ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

জেদ্দায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার

মো. আবুল বশির, মধ্যপ্রাচ্য ব্যুরো

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২৫, ০১:৪০ পিএম

জেদ্দায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শিক্ষকের দায়িত্ব শুধু শিক্ষাদান করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মনোভাব ও আচরণ গঠন করাও তাদের মূল দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সুশিক্ষার মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিকাশের সুযোগ প্রদান এবং তাদের শিক্ষাজীবন নিরাপদ ও সুস্থ রাখা একটি নৈতিক কর্তব্য। কিন্তু যখন এ দায়িত্ব পালনে অবহেলা দেখা যায়, তখন তার পরিণতি কেমন হতে পারে?
সম্প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রতিষ্ঠিত জেদ্দা বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ স্কুলের ঘটনা আমাদের সামনে তুলে ধরেছে এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। শিক্ষার্থীদের দাবি, স্কুল থেকে ২০২৪ সালে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে নবম শ্রেণী থেকে পরীক্ষায় তেমন ভালো ফলাফল না করায় তাদেরকে স্কুলের কর্তাব্যাক্তিদের হটকারির সিধান্তের কারনে বোর্ড পরিক্ষায় অংশগ্রহন করতে দেওয়া হয় নাই। দিলে স্কুলের মান নষ্ট হবে এই যুক্তিতে কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে স্কুল থেকে O-Level পরীক্ষা দিতে দেয়া হয়নি কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল ওই ছাত্রছাত্রীরা প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে সফলতার সাথে কৃতকার্য হয়। অথচ এই শিক্ষার্থীরা যদি স্কুল থেকে রেগুলার ক্লাস করে পরীক্ষা দিতে পারতো তাহলে ফলাফল আরো ভালো হতো।

তবে প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষকদের কর্তব্য কি কেবল শিক্ষাদান করা, নাকি সেইসব শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা, যারা পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকে, যাতে তারা উন্নতি করতে পারে?এতে করে স্কুলের শিক্ষার্থীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিক তেমনি স্কুল ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর্থিকভাবে। এই ক্ষতির দায়ভার এখন অবশ্যই এসএমসি এবং প্রিন্সিপাল কে নিতে হবে।

এছাড়া, অভিভাবকরা মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি তাদের সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীলভাবে আচরণ করত এবং সঠিক উপদেশ ও সমর্থন দিত, তবে হয়তো এই পরিস্থিতি এতো খারাপ হতো না। শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু পরীক্ষার ফলাফলে সীমাবদ্ধ নয়; তাদের ভূমিকা একজন পরামর্শদাতা, দিশারী এবং সহায়ক হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সমর্থন ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে একজন দুর্বল শিক্ষার্থীকে কিভাবে শক্তিশালী ও দক্ষ করা যায়, এটি শিক্ষকের একান্ত দায়িত্ব।

প্রশ্ন উঠে, এসব বিষয় কেন অবহেলা করা হয়? বিশেষত, যখন আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখি, তখন এসব অনিয়ম কিভাবে সমর্থন পায়? এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান কেন নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে স্কুল পরিচালনা পরিষদ এবং স্কুলের অধ্যক্ষ তাদের নিজেদের এক ঘেয়ামি চিন্তা চেতনায় শিক্ষার্থিদের অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে যাচ্ছে এর দায় দায়িত্ব কে নিবে? জাতি জানতে চায়। আপনারা জানেন সৌদি আরবে বাচ্চাদের বয়স ১৮ হলে তাদের নিজের দেশে বা অন্য দেশে পাঠিয়ে দিতে হয়, বিশেষ করে ছেলেদের বেলায়, অতএব বাচ্চাদের একটি বছর নষ্ট করার অধিকার আপনাদের নেই যেখানে আপনারা বাচ্চাদের সাপোর্ট দিবেন তা না করে আপনারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। এই অধিকার কে দিয়েছে? একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব শুধু ছাত্রদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা নয়, বরং তাদের শিখন প্রক্রিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং তাদের মনোভাব ও দক্ষতা উন্নয়নেও সহায়ক হওয়া। তবে এই ঘটনার পর, সবার সামনে বড় প্রশ্ন দাঁড়িয়ে থাকে-জেদ্দা বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রতি এই অবিচার মেনে নেবো নাকি প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরো সচেতন হবে? এটাই সময়, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের। অবহেলা নয়, সঠিক সমর্থন ও সুশিক্ষা যেন সকল শিক্ষার্থীর অধিকার হয়ে উঠে—এই হোক আমাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্য।
অভিভাবগণের অভিযোগ যে তাদের ঘাম জুটানো পরিশ্রমের টাকা দিয়ে সন্তানদের মানুষ করার জন্য এবং নিজের দেশের পতাকা বাহি স্কুলটিতে পড়ানোর মাধ্যমে তাদের সন্তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এই স্কুলে ভর্তি করেন অভিভাবকেরা, কিন্তু দেখা গেছে যে আজ কিছু দুর্বল শিক্ষার্থীকে স্কুল পরিচালনা পরিষদ এবং স্কুলের প্রিন্সিপাল তাদের নিজেদের এক ঘেয়ামি চিন্তা চেতনায় শিক্ষার্থিদের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে এর দায় দায়িত্ব কে নিবে? 

অভিভাবগণের একটাই দাবি থাকবে দূতাবাস এবং কনস্যুলেটর প্রতি আপনারা বিশেষ করে স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে যাদেরকে মনোনীত করবেন কারোর ছাপের মধ্যে না থেকে সঠিক ভাবেই যাচই করেই তাদের নিবন্ধন দিবেন তা হলে আমরা পাবো ভালো একটি স্কুল পরিচালনা কমিটি। অভিভাবকেরা মনে করছেন শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। স্কুলের ফলাফল পর্যালোচনা করলে অভিভাবকদের উদ্বেগ বুঝতে পারা যায়। বর্তমান এসএমসি একজন নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন যে অধ্যক্ষ অভিভাবকদের সাথে ভালো আচরণ করেন না। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়েছে স্কুলের শৃঙ্খলাও।

এমতাবস্থায় একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ হলে এই শিক্ষাঙ্গনটি তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে অভিভাবকরা মনে করেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!