ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

প্রবাসীর হৃদয়ে সংগ্রামের গল্প

প্রবাস ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০২:৫৬ পিএম

প্রবাসীর হৃদয়ে সংগ্রামের গল্প

ছবি: সংগৃহীত

প্রবাসজীবন মানেই নানা রকম সংগ্রামের গল্প। যেখানে নিজের পরিচয় এবং পেশাগত স্থিতি বজায় রাখার লড়াই করতে হয় প্রতিটি মুহূর্তে। তবে, সব সংগ্রামেই থাকে একধরনের শক্তি, যা মানুষের আত্মবিশ্বাস ও জীবনের লক্ষ্যকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। মরুর দেশ সৌদি আরব থেকে এমনই একটি গল্প দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের কাছে শেয়ার করেছেন সৌদিপ্রবাসী সুজন আহমেদ।

‘যদি আমার প্রবাস জীবনের শুরুটা বলি, তখন পড়াশোনা শেষ করে অতি সামান্য বেতনের চাকরি করে জীবনের সঙ্গে পেরে উঠছিলাম না। তাই সিদ্ধান্ত নিই, বিদেশে আসব। এক পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে সৌদিতে আসার সব প্রস্তুতি নেই।

রেস্টুরেন্টে চাকরি, আর যাই হোক, বাংলাদেশের মতো কাঠফাটা পরিশ্রম থেকে তো রেহাই পাওয়া যাবে! এই ভেবে যখন ঋণ করে টাকা জমিয়ে সৌদিতে আসি, এসেই পড়ে গেলাম গোলকধাঁধায়! দেখি কি, যে রেস্টুরেন্টে আমার চাকরি হওয়ার কথা, সে রেস্টুরেন্টের বিল্ডিং এখনো তৈরিই হয়নি। তারপর আমিসহ বাকি কর্মীদের একটা রুমে রাখা হলো।

তিনবেলা কোনোরকম বেঁচে থাকার মতো খাবার দিত। টাকা-পয়সা ছিল না, রুমবন্দি হয়ে কাটাতে হয়েছে প্রথম কয়েক মাস। আমাদের দিয়ে সেই বিল্ডিংয়ের কনস্ট্রাকশন কাজ করিয়েছে। এসব কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না, নিচতলা থেকে ঢালাই করার জন্য বালু উপরে উঠাতে গিয়ে বালুভর্তি বালতি মাথায় লেগে রক্ত বের হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকে। তারপর সবার প্রচেষ্টায় কয়েক মাস পর রেস্টুরেন্ট চালু হয়। সে কয়েক মাস আমি কোনো টাকার মুখ দেখিনি। বিনা পয়সায় কাজ করে গেছি অন্যদের জন্য। তারপর রেস্টুরেন্টের কাজ শুরু হলো, মাস শেষ হয়, কিন্তু মালিক বেতন ঠিকঠাক মতো দেয়নি।

অসহ্য যন্ত্রণায় ভুগছিলাম। মনকে মানিয়ে নিলেও শরীর মানছিল না। তারপরও কাজ চালিয়ে গেছি। ১৪-১৮ ঘণ্টা দৈনিক ডিউটি করছি। কিন্তু ভাগ্য খারাপ, মালিক ভালো ছিল না। টাকা রাখতে পারেনি! এভাবে দীর্ঘ ৯ মাস কাজ করার পর ওই রেস্টুরেন্ট অভিযানে এসে হুকুমা, মানে এদেশের সরকার রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেয়। শুরু হলো দ্বিতীয় সংগ্রাম। তখন কপালে ডালভাতও জুটেনি, শুধু রুটি খেয়ে পার করেছি।

মালিক আমাদেরকে একটা রুমে রেখে চলে গিয়েছিলেন। সে রুমের ভাড়াও পে করেনি! বাড়িওয়ালা এসে আমাদের মালপত্র সব রাস্তায় ফেলে দেয়, রুম থেকে বের করে দেয়! বেতনের অপেক্ষায় এক মাস আমরা মালিকের হাতে পা ধরে বসে ছিলাম, তবুও ওই কফিল বা মালিক আমাদের খোঁজ নেয়নি। খাবারের টাকা দেয়নি, বেতন তো দেয়ইনি, এমনকি ফোন দিলেও ধরেনি! এত টাকা খরচ করে বিদেশে এসেছি, তাই বাড়ি থেকে টাকাও চাইতে পারিনি।

সেসময় অবস্থা এমন ছিল যে কোথাও বের হয়ে কিছু একটা করব, সে গাড়ি ভাড়ার টাকাও ছিল না। তারপর বাংলাদেশে থাকা আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে ধার করে টাকা এনে আমি ওখান থেকে অন্য জায়গায় আসলাম। অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে মকতব আমলে মালিকের নামে মামলা করলাম। মামলার ডেট একেক করে পিছিয়ে আসে।

এই দেশে নিয়ম হলো, কফিল যদি অনুমতি না দেয়, কেউ অন্য জায়গায় যেতে পারে না! মালিক আমাদেরকে খরচ দেয়নি, আবার অনুমতি পত্রও দেয়নি! কিন্তু একটা সময় পর আদালতের মাধ্যমে ওখান থেকে বের হতে সক্ষম হই এবং আমার এক ভাইয়ের মাধ্যমে বর্তমানে যে কাজে আছি, ওই কাজের সন্ধান পাই। আলহামদুলিল্লাহ, এখন বেশ ভালো আছি।

প্রবাসে যারা আসবে, তাদের সতর্কতা অবলম্বন করার অনুরোধ করছি। দালাল চক্র তো না-ই, যদি কাছের মানুষ দিয়েও বিদেশে আসার ইচ্ছে থাকে, তাহলেও সবকিছু ঠিকঠাক জেনে, ভাষাগতভাবে নিজেকে উন্নত করে বিদেশে আসা উচিত।’

অনুলিখন: আরফান হোসাইন রাফি

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!