ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মৌনতায় মুগ্ধতা

ফরহাদ হুসাইন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে মৌনতায় মুগ্ধতা

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক বইমেলা উপলক্ষে কলকাতায় এসে পৌঁছলাম তখন খানিকটা রাত। এটা কলকাতার ৪৬তম বইমেলা। সাতক্ষীরা থেকে জানের জিগার দোস্ত আব্দুল্লাহ হাজির হলো। তার জন্য আগেই মারকুইস স্ট্রিটের হোটেলটিতে লার্জ কিং সাইজ রুম নিয়ে রেখেছিলাম।

রাতে গল্প আড্ডা সেরে ঘুমানোর আগে প্ল্যান করলাম দিনভর টইটই করে কলকাতা শহর ঘুরব, সন্ধায় আড্ডা দিব বইমেলায়। যেই কথা সেই কাজ, শীত এখনো ছেড়ে যায়নি, ফলে চমৎকার আবহাওয়ার সকালে যাত্রা শুরু করলাম। প্রথমে ঘুরে ঘুরে দেখলাম কলকাতার বিখ্যাত সেন্টপলস ক্যাথিড্রাল গির্জা। বিশাল আয়তনজুড়ে বড় বড় গাছের বাগান পেরিয়ে শুভ্র সুন্দর নিরিবিলি গির্জাটি। এরপর কুইন্স ওয়ে ড্যান্সিং ফাউন্টেন, বিড়লা তারামণ্ডল, তারপর একাডেমি অব ফাইন আর্টস, রবীন্দ্র সদন ঘুরে পৌঁছলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে।

জানা যায়, রানী ভিক্টোরিয়াকে ভারতসম্রাজ্ঞী উপাধি দেওয়া হয়েছিল। স্মৃতিসৌধটি পুরোটা শ্বেত পাথরের তৈরি। এটি মূলত একটি জাদুঘর এবং কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত। ইন্দো-সারাসেনিক শৈলীর সঙ্গে মুঘল উপাদান যুক্ত করে মূল স্মৃতিসৌধের নকশা। স্মৃতিসোধ ভবনের উত্তর এবং দক্ষিণ দু-দিকেই বিশাল ফটক। উত্তর ফটক থেকে ভবন পর্যন্ত চওড়া রাস্তার দু’দিকে দুইটি জলাধার একাধারে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং সঙ্গে সঙ্গে মনোরম শোভাবর্ধন করে। সরেজমিনে দেখে আমার তাই মনে হলো যে, কথা না বললেই নয়।

মনোরম উদ্যান পরিবেষ্টিত বড় বড় গাছের কাণ্ডের খোপে খোপে, সবুজ, নীল ঘাসের ওপর অসংখ্য প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিচরণ যে কারো অতীতের প্রেম, ভালোবাসা সরিয়ে দিয়ে ক্ষণিক কাঁদাবে বা হাসাবে। ভিক্টোরিয়ার নুড়ি বেছানো পথে হাঁটতে হাঁটতে হাতে হাত রেখে আগামী জীবনের গল্প লিখবে ভেবে প্রেমিক-প্রেমিকা ছুটে চলছে, কি হাসি, কি মায়া, ঠোঁটে লাল, নীল কত রং। সূর্য ঢলে পড়েছে, হোটেলে ফিরে বইমেলার জন্য তৈরি হতে হবে।

পোশাকে কবি কবি ভাব নিয়ে শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনে হাজির হলাম, সোজা সল্ট লেকে নেমে বইমেলায় হাজির। সেখানে কলম একাডেমির কয়েকজন কবি আমাদের স্বাগত জানালেন। মূলত ১৯৭৬ সালে কলকাতা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার ‘গিল্ডের’ উদ্যোগে বইয়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বইমেলা  শুরু হয়। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার এবার ৪৬তম আসর। ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ৮ শতাধিক স্টল সমৃদ্ধ  এই মেলায় অন্তত ২০ দেশ অংশগ্রহণ করেছেন। এ বছরের ফোকাল থিম দেশ স্পেন। এটি কলকাতার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণ, সেন্ট্রাল পার্ক মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো থেকে সরাসরি অংশগ্রহণ রয়েছে এবারের মেলায়।

বাংলাদেশ, জাপান, ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কিউবা এবং অন্যান্য ল্যাটিন আমেরিকান দেশ ছাড়াও কেরালা, গুজরাট, ওড়িশা, ত্রিপুরা, বিহার, তামিলনাড়ু দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য রাজ্যের প্রকাশকরা বার্ষিক বইমেলায় অংশ নিয়েছে। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে থাইল্যান্ড। অন্তত ২৩ লাখ দর্শনার্থী ইতোমধ্যে এই মেলা ভ্রমণ করেছেন। মেলায় লিটল ম্যাগাজিন আমাদের কাছে ছিল মূল আকর্ষণ। সকালে কলেজ স্ট্রিটে আমার কাব্য গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান। তাই ফিরতে হবে, ফলে মেট্রো স্টেশনের দিকে পা বাড়ালাম।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!