বিপুল সম্ভাবনা নিয়ে ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার থেকে জার্মানির বাণিজ্যিক রাজধানী ফ্রাঙ্কফুর্টে শুরু হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হোম টেক্সটাইল পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হাইম-টেক্সটাইল মেলা ২০২৫। এ বছর ৬৫টি দেশের ৩,০০০-এর বেশি প্রদর্শক অংশগ্রহণ করেছে, যা এই মেলাকে টেক্সটাইল ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ভবিষ্যৎ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে। টেকসই ব্যবসায়িক সমাধান এবং উদ্ভাবনী ধারণা বিনিময়ের ক্ষেত্রে হাইম-টেক্সটাইল মেলা আন্তর্জাতিক শিল্পের আস্থা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবছরের মত এবারও বাংলাদেশ হাইম-টেক্সটাইল মেলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মোট ১৫টি কোম্পানি এই মেলায় অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে ৪টি কোম্পানি এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি) এর তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ দূতাবাস বার্লিন এর সার্বিক সহযোগিতায় মেলায় যোগ দিয়েছে। এই কোম্পানিগুলো হলো বিডি ক্রিয়েশন, মানুরি টেক্সটাইল মিলস, জানটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং দেবনায়ার ব্যাগ ও লাগেজ লিমিটেড। এছাড়াও, ১১টি কোম্পানি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স জনাব রাহাত বিন জামান এবং কমার্শিয়াল কাউন্সেলর চৌ. মো. গোলাম রাব্বী মেলায় উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নগুলো পরিদর্শন করেন। চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং তাদের কার্যক্রমের খোঁজ-খবর নেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা রয়েছে। এই ধরনের আন্তর্জাতিক মেলা আমাদের রপ্তানির সুযোগ এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে আরও বেশি বাংলাদেশি কোম্পানি এই প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করবে।”
মেলার প্রথম দিন ১৪ জানুয়ারি চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স এবং কমার্শিয়াল কাউন্সেলর ফ্রাঙ্কফুর্ট মেসে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেন। চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স বলেন, “হাইম-টেক্সটাইল মেলা বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল শিল্পের জন্য একটি আন্তর্জাতিক দরজা খুলে দিয়েছে। আমরা ফ্রাঙ্কফুর্ট মেসে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি ফলপ্রসূ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি আমাদের শিল্পের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।”
কমার্শিয়াল কাউন্সেলর চৌ. মো. গোলাম রাব্বী বলেন, “বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল শিল্পের বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা বাড়াতে হাইম-টেক্সটাইল মেলা অত্যন্ত সহায়ক। ভবিষ্যতে আমরা আরও বেশি কোম্পানিকে এই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। আমরা আগামী বছর থেকে আমাদের প্যাভিলিয়নগুলোর রং, নকশা এবং উপস্থাপনার ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণ করব, যা বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।”
হাইম-টেক্সটাইল মেলা ২০২৫ এর গুরুত্ব তুলে ধরে বলা যায়, এটি শুধুমাত্র প্রদর্শনী নয়, বরং এটি রিটেইল, শিল্প এবং কন্ট্রাক্ট ব্যবসার জন্য নতুন এবং টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি, মুদ্রাস্ফীতি, উচ্চ জ্বালানি মূল্য এবং কঠোর নিয়মাবলী ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ অবস্থায় উদ্ভাবনী এবং ভবিষ্যৎমুখী ব্যবসায়িক ধারণার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এই মেলায় আমাদের দেশের টেক্সটাইল শিল্পের সক্ষমতা প্রদর্শন এবং বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর একটি কার্যকর উদ্যোগ। এ ধরনের মেলায় নিয়মিত অংশগ্রহণ আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পরিচিতি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। মেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, পরবর্তী হাইম-টেক্সটাইল মেলা ২০২৬ সালে ১৩ থেকে ১৬ জানুয়ারি ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :