ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবারও সক্রিয় হচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র

মো. মনিরুজ্জামান, মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৪, ০১:৪০ পিএম

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবারও সক্রিয় হচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র

ছবি: সংগৃহীত

বৈদেশিক কর্মসংস্থানে মালয়েশিয়া দেশের অন্যতম শ্রমবাজার। এই শ্রমবাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে ইতোমধ্যেই সক্রিয় নানা সিন্ডিকেট চক্র। বিগত সরকারের ১৬ বছরের শাসন আমলে ২ বার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়। তবে সিন্ডিকেট চক্রের অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগে আবার তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে সিন্ডিকেট চক্র কিছুটা নিস্তব্ধ ছিল।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালুর সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় এখন আবারও সেই চক্রের সদস্যরা জেগে উঠেছে। চলছে বাজার দখলের দৌঁড়ঝাপ।

তথ্য বলছে, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের পরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট চক্রের মূল গডফাদারসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি দুই ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে সেই পুরোনো সিন্ডিকেট চক্র  মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) বেশ ক’জন প্রভাবশালী নেতা ও একাধিক ব্যবসায়ীও ছিলেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় এবং কিছুটা উন্নত জীবনের প্রত্যাশা ও পরিবারের দারিদ্র ঘোচাতে প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমিক হিসেবে পাড়ি জমান বিদেশের মাটিতে। প্রায় শতভাগ শ্রমিকই ঋণ করে রেমিট্যান্স যোদ্ধার খাতায় নাম লেখান। তবে এই সিন্ডিকেট চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিজেদের শেষ সম্বলটুকুও হারাতে বসেছেন।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি চক্র গড়ে দুর্নীতির অভিযোগে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। এরপর দুই দেশের মধ্যে অনেক দেনদরবার করে ২০২২ সালের আগস্টে আবার শ্রমবাজার খুলে দেওয়া হয়। সব এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত রাখার আন্দোলন হলেও তা করা হয়নি শেষ পর্যন্ত। দেশে প্রথমে ২৫ এজেন্সি দায়িত্ব পেলেও পরে এটি বাড়িয়ে ১০০ এজেন্সি করা হয়।

দেশটিতে গিয়ে হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী প্রতারিত হয়েছেন তার হিসাব একটু সরিয়ে রেখে অর্থনৈতিক লাভ ক্ষতি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এ যেন ফুটো কলসি। তথ্য বলছে, একজন কর্মী ৮০ হাজার টাকায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা। কাগজ কলমে এটি থাকলেও সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা ছাড়া বা এর কমে কেউ যেতে পারেননি। বিমান টিকিট বাদে একজন কর্মীর জন্য শুধু চক্র নিয়েছে দেড় লাখ টাকা। প্রতি কলিং বাবদ গড়ে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে দিতে হয়েছে। গত দেড় বছরেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য হয়েছে। যার অধিকাংশ টাকা পাচার করেছে সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এজেন্সিরা।

কলিং ভিসায় যাওয়া শামীম, ইম্রান, জহির, কালাম জানান, জনপ্রতি ৫ লাখ টাকা দিয়ে তারা এখানে এসেছেন। যার পুরোটাই কিস্তি আর সুদের মাধ্যমে। তারা বলেন- প্রথমে বসে ছিলাম এর পরে কাজ পেয়েছি। এখন ১৫০০ রিঙ্গিত (৪০ হাজার টাকা) বেতন পাই। সারামাস খাওয়া খরচ মোবাইল বিল নিলে ৫০০ রিঙ্গিত খরচ হয়ে যায়। যে খরচ করে এসেছি সেই টাকা কবে তুলবো জানিনা।

মালয়েশিয়ার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, নতুন করে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন অনুমোদন করছে শুরু করেছে মালয়েশিয়া সরকার।

আরবি/এফআই

Link copied!