গ্রিসপ্রবাসী মোহাম্মদ নুর মিয়া। সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে। তার মৃতদেহ প্রায় ১০ দিন পড়েছিল হাসপাতালের মর্গে। কারণ তার লাশ দেশে পাঠাতে লাগবে ১ হাজার ২শ’ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় দেড় লাখ, কিন্তু তা বহন করতে পারবে না বলে জানিয়েছে দেশে থাকা তার পরিবার। অবশেষে আঞ্চলিক কমিউনিটির লোকজন দোকানে দোকানে গিয়ে চাঁদা তুলে মরদেহটি দেশে পাঠান। এভাবেই মৃত্যুর পরও নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় প্রবাসীদের।
প্রবাসীদের বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন প্রবাসীরা। কিন্তু সেই প্রবাসী মারা গেলে যেন তার থাকে না কোনো মূল্য। হয়ে যান অবহেলার পাত্র। প্রবাসীর লাশ দেশে প্রেরণের অর্থাভাবে অনেকের লাশ মর্গে পড়ে থাকে মাসের পর মাস।
কমিউনিটি নেতৃবৃন্দরা জানান, গ্রিস থেকে লাশ দেশে পাঠাতে পরিবহন খরচ ছাড়াই হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার খরচ আসে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা। যা বহন করতে পারেন না প্রবাসীর স্বজনরা। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে শুধু পরিবহন খরচ বহন করা হয়। হাসপাতাল মর্গের খরচসহ সব প্রক্রিয়ার খরচ বহন করে বাংলাদেশ কমিউনিটি, যা চাঁদায় সংগ্রহ করা হয়। এভাবেই সর্বশেষ ৭ বছরে গ্রিস থেকে মৃত্যুবরণকারী প্রায় আড়াই শতাধিক প্রবাসীর লাশ, প্রবাসীদের উত্তোলিত চাঁদার টাকায় বাংলাদেশে পাঠানোর সব প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানান, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সাবেক সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ।
তিনি বলেন- ‘যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখানে মারা যায় তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কমিউনিটি ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে লাশ দেশে পাঠানোর জন্য আকুতি মিনতি জানানো হয়। কেউ মারা গেলে তাদের পরিবার যোগাযোগ না করলেও আমরা আমাদের দায়িত্ব মনে করে দ্রুত লাশটি দেশে পাঠানোর চেষ্টা করি। তবে আমাদের কোনো ফান্ড না থাকায় টাকা সংগ্রহ করতে কিছু সময় লাগে। কারণ এথেন্সে কেউ মারা গেলে দূতাবাস থেকে টিকিট দেওয়ার পরও বাংলাদেশের টাকা প্রায় ১ লাখ থেকে দেড় লাখের মতো খরচ হয়।
তবে কোনো প্রবাসী যদি এথেন্সের বাইরে বা তুরস্ক সীমান্তে মারা যায় তখন আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ টাকার মতোও প্রয়োজন হয়। তবে খুব কম প্রবাসীর পরিবারই তাদের নিজ খরচে লাশ দেশে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের উদ্যোগে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করে লাশগুলো দেশে পাঠাতে সহায়তা করে।’
এদিকে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এইচ এম জাহিদ ইসলাম জানান, আমরা প্রবাস থেকে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি, তাই আমাদের দাবি সরকারিভাবে লাশ দেশে নিতে উদ্যোগ নেওয়া হোক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- রেমিট্যান্স যোদ্ধারা সারাজীবন দেশের জন্যই রেমিট্যান্স পাঠান। তাই সরকারের উচিত সব প্রবাসীর লাশ যাতে সরকারি খরচে দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। এমন দাবি সব প্রবাসীদের।
লেখক: গ্রিস (এথেন্স) প্রতিনিধি
আপনার মতামত লিখুন :