ঢাকা: স্বৈরাচারের প্রেতাত্মাদের প্রভাবে দেশে রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, প্রশাসনে থাকা স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এখনো ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে, তাই দেশে চলছে রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল। স্বৈরাচারের সন্ত্রাসী শাসন শেষ হলেও সেই শাসনের অবশিষ্ট দোসররা এখনো রাজনীতির ক্রান্তিকালে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
বর্তমান সরকারের সংস্কার বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, শুধু বইয়ের কতগুলো লাইন পরিবর্তন করলেই সংস্কার হবে না। জনগণের ভাগ্যের ভালো পরিবর্তন হলেই তবে তা সংস্কার হবে।
বিএনপিই প্রথম সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। আজ অনেক ব্যক্তি সংস্কারের কথা বলছেন, তবে সবার আগে সংস্কারের প্রস্তাব বিএনপিই দিয়েছিল।
ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কারের রূপরেখা বাস্তবায়নে বিএনপি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গতকাল বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, তরিকুল ইসলামকে হারিয়েছি বলেই হয়তো আজ আরও ভালো পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। দেশ ও রাজনীতিতে তার অবদান অনস্বীকার্য।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, রাজনীতি কোনো ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, জনগণের অধিকার ও মুক্তির জন্য। আমরা ৩১ দফা প্রস্তাবের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছি। দেশে বিভাজন সৃষ্টি করে যারা আমাদের ঐক্য নষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।
আমাদের লক্ষ্য সেই অধিকার পুনরুদ্ধার করা, যা এই সরকার মানুষের কাছ থেকে ছিনতাই করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংবিধানের কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করলেই কি সংস্কার হয়ে যাবে ? রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মনে করি যে পরিবর্তনের ফলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, সেটিই সংস্কার।
শুধু সংবিধানের কয়েকটি লাইন পরিবর্তন করলেই সংস্কার হবে না। কি কি সংস্কার করা উচিত বিএনপি ৩১ দফার আলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। অনেকেই সংস্কারের কথা বলছেন। প্রত্যেকের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব প্রথম দিয়েছে বিএনপি।
এক বাক্যে সংস্কার বলতে সেটাই বুঝি, যে সংস্কার করলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। যে সংস্কার করলে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। যে সংস্কার করলে নারীদের স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিত হবে। যে সংস্কার করলে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যে সংস্কার করলে দেশের সন্তানেরা শিক্ষা পাবে। যে সংস্কার করলে কিঞ্চিত হলেও দেশের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে। আমি সেই বিষয়গুলোকেই সংস্কার বলছি।
বিএনপি ও দেশের জন্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের অবদান স্মরণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, তরিকুল ইসলাম যতদিন বেঁচে ছিলেন মানুষের অধিকার নিশ্চিতের লড়াই করে গেছেন। এদেশের মানুষের শিক্ষা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে করেছেন তিনি। দেশের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিএনপি অন্যমাত্রায় তরিকুল ইসলামকে স্মরণ করে। বিশেষ করে ২০১৩-২০২৪ সালের আন্দোলনে তরিকুল ইসলামের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শান্তিময় ঐতিহাসিক যশোরের সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন তরিকুল ইসলাম।
যার প্রমাণ আজকের মাঠের উপস্থিতি। তৃণমূলের সঙ্গে তার ছিল নিবিড় সম্পর্ক। তিনি কখনো তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেননি। তার শূণ্যতা আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি।
তারেক রহমান আরও বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ডামি ভোট, ভোটারবিহীন ভোট কিংবা ডাকাতির মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচারি সরকার দেশের মানুষের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ২০১৪ সালের আন্দোলনে দেখেছি তরিকুল ইসলাম কিভাবে অবদান রেখেছিলেন। গণতন্ত্রের পক্ষে মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন।
দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সাক্ষী রয়েছেন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে গেছেন।
স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু । মরহুম তরিকুল ইসলামের বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরে বক্তৃতা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম, ডাক্তার হারুন অর রশীদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, অধ্যাপক আয়ুব হোসেন, সঞ্জয় সাহা, এজেডএম সালেক, মোশারফ হোসেন, মাওলানা বেলায়েত হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর প্রমুখ।
স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন মরহুম তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যাপক নার্গিস বেগম, দুই সন্তান শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য টি এস আইয়ুব, বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান, গোলাম রেজা দুলু, সাবেক পৌর মেয়র মারুফুল ইসলাম মারুফ, একেএম শরফুদ্দৌলাহ ছটলু, মাহাতাব নাসির পলাশ, মাওলানা আব্দুল মান্নান, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, অ্যাড. জাফর সাদিক, মানবাধিকার সংগঠন রাইটস যশোরে নির্বাহী পরিচালক বিনয়কৃষ্ণ মল্লিক, যুবদলের সভাপতি এম তমাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল প্রমুখ।
এদিকে, স্মরণসভায় ঘিরে যশোর শহরে বিএনপি নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ঢল নামে। বরেণ্য রাজনীতিক তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। শহরের টাউন হল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় দুপুরের মধ্যেই।
আপনার মতামত লিখুন :