ঢাকা সোমবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৪

সূর্যের দেশ ফ্লোরিডা: আপনার স্বপ্নের বাস্তবতা

জুয়েল সাদাত, যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৪, ০১:১২ পিএম

সূর্যের দেশ ফ্লোরিডা: আপনার স্বপ্নের বাস্তবতা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সূর্যের দেশ ফ্লোরিডা। আমেরিকার অনন্য একটি স্ট্রেট। যেখানে সারা বছরই রোদ্র ঝলমল করে। আমেরিকা পৃথিবীর একটি অনন্য রাষ্ট্র। সারা পৃথিবীর ২০০টি দেশের নাগরিক আমেরিকায় থাকেন। আবার ২০০টি দেশের নাগরিক আমেরিকা ভ্রমণ করেন। প্রতিবছর ৬৬ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন টুরিস্ট আমেরিকা ভ্রমণ করেন (২০২৩ সাল)। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালে ১৪০ মিলিয়ন টুরিস্ট ফ্লোরিডা ভ্রমণ করেন। এতে বোঝা যায়, আমেরিকার ৫০টি স্টেটের মধ্যে ফ্লোরিডা খুবই আকর্ষণীয় জায়গা। করোনা পরবর্তিতে বিশ্বের নানান দেশের প্রবাসী আমেরিকা ভ্রমণ কমালেও আমেরিকার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর টুরিস্টদের আগমন বেড়েছে। উত্তর আমেরিকার শত সহস্র শহর দেখার মতো। আমেরিকানরা সুযোগ পেলেই ঘুরতে বের হয়। আমাদের এখানে (উত্তর আমেরিকা) বসবাসরত বাংলাদেশিরাও আমেরিকা ঘুরে বেড়ান। লং ড্রাইভ আমেরিকায় সবচেয়ে জনপ্রিয়। নিজের গাড়ী বা রেন্ট-এ কারে শত সহস্র মাইল পাড়ি দেন আমেরিকা দেখার জন্য সবাই।

নিউ ইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডা, নন স্টপ গাড়ী চালালে ১৮ ঘন্টার পথ। আমেরিকানদের নিকট ভ্যাকেশনের প্রতিযোগিতা চলে সারা বছর। বিশ্বের অনেক দেশের পর্যটক করোনা পরবর্তীতে আমেরিকায় আসতে না পারলেও ইংল্যান্ড, কানাডা, মেক্সিকো, ব্রাজিলসহ হাতেগোনা কয়েকটি দেশের পর্যটক ফ্লোরিডাকে জমিয়ে রেখেছেন। পর্যটকরা ৯৬ দশকিম পাঁচ বিলিয়ন ডলার কনট্রিবিউট করেন ফ্লোরিডা ইকোনমিতে। এবং এক দশমিক ছয় মিলিয়ন জবে সাপোর্ট করে থাকে। ওয়ার্ল্ড থিম পার্ক ক্যাপিটাল ফ্লোরিডার ওরলান্ডোতে টুরিস্টদেরউপচে পড়া ভীড় থাকে সারা বছর। হোটেল, রেন্টাল কার, রেস্টুরেন্ট, বীচগুলোতে মিলিয়ন মিলিয়ন টুরিস্ট। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এমিউজমেন্ট পার্ক ডিজনি পুরো স্বাভাবিক পর্যায়ে। করোনা শুরুর পর ২০২০ সালে ডিজনি মাত্র ১০০ দিন বন্ধ ছিল। তারপর গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে তা স্বাভাবিক হয়। সারা বিশ্বের শিশুদের নিকট পরিচিত মিকি মাউস, মিনি মাউসের মূল শহর ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড। আমাদের নিকট যেমন সৌদি আরব যাওয়া বাধ্যতামূলক; আমেরিকানদের নিকট ডিজনি একটি স্বর্গ সুখের স্থান। আমেরিকার যে কোন শহর থেকে অরলান্ডো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নেমে ৩০ মিনিট ড্রাইভে পৌঁছে যাবেন ডিজনি ওয়ার্ল্ডে। অনেকে হয়ত ভাবছেন,

ফ্লোরিডা ভ্রমণ কী ব্যয়বহুল?
আসলে না। এখানে হোটেল রুম না নিয়ে রিসোর্টে থাকা যায় ২০০/৩০০ ডলার দিয়ে। তিন বেডের রিসোর্টে দুই ফ্যামিলি থাকা যায়। এখন আবার এয়ার বিএনবি খুব পপুলার। এয়ার বিএনবি হল, কয়েকদিনের জন্য বাড়ি ভাড়া করা। রেন্ট এ-কারের মূল্য বেশি থাকে আমেরিকায় সারা বছর। চাইলে ড্রাইভ করে আসা যায় নিউইয়র্ক থেকে ১,১৪৬ মাইল (১৮ ঘন্টা) মিশিগান থেকে ফ্লোরিডা ১,১৭০ মাইল (১৮ ঘন্টা)। প্লেনে আসা যায় ২০০ ডলার রাউন্ড ট্রিপ আড়াই ঘন্টা সময়ে। খাওয়ার খরচ খুব একটা বেশি না। তবে খুব মানসম্মত ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট নাই। আহমেদ রেস্টুরেন্ট, চ্যাট হাউস, ফিলি স্টিকসহ কিছু মিডল ইষ্টার্ন রেস্টুরেন্ট গুগল করলে পাওয়া যাবে। থাকার জন্য কিসিমি ওল্ড টাউন, ওয়ান নাইন্টি টু ওয়েস্ট ভালো। যারা খরচ করতে পারেন তারা ডিজনির ভেতর ২৪ টি ডিজনি রিসোর্টে থাকতে পারবেন। প্রতি রাত ৪০০ ডলার থেকে ২,৫০০ ডলার। তবে ডিজনি রিসোর্টগুলো অনেক সুন্দর। অনেকটা পার্কের মতো। ডিজনিতে চারটি পার্ক রয়েছে। দুটো ওয়াটার পার্ক। পার্কগুলো প্রতিদিন এডমিশন ১৫৬ ডলার। প্রথম প্রথম মনে হবে অনেক বেশি মূল্য। তবে মূল্যের চেয়ে বেশি আনন্দবোধ করবেন।

কি আছে ফ্লোরিডায়? 
ওয়ার্ল্ড হ্যাপিয়েস্ট সিটি অরলান্ডো। সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা নামে সুপরিচিত। ৬৭ মিলিয়ন টুরিস্ট ভ্রমণ করেন অরলান্ডো। ৪৮৬ হোটেলে ১২৭৮০৯ হোটেল রুম আছে। আর ডিজনি ওয়ার্ল্ডে ২৪ টি রিসোর্টে ৩০ হাজার হোটেল রুম। প্রায় ১ লাখ টুরিস্ট রাত্রি যাপন করেন ইনসাইড ডিজনিতে। ২৭ হাজার একর জায়গা নিয়ে ডিজনি। সেখানের মাত্র ৯৫০ একর জায়গা ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৭১ সাল থেকেই ডিজনি ওয়ার্ল্ড পৃথিবীর সেরা আকর্ষণ। ডিজনি ওয়ার্ল্ড ৫০ বছর পূর্তি করেছে। সারা পৃথিবীর নিকট ফ্লোরিডার ডিজনি ওয়ার্ল্ড খুবই পপুলার। ডিজনির বেশ কয়েকটি পার্ক রয়েছে। এরমধ্যে ম্যাজিক কিংডম, অ্যানিম্যাল কিংডম, হলিউড স্টুডিও, এপকট এই চারটি পার্কই ডিজনি ওয়ার্ল্ড। সঙ্গে ব্লিজার্ড বীচ, টাইফুন লেগুন দুটো ওয়াটার পার্ক। অরলান্ডোতে ডিজনি ছাড়াও আছে ইউনিভার্সেল ষ্টুডিও, সিওয়ার্ল্ড ও কেনেডি স্পেস সেন্টার (নাসা)।

স্পেস সেন্টার
৪২ একর জায়গা নিয়ে ১৯৬৭ সালে নাসা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে সুপরিচিত নাসা স্পেস সেন্টার। প্রতি বছর দেড় মিলিয়ন  পর্যটক ভ্রমণ করেন। বছরে ৬/৭ শাটল লঞ্চ করে এখান থেকে। ৫৭ ডলারের টিকেটে সারাদিন টুর করে দেখার মত একটি জায়গা এটি। বাংলাদেশের একমাত্র স্যাটেলাইট এখান থেকে যাত্রা করে। অরলান্ডো শহর থেকে দেড় ঘন্টা দূরত্বে নাসা। আছে ডেটোনা ৫০০ নামে পরিচিত কার রেস ট্রাক ডেটোনাতে। ডেটোনা বীচ ছাড়াও পুরো ফ্লোরিডাতে আছে ৫০টি বীচ। একে বীচের রাজধানী বলা যায়। যারা মাছ শিকার করতে পছন্দ করেন তারা আনন্দ পাবেন। ঘন্টা দেড়েক ড্রাইভ করলেই সমুদ্র কাছে টানবে আপনাকে। আছে লেগোল্যান্ড, কিসিমিতে আছে গ্যাটরল্যান্ডে। আছে কুমিরের পার্ক; হাজার হাজার কুমির আপনাকে খেলা দেখাবে। ফ্লোরিডা থেকে আড়াই ঘন্টা ড্রাইভ করলে আছে সেন্ট অগাস্টিন শহর; যা আমেরিকার প্রথম সিটি, ১৫০০ শতাব্দীর শহর। এখানেই আমেরিকার গোড়াপত্তন। সেখানে আমেরিকার প্রথম স্কুল, প্রথম জেল। স্প্যানিশরা ব্রিটিশদের তাড়িয়ে সেন্ট অগাস্টিন দখল করে। তাই পুরো ফ্লোরিডায় স্প্যানিশদের আধিপত্য আজও বিরাজমান। কিভাবে আসবেন, কি দেখবেন বা ডিজনি নানা প্যাকেজের জন্য আছে FLYONCALL.COM। ফ্লোরিডা গরমের শহর, শীত বা স্নো বলতে কিছু নেই। ৯০ থেকে ১০৫ তাপমাত্রা আপনার ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করে তুলবে। ফ্লোরিডাতে সুখ পাশাপাশি হাঁটে। স্বপ্নের জগতের বাস্তবতায় আছে বড় বড় বাড়ি, চমৎকার আবহাওয়া, গ্লফ খেলার জায়গা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, আইল্যান্ড, ক্রুজ, প্রাইভেট প্লেন, হেলিকপ্টার রাইড, ডিপ ফিশিং, ডলফিন পার্ক আরো অনেক কিছু। খরচের হিসাবে উনিশ বিশ করে সাহস করে বেরিয়ে পড়লেই হাতের নাগালে পাবেন স্বপ্নের বাস্তবতা।

আরবি/ আরএফ

Link copied!