ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

আত্মনিবেদিত নেতৃত্বে তারেক রহমান

নজরুল ইসলাম দয়া, বগুড়া

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৫:৫৮ পিএম

আত্মনিবেদিত নেতৃত্বে  তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দলীয় নেতাকর্মীরা ‘দেশনায়ক বা রাষ্ট্রনায়ক’ বলে সম্বোধন করতেন। সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি ঘিরে দেশজুড়ে সাঁটানো হতো ফেস্টুন ও পোস্টার। মাইকের বিকট আওয়াজে নেতার নামের আগে ‘দেশনায়ক’ এবং বক্তব্যের শুরুতে ‘রাষ্ট্রনায়ক’ উল্লেখ করা হতো। সেই অভিধায় সম্বোধন এখন পুরোদমে বন্ধ। চলবে না কোনো ফ্লাটারি বা চাটুকারিতা। নেতা বন্দনার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, দয়া করে আমার নামের সঙ্গে কেউ দেশনায়ক বা রাষ্ট্রনায়ক জাতীয় শব্দ ব্যবহার করবেন না। এই নির্দেশনা রাজনৈতিক চর্চায় আত্মনিবেদিত হওয়ার একটি থ্রেট হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে, তার রূপরেখা দিয়েছেন তারেক রহমান। বিএনপির শেকড় বগুড়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে দলটির সমর্থক, নেতাকর্মী, জনসাধারণ ও বিরোধী পক্ষের লোকজনও ভূয়সী প্রসংশা করছেন। গেল ২০ নভেম্বর ছিল তারেক রহমানের ৬০তম জন্মদিন। অনেকটা নীরবে-নিভৃতে ছিলেন সর্বস্তরের নেতাকর্মী। আগে নেতার বিশেষ দিনকে স্মরনীয় রাখতে কেক কাটার প্রতিযোগিতা দেখা যেতো। প্রত্যেক বছর বর্ণাঢ্য আয়োজন পালন হলেও এবারের দিনটি ছিল ব্যতিক্রম। জন্মদিনে পালন হয়নি কর্মসূচি, সাঁটানো হয়নি পোস্টার-ফেস্টুন। তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনায় এই কর্মসূচি বর্জন হয়। নির্দেশনার ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল।

বগুড়া জেলা বিএনপির সহ সভাপতি মীর শাহে আলম জানান, নেতার (তারেক রহমানের) সিদ্ধান্তে বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস আরো বেড়েছে। নেতার নির্দেশ নেতাকর্মীরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে। নির্দেশনা মেনেই জন্মদিনের সকল আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করেছি। তাঁর (তারেক রহমানের) দেশ-জাতি সংস্কারের রূপরেখার বার্তা পৌঁছে দিতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মানুষের কাছে ছুটছেন। একই কথা বলেছেন বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি চৌধুরী হামিদুল হক হিরু ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল।

এর আগে গত ১৯ নভেম্বর বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, সহকর্মী হিসেবে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ ও নেতা হিসেবে আপনাদের কাছে নির্দেশ, আজকের পর থেকে দয়া করে আমার নাম যখন কেউ বলবেন, দেশনায়ক বা রাষ্ট্রনায়ক এই কথাগুলো দয়া করে কেউ ব্যবহার করবেন না। এই নির্দেশনার পরই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশংসা শুরু করেন।

বগুড়ার বিএনপি নেতারা জানান, ২০১৫-১৬ সালে বগুড়ার ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে তারেক রহমানকে দেশনায়ক খেতাব দেওয়া হয়েছিল। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই উপাধী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

বগুড়া জেলা বিএনপি ও কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মোশারফ হোসেন বলেন, তিনি (তারেক রহমান) দেশ-জাতি নিয়ে সংস্কার চিন্তা অনেক আগেই করেছেন। ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে দেশ পরিচালনা করব, তার রূপরেখা দিয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দিতে কাজ করছে নেতাকর্মী। বিএনপি অতীতে দেশের উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছে। আগামী দিনে বিএনপি সরকার গঠন করবে।

বিশ্লেষক, লেখক ও কলামিস্ট মহসিন আলী রাজু বলেন, জন্মদিনের কর্মসূচি বর্জন এবং দেশনায়ক রাষ্ট্রনায়ক বলে সম্বোধন না করার আহবান তারেক রহমানের ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। রাজনৈতিক চর্চায় তাঁর আত্মনিবেদিত নেতৃত্ব প্রকাশ পেয়েছে। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে- তারেক রহমানের এই কথাটি সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তারেক রহমান ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে। তার ডাক নাম ‘পিনো’। তারেক রহমান ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার আগেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক রহমান দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও মায়ের পাশাপাশি তারেক রহমান দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এভাবেই রাজনীতির প্রথম সারিতে তার সক্রিয় আগমন ঘটে। ২০০২ সালে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২০০৯ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে এবং ২০১৬ সালে ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১/১১ সরকারের সময় বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান ২০০৮ সালে লন্ডনে চলে যান।সপরিবারে সেখানেই বসবাস করছেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!