বাহরাইন বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক

নাইমুর রহমান শান্ত, বাহরাইন

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

বাহরাইন বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাহরাইন বিএনপির নবগঠিত ১৫১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক ও অসন্তোষ। কমিটির কয়েকজন নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সেই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে কমিটি গঠনে অনিয়ম ও পক্ষপাতের।

কমিটির সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এরশাদ মোস্তফা এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "বিগত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার শাসনামলে যারা বাহরাইনের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে, তাদের সঙ্গে রাজনীতি করা সম্ভব নয়।

আমি শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। তাই আহমেদ আলী মুকিব যে বিতর্কিত পকেট কমিটি দিয়েছেন, তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।"

কমিটির সহ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সরকারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, "আওয়ামী দালালবাজ কমিটি থেকে আমার পদ প্রত্যাহার করলাম।

আহমেদ আলী মুকিবের দেওয়া এই দালালবাজ কমিটির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।"

এছাড়া কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মাসুদ আলম ফেসবুকে লেখেন, "বাহরাইন কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রহসনের কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য পদ থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করছি।

অযোগ্য সাংগঠনিক সমন্বয়ক এবং অশিক্ষিত ব্যক্তির নেতৃত্বে দল কখনোই এগোতে পারে না। ঘৃণাভরে চাপিয়ে দেওয়া এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করছি।"

তিনি আরও জানান, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আর্থিক দেন-দরবারের বিষয়টি প্রকাশ করা হবে এবং নৈতিক স্খলনের দায়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমেদ আলী মুকিবের পদত্যাগ দাবি করছি।

নতুন কমিটি গঠনের পর থেকেই বাহরাইন বিএনপির একাংশের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে কমিটিকে ‍‍`বাণিজ্যের ফসল‍‍` বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি এই কমিটিকে ‍‍`আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থিত‍‍` বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন।

তবে এর আগে ১৬ নভেম্বর ২০২৪, বাহরাইন বিএনপির সকল ইউনিটের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও মধ্যপ্রাচ্য বিএনপির সমন্বয়ক আহমেদ আলী মুকিবের আহ্বানে গালফ গেট হোটেলে এক সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বাহরাইনের সকল ইউনিটের নেতৃবৃন্দ দলের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছান।

তারা সিদ্ধান্ত নেন, নতুন কমিটিতে যেকোনো পদে যে নামই ঘোষণা করা হোক না কেন, সবাই সর্বসম্মতিক্রমে মেনে নেবে এবং একই প্ল্যাটফর্মে থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। সভার এই সিদ্ধান্ত সকলের স্বাক্ষরিত রেজুলেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।

১৬-১১-২০২৪ এ মতবিনিময় সভার ছবি।

এ বিষয়ে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, "এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এত বড় সংগঠনের কমিটি দীর্ঘদিন পর ঘোষণা করা হয়েছে, এ নিয়ে কিছু আলোচনা হবেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বাহরাইন বিএনপিকে মধ্যপ্রাচ্যের মডেল সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এখন পর্যন্ত আমি অফিসিয়ালি কারও কোনো পদত্যাগপত্র পাইনি।

যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব লিখছেন, তারা আদৌ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কি না, সে বিষয়েও সন্দেহ আছে। কারণ আমাদের কমিটি নিয়ে বেশিরভাগ নেতাকর্মী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদের সভাপতি ফয়সাল মাহমুদ ভাই শিগগিরই বাহরাইনে আসবেন। উনি আসলে আমরা সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে সব মতবিরোধ নিরসনের চেষ্টা করব। ঐক্যবদ্ধভাবেই আমরা সবাই মিলে বাহরাইন বিএনপিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে কাজ করব।"

নতুন কমিটি নিয়ে দলের ভেতরে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তবে এক পক্ষের পদত্যাগ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসন্তোষের প্রকাশ, অন্যদিকে নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান। এই দুই অবস্থান বাহরাইন বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।

আরবি/জেডআর

Link copied!