ঢাকা শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

আমিরাতে জাফরান ব্যবসায় বাংলাদেশিদের সফলতা

মাহিম উদ্দীন মুন্না, ইউএই

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০৩:০২ পিএম

আমিরাতে জাফরান ব্যবসায় বাংলাদেশিদের সফলতা

ছবি: সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতে জাফরান ব্যবসায় দিন দিন বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। ছোট ও মাঝারি পর্যায়ের বিনিয়োগসহ এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বহু বাংলাদেশি। জাফরান পৃথিবীর অন্যতম দামী মসলা, এটি ‘রেড গোল্ড’ নামেও পরিচিত। প্রাচীন যুগে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে জাফরানের সুগন্ধ ও উজ্জ্বল রঙের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ জাফরান ব্যবহার সম্ভ্রান্ত পরিবারের মধ্যে ব্যাপক প্রচলন ছিল। এ ফসলের আদিস্থান গ্রীস। জাফরানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ধীরে ধীরে কান্দাহার, খোরাসান, কাশ্মীরের বনেদী মহলে ব্যবহারের প্রয়োজনে ভারত উপমহাদেশে এর বিস্তার ঘটে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে জাফরান ব্যবসায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশিরা। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ দুবাই, শারজাহ, আবুধাবি, আজমান, উম্ম আল কোয়াইন এর মতো এর গুরুত্বপূর্ণ বাজার এলাকাতে দিন দিন বেড়ে চলছে বাংলাদেশিদের জাফরানের প্রতিষ্ঠান।

ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত ইরান থেকে জাফরান বেশি আমদানি হয়ে থাকে আমিরাতে। এরমধ্যে ‘টপ সুপার নাগিন’ সব চেয়ে মূল্যবান। তাছাড়া এটির পরে রয়েছে নাগিন, নরমাল নাগিন, সুপার নাগিন, রেট নাগিন এর মতো জাফরানের কোয়ালিটিগুলো। আফগানিস্তান, স্পেন ও ভারতের কাশ্মীর রাজ্য থেকে আমদানি হয়ে থাকে জাফরানগুলো। দামের ক্ষেত্রে ইরানের টপ- সুপার নাগিন এবং স্পেনের তাজমহলের মতো গ্রেডগুলো সব থেকে এগিয়ে। আমিরাতে টপ-সুপার নাগিন বিক্রি হচ্ছে এক গ্রাম ৩০ দিরহাম করে এবং স্পেনের তাজমহল বিক্রি হচ্ছে ২৫ দিরহামে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বলছেন এক সময় এই ব্যাবসা ইরানিদের দখলে থাকলে বর্তমানে আমিরাতের গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশগুলোতে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বেড়ে চলছে যা দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। শারজাহ প্রদেশ এর বাংলাদেশি ড্রাই ফ্রুর্টস কোম্পানি আল মাশুর গ্রুপ এর চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাদের দোকানে আসেন। এছাড়া বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা এখানে কেনাকাটা করেন। তাদের চাহিদা থাকে ভালো মানের জাফরান যা আমরা দিতে চেষ্টা করি,আর ভালো মানের জাফরান দেওয়ার ফলে তাদের আস্থা থাকে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর।
দেশটির উম্ম আল কোয়াইন এর বাংলাদেশি মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান আল খাজা বাণিজ্যিক কোম্পানির চেয়ারম্যান তানিম ফারজিন তেজু বলেন, দিন দিন বাংলাদেশি এসব প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি হওযার ফলে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে। তবে শ্রমিক চাহিদা থাকলেও ভিসা জটিলতায় নতুন করে সুযোগ পাচ্ছেন না অনেকে।

খাবার সুস্বাদু করার জন্য বিশেষ করে বিরিয়ানি, কাচ্চী, জর্দা ও কালিয়াসহ নানা পদের দামি খাবার তৈরিতে জাফরান ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও বিয়ের অনুষ্ঠানে জর্দা তৈরিতে প্রাকৃতিক আকর্ষণীয় রং আনতে এবং দামি বাহারি পান বিপণনে জাফরান অন্যতম উপাদান। মুখমণ্ডল আকর্ষণীয় করতে ও ত্বকের উজ্জ্বল রং আনার জন্য সচ্ছল সচেতন রমণীরা প্রাচীন কাল থেকে জাফরান ব্যবহার করে থাকে। বিউটি পার্লারে রূপচর্চায় জাফরান অন্যতম উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
দোকান মালিকরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট খাতে এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাড়লেও ভিসা জটিলতায় দেশীয় শ্রমিক নেওয়া যাচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ মালিক পরিবর্তনের সুযোগ সহজ করা হলে অনেক বাংলাদেশি এসব প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাবে। ফলে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।

আরবি/ আরএফ

Link copied!