আঠারো লক্ষ মালয়েশিয়া প্রবাসীদের তথ্য পাচার, হয়রানি নির্যাতন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় শেখ পরিবারের প্রতিষ্ঠান ইএসকেএলের কার্যক্রম বদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, মালয়েশিয়া শাখা।
একই সঙ্গে ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর ও পররাষ্ট্র সচিব জসীমউদ্দীনের পদত্যাগের দাবিও করেছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মালয়েশিয়া প্রবাসী আল মামুন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় লাখ লাখ বাংলাদেশী প্রবাসী কর্মীদের শেখ পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট মালয়েশিয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইএসকেএলের তথ্য পাচার ও জালিয়াতির ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, মালেশিয়া শাখা।’
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ্য করা হয়, দৈনিক আমার দেশ-এর ২৬/০২/২০২৫ইং তারিখের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, লাখ লাখ মালয়েশিয়া প্রবাসীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ড.ইউনূস নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার গত ডিসেম্বরে কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।
‘কিন্তু তাবিথ আওয়াল প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আবারও অনুমতি দেওয়া হয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযুক্ত এবং ১৫ লক্ষ মালয়েশিয়া প্রবাসীর ব্যক্তিগত তথ্য পাচারে জড়িত কোম্পানিটিকে। প্রতিষ্ঠানটি শেখ পরিবারের জালিয়াতি ব্যবসা রক্ষার নতুন কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে,’ বলেন পরিষদের আল মামুন।
লিখিত বক্তব্য বলা হয়, ‘ওই নিউজে আরও উল্লেখ আছে যে, একজন রহস্যময় আমেরিকান নাগরিক “তাবিথ আওয়াল” এই কার্যক্রমে সরাসরি জড়িত। কোম্পানিটির মালিকানায় তাবিথ আওয়াল, শেখ পরিবারের লোকজন, নুরে আমল, নিক্সন চৌধুরী, শেখ রেহেনা। এছাড়া, আমাদের তথ্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর, পররাষ্ট্র সচিব জসীমউদ্দীন, গিয়াস উদ্দিন এই দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে সরাসরি যুক্ত।’
‘লাখ লাখ মালেয়েশিয়া বাংলাদেশী প্রবাসী কর্মীরা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি যে, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণাধীন ইএসকেএল থেকে কোনো সেবা গ্রহণে আমরা সম্পূর্ণ অনিচ্ছুক। এই প্রতিষ্ঠান আমাদের পাসপোর্ট সেবার নামে তথ্য পাচার ও জালিয়াতির মাধ্যমে আমাদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তাকে বিপন্ন করছে।’
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, ‘আমরা দাবি করছি, ইএসকেএলের কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পূর্ণ বন্ধ করা হোক এবং এর সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ব্যক্তিদের, যার মধ্যে রহস্যময় আমেরিকান নাগরিক তাবিথ আওয়াল এবং উল্লেখিত হাইকমিশনের কর্মকর্তারা রয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার ও তদন্তের আওতায় আনা হোক।’
‘পাসপোর্ট সেবা একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় এবং আমরা চাই অন্যান্য সকল দেশের মতন শুধুমাত্র বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সরাসরি প্রদান করা হোক, কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই। প্রয়োজনে হাইকমিশনে জনবল বাড়িয়ে সেবার মান উন্নত করতে আমরা অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ দিতে প্রস্তুত, কিন্তু আমাদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে’, বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার তীব্র নিন্দা জানায় অধিকার পরিষদ। একই সঙ্গে চার দফা দাবিও উত্থাপন করা হয়।
এগুলো হলো-
১/ ইএসকেএলের কার্যক্রম অবিলম্বে চিরতরে বন্ধ করা।
২/ তাবিথ আওয়াল, খোরশেদ আলম খাস্তগীর, জসীমউদ্দীন ও গিয়াস উদ্দিনসহ জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা।
৩/ মালয়েশিয়া হাইকমিশনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও নিরাপদ পাসপোর্ট সেবা নিশ্চিত করা।
৪/ মালয়েশিয়া হাইকমিশনে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ করে সেবার মান বাড়ানো।
পরিষদের আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশী প্রবাসীদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা ঐক্যবদ্ধ। শেখ পরিবারের এই জালিয়াতি ও তথ্য পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মো: শাহাব উদ্দীন শিহাব, কেন্দ্রীয় মানব পাচার প্রতিরোধ ও পূর্ণবাসন সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, লিমন খান, কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন সহ সম্পাদক, মো. ইমরান, কেন্দ্রীয় গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা বিষয়ক সহ সম্পাদক, শহীদ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ, কুয়ালালামপুর মহানগর মালয়েশিয়া শাখা সহ আরো অনেকে।