ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

জনগণের স্বার্থ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার: জোনায়েদ সাকি

এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৪, ০৯:০৭ পিএম

জনগণের স্বার্থ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার: জোনায়েদ সাকি

ছবি, রূপালী বাংলাদেশ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা অনুযায়ী ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ দায়িত্ব পাওয়া সরকার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের পদক্ষেপ জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে জনগণের মাঝে হতাশাও আছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে বলে জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। রূপালী বাংলাদেশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিনিধি এফ এ শাহেদ।

রূপালী বাংলাদেশ: আপনাকে শুভেচ্ছা, কেমন আছেন?
জোনায়েদ সাকি: আপনাকেও শুভেচ্ছা, ভালো আছি।

রূপালী বাংলাদেশ: ড. ইউনূস সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। কতটুকু অর্জন, একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে তার সফলতা কতটুকু দেখছেন? 


জোনায়েদ সাকি: ছাত্র-জনতার এক অভাবনীয় রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে। গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। যেহেতু এটি রাজনৈতিক সরকার নয়, সরাসরি সকলস্তরের শ্রেণী-পেশাসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে গঠিত সরকার। ফলে তাদের কাছে প্রত্যাশার জায়গাটাও সবার একটু বেশি । তবে, বলতে চাই অন্তর্বর্তী সরকার তার ১০০ দিনে আগের আর্থিক যে লন্ডভন্ড অবস্থা ছিলো, সেটা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতি অনেকটা সবল অবস্থানে চলে এসেছে। রিজার্ভ পরিস্থিতি উন্নতির পথে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে বলতে চাই এখানো অনেকগুলো সমস্যা রয়ে গেছে। মানুষ অনেকগুলো ব্যাংকে গিয়ে পর্যাপ্ত টাকা তুলতে পারছে না। যারফলে আর্থিক অবস্থার উপর আস্থা জন্মালেও, বাস্তবে যখন এই অবস্থা দেখতে পাচ্ছে তখন মানুষ ভাবছে তারা তো ভুক্তভোগী তারা তো সমস্যার সমাধান পাচ্ছে না। এই জাইগাটা সরকারকেই পরিষ্কার করতে হবে সমস্যা কোথাই হচ্ছে। তথ্য পরিষ্কারভাবে জনগণকে দিতে হবে। এই সমস্যাগুলো সরকার এখনো সমাধান করতে পারেনি সেটা কবে নাগাদ হতে পারে কিভাবে হতে পারে তার পরিষ্কার রোডম্যাপ দেওয়া প্রয়োজন। জনগণের আস্তার জন্য সমাধানে তাদের পদক্ষেপগুলো প্রতিনিয়ত জানানো উচিত যাতে আস্তা থাকে তাদের উপর।

রূপালী বাংলাদেশ: জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কি করছে?

জোনায়েদ সাকি: জনগণের জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ পুরোপুরি নেওয়া এখনো সম্ভব হয়নি। ফলে, মানুষের ভিতর এখনো নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা কাটেনি। এক্ষত্রে প্রতিষ্ঠান সংস্কারের অগ্রাধিকার এই সরকারের ভিতর ছিল। তার কিছুটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। যে গতিতে সংস্কার হওয়ার কথা ছিল সেই গতিটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বহু জাইগায় পুরোনো দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। কিছু - কিছু জাইগায় পরিবর্তন এসেছে তবে পরিবর্তনগুলো কার্যকর করা যাচ্ছেনা তাদের কারণে। যে গতিতে কাজ করার কথা ছিল সেই গতিতে কাজটা হচ্ছে না। 

মনে রাখা দরকার এটা কিন্তু কোন প্রথাগত সরকার না। জুলাই-অগাস্ট ‘গণবিপ্লবে’ জনগণের অভিপ্রায়ে, তার সমর্থনে, তার স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্য এই সরকার। ফলে তাদের যে শক্তি তার যে প্রতিফলন আমার দেখতে চায় সেটা হচ্ছে না। মনে হচ্ছে একই লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।  এটা মানুষ গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে, পুরোনো দোসরা যাদি এই অবস্থার সৃষ্টি করে থাকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষের সমর্থই তাদের দরকার। তাহলে তাদের শক্তি যেমন বৃদ্ধি পাবে একইসাথে বুঝতে পারবে শক্ত একটি ভিত্তির উপর তারা দাড়িয়ে আছে।

রূপালী বাংলাদেশ: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে পারছে না সরকার। এ ব্যাপারে অপনি কি বলবেন?

জোনায়েদ সাকি: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটা হলো পুরোনো ফ্যাসিস্ট সরকারের লুটপাট, ব্যবস্থপনা, বাজার ব্যবস্থা সিন্ডিকেট একটা দায় আছে। সেটার ধারাবাহিকতায় একটা পুঞ্জীভূত সমস্যার মধ্যে আছি। কিন্তু, মানুষ দেখতে চাইছে এই সরকার তো সিন্ডিকেট ভেঙে ফেলবে, দ্রুত কেন ভাঙছে না?  

তবে কিছু পণ্যে যে ডিমান্ড এন্ড সাপলাই ভিত্তিক। যেখানে কাজ করে কয়েকটি নিদিষ্ট কম্পানি, যখন হাতে গোনা কয়েকটি কম্পানির মধ্যে কেউ কেউ আবার অভিযুক্ত হয়ে যাচ্ছে সেখানে আমাদানি ব্যহত হচ্ছে ফলে মূল্যে কিন্তু চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এই সংকট কিভাবে মোকাবেলা করা হবে। তার জন্য আরো পূর্ব পরিকল্পনা, রাজনৈতিক দলসহ স্টেক হোল্ডারগুলোর সাথে আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সরাসরি তার ফলাফল যেটি জনগণ দেখতে চাচ্ছে সেই আলোচনা হচ্ছে। তবে দ্রুত তার ফলাফল দেখতে পাচ্ছে না । এটা দুর করা প্রয়োজন এবং তাদের পরিষ্কার রোড ম্যাপ প্রদান করা প্রয়োজন। অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই রোড ম্যাপ প্রয়োজন।

রূপালী বাংলাদেশ: অভ্যুত্থানে শহীদ এবং আহতদের জন্য কি করছে সরকার?

জোনায়েদ সাকি: অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ছিল গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা করা,পরিবারকে পুনর্বাসন করা। আহত শিক্ষার্থী শ্রমিক জনতার চিকিৎসার সুব্যবস্থা করাসহ সম্পূর্ণ ব্যয় সরকারকে বহন করা।
তবে সেখানে ঘাটতি রয়েছে তা না হলে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল) এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা সড়কে অবস্থান করলো কেন? এখানে সরকার কি বলবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ? কি পদক্ষেপ নিচ্ছে তার প্রয়োগ হতে হবে।  আমি হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছি আপনি আমাকে কি সুনাতে চাচ্ছেন কিসের জটিলতা? এমন সময়ক্ষেপন হলে তাদের ভিতর চরম ক্ষোভের বিষয় সৃষ্টি করেছে।

রূপালী বাংলাদেশ: অন্তর্বর্তী সরকারের সময় কি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হচ্ছে কি?


জোনায়েদ সাকি: বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গায়েবি মামলা হতো। আর এখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনও মামলা না হলেও সাধারণ লোকজন, ভুক্তভোগীর লোকজন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তারা অন্যদের ব্যাপারে ঢালাও মামলা দিচ্ছে। ঢালাও মামলার একটা খুব মারাত্মক প্রকোপ দেশে দেখা দিয়েছে, এটি আমাদের অত্যন্ত বিব্রতকর। আইনি পদক্ষেপ ও সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এটাতে আরো সচেতন হওয়া উচিত সরকারকে যেন যারা আমার সন্তানকে খুন করেছে তারা রাজনৈতিক মামলা বলে পার পেতে না পারে। একটা স্বচ্ছ বিচার, গ্রহণযোগ্য একটা বিচার ব্যবস্থা এই দেশে তৈরি করতে হবে। যাতে কোনভাবেই প্রকৃত অভিযুক্তরা রাজনৈতিক লেবেল দিতে না পারে। যদিও তারা চেষ্টা করবে, তবে যেন সেটা গ্রহণযোগ্য না হয়।
এই দৈনন্দিন কাজের কাজের যে বিষয়গুলো সরকার করছে যা আমার বলেছি, সেগুলোর অনেক অর্জনও দেখছি আবার অনেক ঘাটতিও দেখছি। বিশেষ করে সরকারকে বুঝতে হবে মানুষ অনুভব করছে কিনা সরকার পরিবর্তন করছে। তবেই সরকারের স্বার্থকতা। 
আপনারা অনেক অর্জন করেছেন, কাজ করেছেন এই ব্যপারে কোন সন্দেহ নেয়। আমাদের আস্থা আছে, সরকারের প্রতি আমাদের সর্মাথন আছে। কিন্তু, আপনাদের কাজের সামষ্টিক ফলাফল জনগণ কি ভাবে দেখছে এটা ভালোভাবে বিবেচনা করা দরকার।


রূপালী বাংলাদেশ: আগামী নির্বাচন কেমন হবে?
জোনায়েদ সাকি: এমন একটি নির্বাচন পাবো, যে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় হবে। যার ভিত্তি হবে গণতান্ত্রিক সংবিধান। যেখানে ক্ষমতার জবাবদিহিতা ও ভারসাম্য থাকবে। এই জাইগাটা সাংবিধানিকভাবে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমাদের তৈরি করতে হবে। সরকার যেন জনগণের কাছে জবাবদিহী করে এটা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের নিতী যেন জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে যায়। সেখানে সরকার অনেকগুলো কমিশন গঠন করেছে, আমরা আশাবাদি। 


রূপালী বাংলাদেশ: আপনাকে ধন্যবাদ।
জোনায়েদ সাকি: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরবি/এস

Link copied!