শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


এস এম শাফায়েত, ইউএই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের কর্মজীবন ও চ্যালেঞ্জ

এস এম শাফায়েত, ইউএই

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০২:১৯ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের কর্মজীবন ও চ্যালেঞ্জ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত প্রবাসী আয়ের পেছনে রয়েছে প্রায় এক কোটি প্রবাসীর ত্যাগ ও শ্রম। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসী শ্রমিকদের অবস্থান শুধুমাত্র দেশের অর্থনীতির জন্য নয়, তাদের নিজ নিজ পরিবারের জন্যও এক অপরিহার্য সাপোর্ট সিস্টেম।

দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে কিংবা একটি উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে হাজারো বাংলাদেশি প্রতিদিন পাড়ি জমাচ্ছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত এবং ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।

তবে এই যাত্রাপথ সহজ নয়। প্রবাস জীবনের প্রতিটি ধাপেই লুকিয়ে থাকে নানা চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা। তীব্র গরমের মধ্যে শারীরিক পরিশ্রম, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং অনেক ক্ষেত্রে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের মতো সমস্যাগুলো তাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। এর পাশাপাশি প্রবাসী মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান হার তাদের জীবনের অনিশ্চয়তার করুণ চিত্র তুলে ধরে।

মূলত ১৯৭০-এর দশকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তেলের অর্থনীতি সমৃদ্ধ বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কাতার, ওমান, কুয়েত, এবং বাহরাইনে কর্মরত। সৌদি আরবে বর্তমানে প্রায় ৫৩ লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন, যা এই অঞ্চলে বাংলাদেশি কর্মীদের সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১৫ লাখ, কাতারে ১০ লাখের বেশি, এবং কুয়েত ও ওমানে যথাক্রমে ৭ লাখ ও ৬ লাখ প্রবাসী কাজ করছেন।

বাংলাদেশি কর্মীরা মূলত নির্মাণ শ্রমিক, গৃহস্থালি কর্মী, পরিবহন খাতের চালক, দোকানের বিক্রয়কর্মী এবং কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। অনেকেই সামান্য মজুরিতে কঠিন পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেন। বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিকরা তীব্র গরমে শারীরিক শ্রম দেন, যা তাদের স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীকর্মীরা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়-

কঠোর আবহাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রম

মধ্যপ্রাচ্যের তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ৫০-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই পরিবেশে কাজ করাটা অত্যন্ত কষ্টকর। দীর্ঘ সময় রোদে কাজ করার ফলে তাপজনিত অসুস্থতা, যেমন হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতা, সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও নিম্ন মজুরি

অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির কারণ হয়। তুলনামূলক কম মজুরি পাওয়ায় অনেকেই প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে হিমশিম খান।

আইনি জটিলতা ও শ্রম অধিকার

ভিসা সমস্যাসহ অনেক সময় প্রবাসীদের কর্মস্থল থেকে বেতন আটকে দেওয়া বা অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করার ঘটনা ঘটে। এসব ক্ষেত্রে তাদের আইনগত সহায়তা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক চাপ

পরিবার থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকার ফলে প্রবাসীরা একাকীত্ব ও মানসিক চাপে ভোগেন। অনেকের ক্ষেত্রেই পরিবারে সন্তানদের বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অনুপস্থিত থাকা মানসিক যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।

স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তার অভাব

অনেক কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা বা সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা থাকে না। ফলে দুর্ঘটনা বা অসুস্থতায় অনেকেই মারা যান। তবে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়নের ফলে উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। ফলে স্বাস্থ্যসেবায় বেশ খানিকটা ঝুঁকিমুক্ত প্রবাসীরা এটা বলতেই হবে। সেক্ষেত্রে ওই কর্মী নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এবং তাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিমা করা আছে কী না সেটা জরুরি।

প্রবাসী মৃত্যুর পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের মৃত্যুর হার একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ৪ হাজার ৫৫২ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে আনা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এর মধ্যে অধিকাংশই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতার থেকে পাঠানো হয়েছে। ১৯৯৩ সাল-২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ৫৬,৭৬৯ প্রবাসী শ্রমিকের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে।

বাংলাদেশি প্রবাসীরা প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ। এই সংখ্যা বাড়তে পারে আরও। তারজন্য প্রয়োজন সরকারি উদ্যোগে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আরও দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি। প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে।

মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবন চ্যালেঞ্জে ভরা হলেও তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে। তাদের জীবনমান উন্নত করা, কর্মক্ষেত্র নিরাপদ করা এবং প্রবাসী মৃত্যুহার কমানোর জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রবাসীরা দেশ ও পরিবারের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করছেন, তা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

তারচেয়ে বড় দায়িত্ব, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ও বৈদেশিক শ্রমবাজারে নিজেদেরকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে প্রয়োজন শিক্ষিত জনবল। উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবকরা প্রবাসমুখী হলে বদলে যাবে শ্রমবাজারে বাংলাদেশের অবস্থান। শ্রমিক থেকে আমরা হয়ে উঠবো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এসব নিয়ে আগামী পাতায় লিখব। আজ এ পর্যন্তই।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!