তীব্র গরমে আপনি কোনো এক রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছেন গন্তব্যে। গরমের তীব্রতা আরও একটু বাড়তেই ঝুমঝুমিয়ে নামল বৃষ্টি, তাও বিনা মেঘে। একবার-দুইবার নয়, যতবারই গরমের তীব্রতা বাড়ে, ততবারই শুরু হয় বৃষ্টি। চলে বেশ কিছুক্ষণ। আশপাশের হাঁসফাঁস অবস্থা কাটিয়ে দিয়ে থেমে যায় বৃষ্টি। কল্পনার মতো অবাক করা এমন পরিবেশ দেখা যায় দুবাইয়ের একটি সড়কে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের পরমাশ্চর্য সেই সড়কের নাম রাখা হয়েছে ‘রেইনিং স্ট্রিট অব দুবাই’ বা ‘দুবাইয়ের বৃষ্টিসরণি’। নামই বলে দিচ্ছে এই সড়কে যখন-তখন ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি ঝরে। তবে এই বৃষ্টি প্রকৃতির দান নয়, বরং মানুষের সৃষ্টি। তাই তো প্রকৃতিতে শীত-গ্রীষ্ম যাই থাকুক না কেন, বৃষ্টি সরণিতে গেলে নিশ্চিত দেখা মিলবে বৃষ্টির। এই রাস্তার দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। ইউরোপীয় আদলে পথচারী চলাচলের জন্য রয়েছে ফুটপাত। কিছুদূর পরপর লাল আর সাদা রঙের ফোঁটা ফোঁটা ছাপ দেওয়া ছাউনি। কথা নেই বার্তা নেই, হঠাৎই ঝুম ঝুম করে ঝরে পড়তে লাগল বৃষ্টির পশলা। মরুর দেশে এই রাস্তা যেন এক টুকরা ভূস্বর্গ। এই অসম্ভব কাজ সম্ভব করেছে ক্লাইনডিয়েনস্ট গ্রুপ। তাদেরই মালিকানায় সে দেশে রয়েছে দুবাইয়ের কোর্ট দ্য আজুর মোনাকো হোটেল। ইউরোপীয় আদলে নির্মিত এ হোটেলের অবস্থান সমুদ্রের মধ্যে তৈরি কৃত্রিম দ্বীপ দুবাইয়ের ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ডের কেন্দ্রে। দুবাইয়ের বৃষ্টি সরণির এই কৃত্রিম বর্ষ
ণ চলে মূলত সৌর বিদ্যুতে। ইউরোপের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
রাস্তাটির তাপমাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মরুর বুকে চরম গরমে যখন কষ্টের সীমা ছাড়ায়, তখনো রাস্তাটির তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির করে রাখা হয়। আর্দ্রতা ধরে রাখা হয় ৬০ শতাংশে। প্রতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইয়ে দেওয়া হয় এই সড়কে। ক্লাইনডিয়েনস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান জোসেফ ক্লাইনডিয়েনস্ট গণমাধ্যমকে জানান, এখানে এমন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলেই বৃষ্টি পড়তে থাকে। কিন্তু কীভাবে? এই রাস্তার প্রতিটি ভবনের ওপরে কিছু লুকানো নল স্থাপন করা আছে। সেসব নলে রয়েছে শীতল পানির ধারা। তাপমাত্রা বাড়লেই নলে জমে থাকা পানি বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। এই বৃষ্টি সরণি বানিয়ে দুবাইয়ে ইউরোপের পরিবেশ নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা চেয়েছেন, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে কাঠফাটা রোদে দর্শনার্থীরা এখানে এসে যাতে ইউরোপীয় আবহ উপভোগ করতে পারেন। ওই হোটেলের এক মুখপাত্র বললেন, এখন তো এই রাস্তায় বছরজুড়ে বৃষ্টি ঝরছে, এক সময় তুষারপাতও হবে।
শর্ত সাপেক্ষে এ রাস্তা সবার জন্য উন্মুক্ত। সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এখন যে কেউ এই সড়কে গিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে পারেন। দুটি উপায়ে যাওয়া যায় এই জায়গাটিতে। কোর্ট দ্য আজুর মোনাকো হোটেলের অতিথি হয়ে, নয়তো এক দিনের জন্য ওই সড়কে গিয়ে বৃষ্টি উপভোগের টিকিট কিনে। টিকিটের জন্য গুনতে হবে ৩০০ দিরহাম বা ৮১ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি। টিকিট কেটেই নিজের গাড়ি বা বাসে চড়ে চলে যেতে পারবেন জায়গাটিতে এমনটি হবে না। এরজন্য আপনাকে বোট বা নৌকা নিয়ে যেতে হবে দ্বীপটিতে। তারজন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে বোট ভাড়া বাবদ গুনতে হবে আরও ৩০০ দিরহাম।
আপনার মতামত লিখুন :