বাহরাইনে ভিসা বন্ধ

নাইমুর রহমান শান্ত, বাহরাইন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৪:২২ পিএম

বাহরাইনে ভিসা বন্ধ

ছবি: ইন্টারনেট

পারস্য উপসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্র বাহরাইনে প্রায় দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস। মধ্যপ্রাচ্যের ইউরোপ খ্যাত এই দেশটি বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দীর্ঘ সাত বছর ধরে সব প্রকারের ভিসা বন্ধ রেখেছে। ভিজিট ভিসা, ফ্যামিলি ভিসা কিংবা শ্রমিক ভিসা—সবই অচলাবস্থায়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এখানে বসবাসরত প্রবাসীরা ক্রমাগত সংকটে পড়ছেন। দক্ষ শ্রমিকের অভাবে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন অনেকেই।

বাহরাইনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী কুমিল্লার প্রবাসী হাফেজ মোহাম্মদ সালমান আবেগের সঙ্গে রূপালী বাংলাদেশকে বললেন, ‘শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। জানি না, এই ভাবে কতদিন টিকে থাকতে পারবো। আমি দক্ষ শ্রমিক আনতে পারছি না। যার ফলে প্রতিদিনই লোকবল সংকটে ভুগছি। মনে হচ্ছে যেন আমার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই গুটিয়ে ফেলতে পারি আমার ব্যবসা।’
সিলেটের নুরুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত একটি কোম্পানিতে কাজ করছেন। যিনি পরিবারকে কাছে আনার স্বপ্ন দেখছেন। জানালেন, ’আর্থিক সঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও পরিবারের সদস্যদের এখানে নিয়ে আসতে পারছি না। দীর্ঘদিন ধরে সন্তানদের স্পর্শ পাই না, অথচ তাদের মুখের হাসির জন্যই তো সব কষ্ট সহ্য করছি। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আমাদের ওপর একটা বোঝা হয়ে আছে। কোম্পানি দুই বছর পর একবার ছুটি দেয় তাও দুই মাসের জন্য। পরিবারকে নিজের কাছে রাখতে পারলে মানুষিক শান্তি পেতাম।’

এদিকে ভিসা সমস্যা সমাধানে দূতাবাসের দীর্ঘদিনের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে বলে জানা যায়। পূর্ববর্তী রাষ্ট্রদূত ড. নজরুল ইসলাম থাকাকালীন করোনা মহামারীর সময় দেশে গিয়ে আটকে পড়া ২৫০টি পরিবারকে ফিরিয়ে আনতে বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের তথ্য জমা দেন। যা এখন পর্যন্ত আশার আলো দেখেনি। 
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন জানায়, পূর্ববতী রাষ্ট্রদূত বিদায়ী সাক্ষাৎ করার সময় বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন। তিনি যাওয়ার পূর্বেই ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যেই উনাকে উপহার হিসাবে এই ফ্যামিলি ভিসাগুলো করে দিবেন। যা ড. নজরুল ইসলাম চলে যাওয়ার এক বছরেও হয়নি। প্রবাসীরা বলছেন, শিগগিরই দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক সমঝোতা না হলে এটা আর আশার মুখ দেখবে না। তবে বাহরাইন প্রবাসী সংগঠনগুলোও হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারা ভিসা ব্যবস্থা সক্রিয় করতে বিভিন্ন মহলে দাবি জানাচ্ছেন। বাহরাইন প্রবাসী ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের একটি প্রতিনিধি দল কিছুদিন পূর্বে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি তারা প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে ১০ লক্ষ টাকার একটি চেক প্রদান করেছে; যা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রবাসীদের সহমর্মিতার এক অনন্য প্রতীক। তাছাড়া, এই ব্যবসায়ি সংগঠন সরকারের আরও কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভিসা পুনরায় চালুর বিষয়ে অনুরোধপত্র জমা দিয়েছেন। প্রবাসীদের অন্যতম আয়ের উৎস হিসেবে বাহরাইন প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের তালিকায় শীর্ষ দশে রয়েছে। এরপরও তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না, যা নিয়ে প্রবাসীদের মনে আক্ষেপ বাড়ছে। তবুও তারা আশায় বুক বেঁধে আছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী শেখ খলিফা বিন সালমান আল খলিফার সুসম্পর্ক রয়েছে। প্রবাসীদের বিশ্বাস, যদি ড. ইউনুস একটিমাত্র ফোন কল দেন বা একটি চিঠি পাঠান, তবে হয়তো মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রমবাজারটি বাংলাদেশিদের জন্য আবারও উন্মুক্ত হবে। বলা বাহুল্য, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবন যেমন সংগ্রামী, তেমনি তাদের আকাঙ্ক্ষা পরিবারের সান্নিধ্যে থাকা। ভিসা সংকটের অবসান হলে তারা আবারও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবেন এবং তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। ব্যবসায়ীরাও নতুন উদ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!