ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শামীমুর রহমানের প্রভাব বিস্তার; সমালোচনার ঝড়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে শামীমুর রহমানের প্রভাব বিস্তার; সমালোচনার ঝড়

ছবি রুপালী বাংলাদেশ

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে প্রায় দেড় যুগের স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার ইতি ঘটেছে। তৎকালীণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে কোন রাজনৈতিক দলই সক্রিয়ভাবে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। তবে, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির সরব উপস্থিতি দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে দখলদারিত্বসহ নানান অপকর্মের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

অভিযোগ ওঠেছে, বিএনপি নেতা কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক নয়টার পর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) এর সভাপতির লবিতে বসে শতাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে লাউড স্পিকারে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরীকে ফোন করে হুমকি দেন। তিনি বলেন, আমার মতামত ছাড়া (ডিএই) খামারবাড়িতে কোন বদলি যেন না হয়। এসময় কৃষিবিদ শামীম লাউড স্পিকারে কথা বলছিলেন, তার পাশে তখন উপস্থিত ছিলেন বিসিএস ৩৮ ব্যাচের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাইনুদ্দীন স্বাদ। এক ভিডিওতে দেখা যায় পরবর্তীতে তিনি ঘটনার বর্ণনা করছেন।

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন দখল করে চাঁদা নেয়া ও বদলী অন্যান্য সুবিধা নিয়ে টাকা উপার্জনের অভিযোগ উঠে এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর আহবায়ক রাশিদুল হাসান হারুন ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের বিরুদ্ধে, অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া অভিযোগ আছে, শামীম ঢাকা শহরে সকল রাজনী তিবিদদের অতিক্রম করেই কৃষিবিদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কৃষিবিদ বলেন, নিজেদের পদ রক্ষা করার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলন করেন হারুন ও শামীম। তবে তাদের প্রকৃত চরিত্র ইতিমধ্যেই সকল স্তরের কৃষিবিদদের নজরে এসেছে। এতে জাতীয়তাবাদী আদর্শের সংগঠন এ্যাবের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে বলে দাবী করেছেন।

সাধারণ কৃষিবিদরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে একটি গ্রুপের কাছে জিম্মি ছিল কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন। যে কারণে সাধারণ কৃষিবিদরা ‘কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে‘ আসতে ভয় পেতো। আমরা আশা করেছিলাম, আওয়ামী লীগ পতনের পর এই দখলবাজদের হাত থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু তা আর হলো না।

তারা জানান, আওয়ামী লীগ পতনের পর দখলবাজরা পালিয়ে গেলেও নতুন আরো একটি গ্রুপ তৈরি হয়েছে। যারা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনটিকে নিজের বাসা বাড়ি বানিয়েছেন। দখলে নিয়েছেন বিভিন্ন কক্ষ। চাঁদা তুলছেন নিয়মিত।

এ সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেত ও কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। একটি কুচক্রী মহল নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে আমার ও আমার দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আমি বিষয়টি ক্লিয়ার করতে সংবাদ সম্মেলন করে সকল বিষয় ক্লিয়ার করেছি। আমি কোনো বদলী, বা বানিজ্যের সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেন। আমি আওয়ামী লীগের শাসন আমলে মামলা-হামলা-হয়রানি  সহ জেল হাজত খেটেছি। বর্তমানে আবার আমাকে বির্তকিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

শামীমুর রহমান শামীম অভিযোগ করেন-

‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল। এটি বগুড়ায় করা হয়েছিল। ড আব্দুর রাজ্জাক ও বাহাউদ্দীন নাসিম এই প্রজেক্টের মুল হোতা ছিলেন, তারা লুটপুটে খেয়েছে গত আঠারো বছর। সারা দেশে এক লক্ষ্যের বেশি রেজিস্ট্রেশন কৃষিবিদ রয়েছে। বিগত বছর গুলোতে বিএনপি পন্থি কৃষিবিদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হয়রানি এবং পদউন্নতি থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়।

এ বিষয়ে কৃষিবিদ শামীম বলেন..

আমি ২০০৮ সালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবর্তনের পর তদের ভুমিকা কি হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানেও কেউ যায়নি কোথাও তালা পড়েনি। ভাঙচুর হয়নি, একটা লোকের মাথায়ও বাড়ি পড়েনি। সবখানে শান্তিপূর্ণভাবে কাজ চলছে। আমার ভিডিও গুলো দেখেন সেখানে হাজার হাজার কৃষিবিদ দিয়ে আমি বক্তব্য দিয়েছি।

বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান আশিক জানান, শামীমুর রহমান শামীম ও রাশিদুল হাসান হারুন বিএনপির একাংশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট দখল করেছে চাঁদাবাজির এবং উল্টাপাল্টা কার্যকলাপ পরিচালনা করছে। আমাদের যে আন্দোলন ছিল সাধারণ জনতার জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য, সাধারণ কৃষিবিদদের জন্য, সেই জায়গা থেকে আমরা কৃষিবিদ ও শিক্ষকদের নিয়ে দখলদারদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব।

এদিকে, একটি অনুসন্ধানে অভিযোগ পাওয়া যায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইকবাল ক্যাটারিং এর  কর্মকর্তা সবুজের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে কাজ করার নিশ্চয়তা দেয় শামীম।

কৃষিবিদ শামীমকে ২০১৬ সালে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে সহদপ্তর সম্পাদক থেকে সহ-প্রচার সম্পাদক করা হয়। পরে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সাথে তাল মিলিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন শামীম।

আরবি/এস

Link copied!