শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নাইমুর রহমান শান্ত, বাহরাইন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম

বাহরাইনে রাষ্ট্রদূত

ভাষা ও সংস্কৃতি শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত রাখার দায়িত্ব আমাদেরই

নাইমুর রহমান শান্ত, বাহরাইন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম

ভাষা ও সংস্কৃতি শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত রাখার দায়িত্ব আমাদেরই

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

"একুশ মানে মাথা নত না করা, একুশ মানে আত্মমর্যাদা আর ভাষার অধিকার। সেই চেতনাই আজ সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। প্রবাসে থেকেও মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে হবে,"-এমনই উদাত্ত আহ্বান জানালেন বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মো. রইস হাসান সরওয়ার, এনডিসি।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বাহরাইনে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদা ও গভীর ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫। ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় এই বিশেষ দিনটি।

স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন রাষ্ট্রদূত মো. রইস হাসান সরওয়ার। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক, স্থানীয় সাংবাদিক ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই সময়ে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

একুশের চেতনায় উদ্ভাসিত এই অনুষ্ঠানে ছিল পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, আনুষ্ঠানিক বাণী পাঠ এবং ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা। প্রধান উপদেষ্টার বাণী পাঠ করেন দূতালয় প্রধান এ কে এম মহিউদ্দিন কায়েস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব ইলিয়াছুর রহমান।

আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত মো. রইস হাসান সরওয়ার বলেন, "একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় চেতনার মাইলফলক। ১৯৫২ সালে আমাদের বীর সন্তানরা মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি বিশ্ববাসীও দিয়েছে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির মাধ্যমে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে-এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।"

তিনি আরও বলেন, "এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য‍‍` (Make languages count for sustainable development) অত্যন্ত সময়োপযোগী। আমাদের মাতৃভাষার পাশাপাশি বহুভাষা শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের সন্তানদের ইংরেজি, ফ্রেঞ্চসহ নানা আন্তর্জাতিক ভাষা শেখানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, এই বহুভাষা শিক্ষার মধ্যেও যেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি সবসময় অগ্রাধিকার পায়। আমাদের শিকড় ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মাতৃভাষার চর্চা ও প্রসার ঘটাতে হবে।"

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, "বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত বহু ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। সেই ভাষার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ইতিহাস ও পরিচয়। এমন দুর্ভাগ্য যেন বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে না ঘটে, সে জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমাদের সন্তানদের বিশ্বমুখী শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।"

রাষ্ট্রদূত বাহরাইনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাহরাইনের আইন ও সংস্কৃতি যথাযথভাবে মেনে চলার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাহরাইন বাংলাদেশ স্কুলের শিক্ষার্থীরা একুশের চেতনার গান, কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশন করেন। শিশুদের কণ্ঠে একুশের গান আর আবৃত্তিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তাদের মুগ্ধকর পরিবেশনা উপস্থিত দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

রাষ্ট্রদূত রইস হাসান সরওয়ার শিক্ষার্থীদের এই প্রাণবন্ত অংশগ্রহণের প্রশংসা করেন এবং তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। তিনি বলেন, "এই শিশু-কিশোররাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের মাঝে মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে হবে। একুশের চেতনায় বড় হয়ে তারা একদিন বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।"

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত, বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

এই আয়োজনে বাহরাইনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, কর্মচারীগণ, প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

বাহরাইনে বাংলাদেশের দূতাবাসের এই আয়োজন প্রমাণ করে, প্রবাসে থেকেও বাঙালির হৃদয়ে একুশের চেতনা গভীরভাবে প্রোথিত। মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের এক সুতায় গাঁথে।

ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের যে দায়িত্ব দিয়ে গেছে, তা শুধু ২১ ফেব্রুয়ারিতে সীমাবদ্ধ নয়। নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং প্রবাসে নতুন প্রজন্মের কাছে সেই ঐতিহ্য তুলে ধরা আমাদের প্রতিদিনের দায়িত্ব। সেই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, যেন একুশের আলো প্রবাসেও চিরকাল প্রজ্বলিত থাকে।

আরবি/জেডআর

Link copied!