আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রজত জয়ন্তী পালন করছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো। ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো প্যারিসে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য আয়োজন।
প্রথম দিন ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার মাতৃভাষা সংরক্ষণ এবং প্রসারে দীর্ঘ দিন কাজ করে আসা ভাষা বিশেষজ্ঞ ও ভাষাবিদদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় শান্তির জন্য বহুভাষার পদ্ধতি, জরুরি পরিস্থিতিতে বহুভাষার শিক্ষা এবং বহুভাষিক শিক্ষা, প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।
[35322]
একইদিনে ইউনেস্কো বিগত ২৫ বছরে দিবসটি পালনের উপর বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করে। এসময় ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীদের মাতৃভাষা-ভিত্তিক শিক্ষা প্রদানের উপর গুরুত্ব কথা বলেন তারা।
এবারের রজত জয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে ইউনেস্কো প্রথমবারের মত মন্ত্রী-পর্যায়ের আলোচনার আয়োজন করে। এই আলোচনায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১২ জন মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
২১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে গেস্ট অব অনার হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন- একজন মানুষের পরিচয়ের মূল ভিত্তি তার মাতৃভাষা। সকলকেই তাদের মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝতে হবে। না হলে `থ্রি জিরো থিওরি` এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা সম্ভব হবে না, কারণ এগুলি কেউ বাদ দিয়ে বাস্তবায়ন করা যাবে না।"অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভাষাবিদ, ভাষা বিশেষজ্ঞ এবং মন্ত্রীপরিষদের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী।
তিনি বলেন-বায়ান্ন এবং ছব্বিশ হাতে হাত ধরে চলছে। উপস্থিত ছিলেন, রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে নিযুক্ত স্থায়ী সদস্য খন্দকার এম. তালহা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাফিজা সাইমা।
[35255]
১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো সাধারণ সম্মেলন ফেব্রুয়ারি ২১ তারিখকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে ইউনেস্কো এই দিনটি বিশ্বব্যাপী পালন করে আসছে, এবং বাংলাদেশও এটি দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে পালন করে আসছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ দূতাবাস প্যারিসে ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ডের ২১৯তম অধিবেশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রৌপ্য জয়ন্তী উদযাপন করার প্রস্তাব উত্থাপন করে। এটি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এই ঐতিহাসিক প্রস্তাবটি ৬৬টি ইউনেস্কো সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন লাভ করে।
এর ফলে, প্রথমবারের মতো ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দুই দিনব্যাপী উদযাপন করলো, যেখানে বাংলাদেশ তার স্থায়ী সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য।