বিএনপির

ছবি, সংগৃহীত

ঢাকা: নির্বাচনের মহাসড়কে উঠতে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সংস্কার কাজগুলো দ্রুত শেষ হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের ঘোষিত সংস্কার রুপরেখার বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘গতকাল প্রধান উপদেষ্টা তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছেন এবং তিনি কিছু সংস্কারের কথা বলেছেন সেখানে সংস্কারে যারা দায়িত্বে তাদের নামও উল্লেখ করেছেন। তিনি মোটামুটিভাবে তার যে একটা ভিশন এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের, সেটা তিনি মোটা দাগে তুলে ধরেছেন।’

‘আমি মনে করি যে, সংস্কারের কথা আমরা সবাই বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন, গণতান্ত্রিক অধিকার একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছিলো। সেক্ষেত্রে অতিদ্রুত যেন এই সংস্কারের কাজগুলো শেষ করা হয়। মূল যে বিষয়টা রয়েছে গণতন্ত্রের জন্যে, জনগনের প্রতিনিধিদের শাসন, জনগনের পরিচালনায় তাদের নির্বাচিত পার্লামেন্ট দিয়ে দেশ চলবে সেই বিষয়টা যেন অবশ্যই খুব দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত হয় সেটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।”

তিনি বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করি। আমরা মনে করি যে, অন্তবর্তীকালীন সরকার কাজ করছেন।এই কাজ করার জন্য তাদেরকে সময় সুযোগ সবই তাদেরকে দেয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
‘আমরা আশা করি তারা যথা শিগগিরই সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে এই কাজ(সংস্কার) গুলো শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবেন।

ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব, তারা জনগনের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটাবে। একটি কথা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নাই। গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যা জনগনের আশা-আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে পারে।সেজন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে তৈরি করা হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু সেই কাজটাতে জনগনের সম্পৃক্ততা থাকতে হবে… জনগন কি চায়, জনগন কিভাবে জিনিসটা দেখতে চায় সেই বিষয়টা থাকতে হবে।

‘‘আমরা আশা করব, বর্তমান যে অন্তর্বতীকালীন সরকার আছে তারা সেটা উপলব্ধি করবেন, যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া আছে তারা দায়িত্ব অত্যন্ত সুচারুরুপে পালন করার চেষ্টা করবেন এবং জনগন যাতে উপকৃত হয় সেই প্র্রত্যাশাই আমাদের থাকবে।

আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস পালনে বিএনপির ঘোষিত দুইদিনের কর্মসূচির প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে সমন্বয় সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন।এই সভায় বিএনপি মহাসচিব প্রধান অতিথি ছিলেন। বৈঠকের পর সংবাদ ব্রিফিঙে আসেন মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। এজন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার জন্যে এই দিবসটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আমরা পালন করতে চাই। দুই দিনের কর্মসূচি আমরা নি্য়েছি। ১৪ সেপ্টেম্ব ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকাল সাড়ে তিনটায় সমাবেশ হবে.. এই সমাবেশটি হবে ১৪/১৫ বছরে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদেরকে নিয়ে এই সমাবেশটি হবে। এই সমাবেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, আবৃত্তি, কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান থাকবে।

‘১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। এই সমাবেশটি হবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেবার সমাবেশ। অর্থাৎ আমরা যে একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের মধ্যে আছি,এখন গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমরা এই সমাবেশটি গুরুত্বের সাথে করতে চাই।”
১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের মহানগরে র‌্যালী অনুষ্ঠিত হবে।

‘প্রশাসনে অস্থিরতা: ধর্য্য ধরতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই রকম বিপ্লবের পরে এই ধরনের সমস্যা থাকতেই পারে। এটা তো সম্পূর্ণ নতুন গভমেন্ট। প্রশাসনে এতোদিন ধরে আওয়ামী লীগ যেটা করেছে সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ করতে গিয়ে সব জায়গায় বেশিরভাগ লোকই তাদের মতালম্বী লোকদের প্রমোশন দিয়েছে, পদায়ন করেছে, তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়েছে।

‘ফলে এটা একটু সময় লাগবেই। পুরোপুরিভাবে নতুন করে তো এই মুহুর্তে রিক্রুট করে এতো অফিসার নিয়োগ করা সম্ভব না। যা আছে তাদেরকে দিয়ে করতে হবে। সেজন্য আমাদেরকে একটু ধর্য্য ধরতে হবে। আমার বিশ্বাস যে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু সুষ্ঠু হয়ে যাবে।

‘পরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত পরিকল্পিভাবে ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান এটাকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্যে একটা চক্র কাজ করছে। কারা কাজ করছে সেটা আপনারা জানেন। পতিত ফ্যাসিবাদ হাসিনা ভারতবর্ষে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখান থেকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এই বাংলাদেশ সম্পর্কে, বাংলাদেশের মানুষের সম্পর্কে… এই অপপ্রচার কখনো গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ এটাকে অবশ্যই প্রতিবাদ করছে, এই ধরণের অপপ্রচারে তারা কান দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

‘একই সঙ্গে শিল্পক্ষেত্রে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।আপনাদের মাধ্যমে আমি অনুরোধ জানাব, যারা দেশপ্রেমিক মানুষ আছেন তারা সকলে একযোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ধরণের প্রবণতাকে নস্যাৎ করে দেবেন. প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন যেন কোনো ব্যক্তি কোনো ভাবেই বাংলাদেশের অর্জিত যে সাফল্য সেটাকে বিনষ্ট করতে না পারে। আমরা সকলকে অনুরোধ করব, এই শিল্প-কল-কারখানাগুলো চালু রাখার ক্ষেত্রে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যে যেখানে আছি আমরা যেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারি।

তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থান যখন হয়, একটা বিপ্লব যখন হয়, কুসমাস্তীর্ণ নয়। এই অরসগুলো, সমস্যাগুলো যেগুলো আছে সেগুলোকে পেরিয়ে কাজ করতে হয়।

‘একটু ধর্য্য তো আমাদেরকে ধরতেই হবে এবং মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। আমি মনে করি এখন আমাদের কাজ হচ্ছে ঐক্যকে অটুট রাখা, নিজেরা ধর্য্যশীল হওয়া। একেবারেই এই ধরনের কর্মকান্ড যাতে কেউ করতে না পারে তার জন্য প্রতিরোধ সৃষ্টি করা।

সংবাদ ব্রিফিঙে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের ‍উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, সাইয়্যদুল আলম বাবলু, শওকত হোসেন সরকার, ঢাকা জেলার খন্দকার আবু আশফাক, মানিকগঞ্জের আফরোজা খান রীতা, এম এ জিন্নাহ, গাজীপুরের ফজলুল হক মিলন, রিয়াজুল হান্নান, নরসিংদীর খায়রুল কবির খোকন, মুন্সিগঞ্জের কামরুজ্জামান রতন প্র্রমূখ ছিলেন।

এছাড়া ঢাকা মহানগরের আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুব দলের এম মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মতস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন প্রমূথ নেতারা ছিলেন।

 

আরবি/এস

Link copied!