আজ ২রা ডিসেম্বর। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫৩তম জাতীয় দিবস। দিবসটিকে ঘিরে নানা আয়োজনে মেতেছে স্থানীয় ও প্রবাসীরা। এবার জাতীয় দিবসকে ‘ঈদুল ইত্তিহাদ’ হিসেবে উদযাপন করছে দেশটি। বিশেষ ছুটি, বিপুলসংখ্যক কারাবন্দিদের মুক্তি, বর্ণিল আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে চলছে কেনাকাটার ধুম। এসব নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন ইউএই ব্যুরো প্রধান এসএম শাফায়েত-
ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ
উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ তথা বিশ্ববাণিজ্যের সংযোগস্থল সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত স্বাধীনতা লাভ করে।
এদিন রাজধানী আবুধাবীর নেতৃত্বে ছয়টি প্রদেশ তথা দুবাই, শারজাহ, আজমান, উম্ম আল কোয়াইন, ফুজাইরাহ ও আল আইন একটি সংগঠিত ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে রাস আল খাইমাহ তখনো আরব আমিরাত রাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনে আসতে পারেনি। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাস আল খাইমাহ আরও একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ হিসেবে আরব আমিরাতের সঙ্গে যুক্ত হয়। তখন থেকেই সাতটি প্রদেশ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথচলা শুরু। ১৯ শতকে ব্রিটিশদের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি অনুসারে সাতটি রাষ্ট্র পূর্বে চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্র নামে পরিচিত ছিল। আমিরাতে হস্তনির্মিত বস্তু থেকে এই অঞ্চলের মনুষ্য বসতিস্থাপনের ও মেসোপটেমিয়ার মত সভ্যতার সঙ্গে স্থানীয় বাণিজ্য চলাচলের সুপ্রাচীন ইতিহাস পাওয়া যায়। এই অঞ্চলের উপকূলে ও অভ্যন্তরে কিছু উপজাতি প্রথমে বসতি স্থাপন করে এবং তাদের খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ইসলামীকরণ করা হয়। আলবুকার্কের নেতৃত্বে পর্তুগিজ আক্রমণের সময় এই অঞ্চলের উপকূল বিভাগে বেশকিছু রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল। চুক্তিবদ্ধ উপকূলের অধিবাসী এবং ব্রিটিশদের মধ্যে সংঘাতের ফলস্বরূপ ব্রিটিশরা একবার ১৮০৯ সালে এবং আরও একবার ১৮১৯ সালে রাস আল খাইমায় তাণ্ডব ও লুণ্ঠন চালায়। এর ফলে ১৮২০ সালে চুক্তিবদ্ধ শাসকদের সঙ্গে ব্রিটিশদের প্রথম কিছু চুক্তি স্থাপিত হয়। চিরস্থায়ী উপকূলীয় শান্তির চুক্তিসহ আরও বেশকিছু চুক্তি ১৮৫৩ সালে স্বাক্ষরিত হয়; যার ফলে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত উপকূল অঞ্চল বরাবর শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় ছিল। এরপর মুক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই উপকূল অঞ্চলের অধিবাসীদের অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়। ১৯৬৮ সালে ব্রিটিশরা একটি সিদ্ধান্তে আসে যে, তারা চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর ওপর নিজেদের কার্যকলাপ বন্ধ করবে এবং একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করবে। এই সিদ্ধান্তটি চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রের সব থেকে প্রভাবশালী দুই নেতা আবুধাবির শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান এবং দুবাইয়ের শেখ রশিদ বিন সৈয়দ আল মাকতুম সমর্থন করেন। এরা দুজন অন্যান্য চুক্তিবদ্ধ শাসকদের এই যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায়। সেসময় মনে হয়েছিল, বাহরাইন এবং কাতার এই ইউনিয়নে যোগদান করবে। কিন্তু তারা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকারই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল।
মরুবেষ্টিত আরব আমিরাতের উত্তরে পারস্য উপসাগর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে সৌদি আরব এবং পূর্বে ওমান ও ওমান উপসাগর। ১৯৫০-এর দশকে পেট্রোলিয়াম আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত দেশটি মূলত ব্রিটিশ সরকারের অধীন কতগুলো অনুন্নত এলাকার সমষ্টি ছিল। খনিজ তেলশিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর দ্রুত উন্নতি ও আধুনিকায়ন ঘটে। ফলে ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে আমিরাতগুলো ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে আসতে সক্ষম হয়। দেশের খনিজ তেলের বেশির ভাগ আবুধাবিতে পাওয়া যায়। ফলে এটি সাতটি আমিরাতের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ও শক্তিশালী। তেলশিল্পের কারণে এখানকার অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং জীবনযাত্রার মান বিশ্বের সর্বোচ্চগুলোর একটি। মুসলিম বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত শীর্ষে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩১তম দেশ। আরব আমিরাতে রয়েছে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন ও গগনচুম্বী ভবন। তার মধ্যে বুর্জ খলিফা ও বুর্জ আল আরাব অন্যতম। স্বাধীনতার পর খুব কম সময়ে আরব আমিরাত বিশ্বের অন্যতম ধনী ও সুন্দর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অত্যন্ত নিরাপদ ও সম্ভাবনাময়ী দেশটি এখন একযোগে নানা শ্রেণির ব্যবসায়ী ও ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে তীর্থস্থান।
আরব আমিরাতের উন্নয়নে ড. ইউনূসের ভূমিকা
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজ পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ সফরে আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ও দুবাই সফর করেছেন নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনে দেশটির রাষ্ট্রপতি শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল খোশ মেজাজে দেখা যায় মুহাম্মদ ইউনূসকে। ২০১৫ সালের অক্টোবরে ৩০টি দেশের চার হাজার নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী নেতাদের অংশগ্রহণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সাথে মদিনাত জুমেইরাতে গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমি সামিটের উদ্বোধন শেষে একান্তে কথা বলেন দুবাই শাসক ও ড. ইউনূস।
এর আগে অধ্যাপক ড. ইউনূস গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনমি সামিটে উদ্বোধনী মঞ্চে মূল বক্তব্য দেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘অর্থনীতি ব্যবসা দিয়ে নয়, মানুষের কথা দিয়ে হয়। ব্যবসায়িক বৃদ্ধির হার মানুষের অবস্থা প্রতিফলিত করে না, এটি ব্যবসার অবস্থা প্রতিফলিত করে। বিশ্বকে টেকসই করার জন্য আমাদের ব্যবসাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। ব্যবসাগুলোকে একটি ‘পি’ লাভের লক্ষ্য রাখার পরিবর্তে, এটিকে সমান অগ্রাধিকারের সঙ্গে তিনটি ‘পি’কে লক্ষ্য করা উচিত। ‘পিপল, প্ল্যানেট এন্ড প্রোফিট’। তবেই ব্যবসা মানুষের অবস্থার প্রতিফলিত করতে পারে।’ তিনি শ্রোতাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘যদি আমরা ব্যবসার উদ্দেশ্য সংস্কার না করি, তবে আমরা এমন একটি বিশ্বের কাছে শেষ হয়ে যাব, যেখানে ব্যবসার প্রায় সব সম্পদ কিছু লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হবে।’ দুবাই চেম্বার, দুবাই ইসলামিক ইকোনমি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ডিআইইডিসি) এবং থমসন রয়টার্স আয়োজিত এই শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল, ইসলামী অর্থনীতির পরিবর্তনশীল গতিশীলতা পরীক্ষা করা। ধারণা করা হয়, ড. ইউনূসের এই বক্তব্যে অনেক ক্ষেত্রে বদলে যায় আরব আমিরাতের ব্যবসায়িক গতিপথ। তার বাস্তব উদাহরণ আজকের বাণিজ্যসমৃদ্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিগত ৭-৮ বছরে দেশটি ঠিক ওই তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই এগিয়েছে অনেকটা পথ। আগের দিন (৪ অক্টোবর) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাই শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস ফাউন্ডেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ড. ইউনূসের কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে দারিদ্র্যতা কাটিয়ে উঠতে এই কার্যক্রমের বাস্তবায়ন চেয়েছিলেন দুবাই শাসক। ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়েও অধ্যাপকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সেসঙ্গে ফাউন্ডেশনের এজেন্ডা গঠনে সাহায্য করার জন্য অধ্যাপক ড. ইউনূসের প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি তার কর্মীদের নির্দেশ দেন ড. ইউনূসকে আবাসিক ভিসা দেওয়ার জন্য, যেন তিনি কোনো অসুবিধা ছাড়াই দুবাই আসতে পারেন। নির্দেশনা অনুযায়ী একই দিনে ভিসা দেওয়া হয়।
তথ্য সূত্র: ইউনূস সেন্টার
ঈদুল ইত্তিহাদ
মুসলিম রীতি অনুযায়ী বছরে আনুষ্ঠানিক ভাবে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যে দুটি ঈদ উদযাপন করা হয় সেটিকেই ঈদ হিসেবে গণ্য করেন সবাই। তবে আরব নাগরিকরা তাদের বিশেষ কোনো আনন্দের দিনকেই ঈদ হিসেবে গণ্য করেন। তেমনি এ বছর আরব আমিরাতের ৫৩তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশটিতে ঘোষণা করা হয়েছে ‘ঈদুল ইত্তিহাদ’।
ইত্তিহাদ আরবি শব্দ। যার বাংলা অর্থ ঐক্য। সে অনুযায়ী আজ ২ ডিসেম্বর দেশটির ঐক্য ও সম্প্রীতির ঈদের দিন। দিবসটি উপলক্ষে দেশের প্রধান প্রধান সড়কে বিশালাকার বিলবোর্ডে শোভা পাচ্ছে আরবি ও ইংরেজি অক্ষরে লেখা বিশেষ লোগো সংবলিত ‘ঈদুল ইত্তিহাদ’ লেখাটি। ঈদের আনুষ্ঠানিকতার মতোই স্থানীয়রা তাদের ঘরবাড়ি পরিপাটি করে সাজাচ্ছেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন অনেকে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং স্কুল-কলেজ ছুটির আগ মুহূর্তে আনন্দমুখর পরিবেশে ঈদুল ইত্তিহাদ উদযাপন করতে দেখা যায়। যেখানে রংবেরয়ের পোশাক পরে একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেয়। এ ছাড়াও দিনভর আরব্য খাবারের পসরা সাজিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে এবং খোশগল্পে মেতে ওঠেন অংশগ্রহণকারীরা। দিবসটি উপলক্ষে পুরো সপ্তাহব্যাপী স্থানীয়দের ঘরে ঘরে ঈদের মতো আনন্দ উদযাপন করা হচ্ছে।
টানা চার দিনের ছুটি
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ৫৩তম জাতীয় দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি খাতের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার ও শনিবার কিছু প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ ছাড়া আজ এবং আগামীকাল সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে আমিরাতের মানবসম্পদ ও ইমিরেটাইজেশন মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী একটানা চার দিন ছুটি কাটিয়ে ৪ ডিসেম্বর বুধবার অফিস কার্যক্রম শুরু হবে। এবারের জাতীয় দিবসে সরকারি ও বেসরকারি খাতের কর্মীরা একই ছুটি পাবেন।
জাতীয় দিবস উপলক্ষে কারামুক্তি
জাতীয় দিবস উপলক্ষে আরব আমিরাত সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। মওকুফ করা হয়েছে তাদের শাস্তি ও জরিমানা।
খবর দেশটির শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম খালিজ টাইমস এর। এর মধ্যে রয়েছেন গত জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল ও গণজমায়েত করে আটক হওয়া ৭৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। গত বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ২ হাজার ২৬৯ বন্দিকে মুক্তির নির্দেশ দেন। এরপরই দুবাই শাসক ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের নির্দেশে মুক্তি দেওয়া হয় ১ হাজার ১৬৯ জনকে। যথারীতি অন্যান্য প্রদেশের মধ্যে- রাস আল খাইমাহ শাসক ১ হাজার ৫৩ জন, শারজাহ শাসক ৬৮৩ জন, আজমান শাসক ৩০৪ জন ও ফুজাইরাহ শাসক ১১৮ জন বন্দিকে মুক্তির আদেশ দেন। সেই সঙ্গে তাদেরকে দ্রুত পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দ উৎযাপনের অংশীদার হতে বলা হয়। অপরদিকে জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও নিপীড়নের প্রতিবাদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিছিল ও বিক্ষোভ করায় নতুন করে মুক্তি পাওয়া ৭৫ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ১৮৮ জনকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দিয়েছে আরব আমিরাত।
সাত আমিরাতজুড়ে বর্ণিল সাজসজ্জা ও আয়োজন
আরব আমিরাতের জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাজধানী আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, রাস আল খাইমাহ, ফুজাইরাহ, উম আল কোয়াইন, আল আইনের বিভিন্ন সরকারি বে-সরকারি ছোট বড় স্থাপনা, স্কুল-কলেজ সাজানো হয়েছে বাহারি রূপে।
আরবের অধিবাসীদের সঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও আমিরাতের শেখদের ছবি ও পতাকা দিয়ে নিজেদের গাড়ি সাজিয়ে ঘুরছেন বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার নিয়ে। দেশটির পতাকার রঙের সঙ্গে মিল রেখে বেলুন আর ছোট বড় পতাকা দিয়ে অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে আমিরাতের বড় বড় শপিংমল, প্রধান প্রধান সড়ক, সুউচ্চ ভবন, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও বড় বড় শপিংমলে দিবসটি উপলক্ষে উৎসবের আমেজ লক্ষণীয়। থাকছে ন্যাশনাল ডে ফ্যাশন শোসহ আরব সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের নানা রকম আয়োজন। বিশেষ করে দুবাইয়ের মূল আকর্ষণ বুর্জ খলিফায় জাতীয় দিবস উপলক্ষে লেজার শো, ওয়াটার ড্যান্স, মিউজিক্যাল শো চলবে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।
দিবসটি উপলক্ষে বেশ কয়েকদিন ধরেই জমকালো আয়োজন, আতশবাজি আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’। এদিন আরব সাগরতীরে বুর্জ আল আরবেও দেখা যাবে বর্ণিল আলোর ঝলকানির সঙ্গে লেজার শো। শারজাহ, কালবা এবং খোরফাক্কানের সমস্ত পাবলিক জাদুঘরে ১ ও ২ ডিসেম্বর বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ঈদ আল ইত্তিহাদ উদযাপনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বিভিন্ন প্রদেশের শাসক ও আরব নেতারা। উম্ম আল কোয়াইন প্রদেশে পাঁচ দিনব্যাপী আতশবাজি, প্যারেড, ম্যাজিক শোসহ জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আল খোর ওয়াটারফ্রন্টে ২৯ নভেম্বর শুরু হওয়া এই আয়োজন চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফুজাইরায় দিব্বা আল ফুজাইরাহ, আল তাওয়াইন, আল কারিয়া, মাসাফি, আল সেজি, উম, মুরবাহ, আওহালা এবং অন্যান্য অঞ্চলে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে দিবসটি উপলক্ষে। তবে এত সব আয়োজনের পেছনে জনসাধারণের জন্য রয়েছে ১৪টি বিশেষ নির্দেশনা। ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে করা যাবে না কোনো মিছিল-সমাবেশ, রাস্তায় পার্টি স্প্রে ব্যবহার করা যাবে না, গাড়ির নম্বর প্লেট দৃশ্যমান রাখতে হবে, কোনোভাবেই গাড়ির রঙ পরিবর্তন করা যাবে না, ঈদুল ইত্তিহাদের সম্পর্কিত নয় এমন স্টিকার, সাইন বা লোগো ব্যবহার করা যাবে না, গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না, গাড়ির জানালা ও সানরুফ দিয়ে বের হয়ে উল্লাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে, রাস্তা অবরোধ করে স্টান্ট করা যাবে না, গাড়ির সামনে বা পেছনের জানালা স্টিকার দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না, আরব আমিরাতের পতাকা ব্যতীত অন্য কোনো দেশের পতাকা ব্যবহার করা যাবে না, এছাড়াও উচ্চ শব্দে গান-বাজনা থেকেও বিরত থাকতে বলেছে দেশটির প্রশাসন।
শপিংমলগুলোতে মূল্য ছাড়ের হিড়িক
বছরের বড় বড় সব উৎসবের মতোই জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শপিংমল, সুপার মার্কেট, হাইপার মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলোতে চলছে মূল্য ছাড়ের হিড়িক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে পোশাক ও গৃহস্থালি পণ্যে প্রকার ভেদে ২৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য হ্রাস করা হয়েছে।
বিশেষ করে ৫৩ তম জাতীয় দিবসকে কেন্দ্র করে বেশির ভাগ পণ্যে ৫৩ শতাংশ মূল্য ছাড়ের ব্যাপারটি ক্রেতাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। মুঠোফোন ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকেও একাধিক অফার পাচ্ছেন। এবারের জাতীয় দিবসে দেশটির শীর্ষ কোম্পানি ডিইউ ও ইএন্ড (ইতিসালাত) তাদের গ্রাহকদের ৫৩ জিবি ইন্টারনেট বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। মানি ট্রান্সফার এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও উপহার দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে জাতীয় দিবসের আনন্দ ভাগাভাগি করছে। কোথাও বা কেনাকাটার মাধ্যমে মিলছে লটারির টিকিট বা কুপণ। ভাগ্য সহায় থাকলে পেতে পারেন নামি-দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি, স্বর্ণ ও মোটা অংকের নগদ অর্থ পুরস্কার।
আপনার মতামত লিখুন :