গত ৪ নভেম্বর গ্রিসের মানোলাদা-পাতরা সড়কে প্রাইভেটকারের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা থেকে নিচে ছিটকে পড়লে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটে জুয়েল রানা নামের টগবগে এক বাংলাদেশি যুবকের। দুর্ঘটনায় গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভুক্তভোগীর চেহারাও বিকৃত হয়ে গেছে। মৃত ব্যক্তির চেহারা তার পাসপোর্টের সাথে মিল না পাওয়ায় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়নি কর্তৃপক্ষ। গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে খবর দিলে, স্থানীয় এক আত্মীয়ের সহায়তায় মৃতের মরদেহ সনাক্ত করা হয়।
ঘটনার দিন বাংলাদেশী অধ্যুষিত গ্রিসের গ্রামীণ অঞ্চল মানোলাদা-পাতরা সড়কে গাড়ি চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক ডিভাইডারের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে নিচে পরে যান। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জুয়েল রানা (মিয়া)। গাড়িটি জুয়েল নিজেই চালাচ্ছিলেন, তবে সাথে আর অন্য কেউ ছিল কিনা তা জানা যায়নি। জুয়েল রানা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গ্রিসে বসবাস করছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ কুমার পালের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, দুর্ঘটনায় জুয়েল মিয়ার চেহারা বিকৃত হওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। এদিকে গ্রিসে বসবাসরত জুয়েলের পরিচিত ও কাছের আত্নীয়রা তার পরিবারের কাছে দেশে দ্রুত লাশ পাঠানোর জন্য চাপ দিচ্ছিলেন।
সাধারণত দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু ঘটলে ময়না তদন্তের পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন ছাড়া গ্রিক সরকার লাশ হস্তান্তর করেনা। তাছাড়া দেশে লাশ পাঠানোর সকল কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত লাশ কারো জিম্মায় বা হাসপাতালের হিমঘরে রাখতে হয়। দুর্ঘটনায় নিহতের মরদেহ বর্তমানে রাজধানী থেকে ৪২০ কিলো মিটার দূরে "পাতরা" হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে ।
বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকেও জুয়েলের মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য আবেদন করা সহ ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে। যদিও গ্রিসের নিকট আত্নীয় এবং দেশে থাকা পরিবার লাশ দেশে পাঠানোর তাগিদে বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং দূতাবাসের অবহেলাকে দায়ী করছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাহিদ ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে বলেন, ‘নিহতের মরদেহে দেশে পাঠাতে আমরা কমিউনিটির পক্ষ থেকে ছাড়পত্র ও আবেদন দূতাবাস বরাবরে পাঠিয়েছি। দুর্ঘটনায় নিহতের চেহারা বিকৃত হওয়ায় শনাক্ত করতে কিছুদিন সময় লেগেছে । সনাক্তি করণ ছাড়া কখনোই কোন মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়না। আশা করছি আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে খুব দ্রুত মরদেহটি দেশে তার পরিবারে কাছে পাঠানো সম্ভব হবে ।"
ইউরোপের সড়ক বিধি ও নীতিমালায় প্রতিটি গাড়ির ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি যে কোন দুর্ঘটনায় সাধারণত তাদের ফার্স্ট পার্টির বা প্রথম পক্ষের ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকেন কিন্তু জুয়েলের ক্ষেত্রে সিসি টিভি ক্যামেরা বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার সাথে অন্য কারো সম্পৃক্ততা খুঁজে না পাওয়ায় আপাতত এই ক্ষতি পূরণ পরিশোধ করবেন না। তবে জুয়েলের গাড়ির ইন্স্যুরেন্স হেভি ক্যাটাগরি হওয়ায় নিহতের পরিবার থেকে যদি কেহ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন, তাহলে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সর্বোচ্চ দশ হাজার ইউরো (বাংলাদেশের তের লাখ টাকা প্রায়ই) মৃতের পরিবারকে দিতে বাধ্য থাকিবে।
দূতাবাস থেকে দেশে থাকা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে, যদি পরিবার ক্ষতিপূরণ চান এবং দেশ থেকে প্রত্যায়ন পত্র পাঠান, তাহলে ক্ষতিপূরণের জন্য চেষ্টা করা হবে কিন্তু সেই ক্ষেত্রে লাশ দেশে পাঠাতে আরো বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনা আছে কারণ সকল আইনিপ্রক্রিয়া লাশ দেশে পাঠানোর আগেই সম্পন্ন করতে হবে।
দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর বিশ্বজিৎ কুমার পাল গ্রিসে ট্রেন দুর্ঘটনায় বাংলাদেশির মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের রেফারেন্স দিয়ে বলেন, "আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে দেশে থাকা মৃতের পরিবারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করে থাকি। ট্রেন দুর্ঘটনায় বাংলাদেশির পরিবার এই পর্যন্ত চল্লিশ হাজার ইউরো গ্রহণ করেছেন এবং আরো দুই লক্ষ ইউরোর কাছাকাছি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
নিহত জুয়েল মিয়া কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার আলগী গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে। নিহত জুয়েলের বাংলাদেশে দুই কণ্যা সন্তান রয়েছে। জুয়েল রানার মৃত্যু সংবাদে বাঙালি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :