দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের কাছে ইউরোপ এক স্বপ্নের নাম। সামান্য সুযোগ পেলেই তারা ছুঁয়ে দেখতে চায় স্বপ্নের দেশগুলোকে। প্রয়োজনে তারা খরচ করতে প্রস্তুত প্রায় আঠারো থেকে বিশ লাখ টাকা! এখানেই শেষ নয়, ইউরোপ পৌঁছাতে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দেয় বিরূপ আবহাওয়ায় উত্তাল সাগর।
মাসের পর মাস যাত্রা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো একটি দেশে পৌঁছাতে অপেক্ষায় থাকে তাদের তৃষ্ণার্ত হৃদয়। তবুও কী বেলা শেষে পৌঁছাতে পারে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে? কখনো পুলিশের নির্মম নির্যাতন, কখনো বা মাসের পর মাস লুকিয়ে থাকা জঙ্গলে বা কোনো গোপন আস্তানায় এই কী তবে স্বপ্নের অভিবাসন? উত্তর যদি না হয়; তাহলে প্রতিকূল এসব যাত্রায় জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে ইউরোপ অভিবাসনে আপনি অবলম্বন করতে পারেন কিছু বৈধ উপায়-
কর্মসংস্থান ভিসা
ইউরোপে বৈধভাবে থাকার অন্যতম প্রধান উপায় হলো কর্মসংস্থান ভিসা। যদি আপনি কোনো ইউরোপীয় দেশের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়ে থাকেন, তবে আপনি সহজেই ওই দেশটিতে কাজ করতে পারবেন। ইউরোপীয় দেশগুলোর বেশিরভাগই দক্ষ পেশাদার এবং বিশেষজ্ঞদের জন্য কাজের ভিসা প্রদান করে। এই ভিসা পেতে হলে, আপনাকে একটি কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাব পেতে হবে এবং আপনি যে ক্ষেত্রের জন্য আবেদন করছেন তাতে আপনার যোগ্যতা থাকতে হবে। সাধারণত, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, চিকিৎসা, এবং বিজ্ঞান খাতে কাজের সুযোগ বেশি থাকে।
শিক্ষার্থী ভিসা
ইউরোপে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য শিক্ষার্থী ভিসা একটি জনপ্রিয় এবং সহজ উপায়। ইউরোপের অনেক দেশ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা প্রদান করে এবং শিক্ষার্থী ভিসা দিয়ে তাদের সেখানে পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়। শিক্ষার্থী ভিসার মাধ্যমে ইউরোপে বৈধভাবে প্রবেশ করা যায়, এবং অনেক দেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাজ করার অনুমতি থাকে। পড়াশোনা শেষে, বেশ কিছু দেশে কাজের ভিসা পাওয়ার সুযোগও থাকে, যা অভিবাসনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
পরিবারিক একত্রিতকরণ
ইউরোপে যদি আপনার কোনো পরিবারের সদস্য (যেমন: স্বামী/স্ত্রী, বাবা-মা, বা সন্তান) বৈধভাবে বসবাস করেন, তাহলে আপনি তাদের মাধ্যমে ইউরোপে আসতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি ‘পরিবারিক একত্রিতকরণ’ নামে পরিচিত। এর জন্য আপনাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যেমন- আর্থিক সক্ষমতা এবং যথাযথ দলিলপত্র জমা দেওয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো পরিবারিক একত্রিতকরণের জন্য কিছু নিয়ম নির্ধারণ করেছে, যা প্রার্থীদের জন্য বিভিন্ন দেশে ভিন্ন হতে পারে।
শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী ভিসা
যদি আপনি রাজনৈতিক, জাতিগত, ধর্মীয় বা যুদ্ধের কারণে শরণার্থী হয়ে থাকেন, তবে ইউরোপে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক নীতি অনুসরণ করে থাকে। এই ধরনের ভিসা পাওয়া কঠিন হলেও, শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার পর ইউরোপে বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিবাসন
কিছু ইউরোপীয় দেশ যেমন পর্তুগাল, স্পেন, গ্রিস ইত্যাদি ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। যার মাধ্যমে আপনি এক্সট্রা অর্থ বিনিয়োগ করে বৈধভাবে ইউরোপে বসবাস শুরু করতে পারেন। এই ভিসা প্রোগ্রামের আওতায়, আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ একটি দেশীয় প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন (যেমন- বাড়ি কেনা, ব্যবসায় বিনিয়োগ বা স্টক-বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ)। বিনিয়োগকারীদের জন্য এই ধরনের ভিসার মাধ্যমে ইউরোপে থাকার সুযোগ পাওয়া যায়।
স্টার্টআপ ভিসা
ইউরোপের কিছু দেশ বিশেষভাবে উদ্যোক্তাদের জন্য স্টার্টআপ ভিসা প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চান এবং তাদের ব্যবসার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রদান করতে সক্ষম, তারা এই ভিসার মাধ্যমে ইউরোপে বসবাসের সুযোগ পেতে পারেন। এই ধরনের ভিসার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করার পর, ইউরোপে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়, এবং পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি রেসিডেন্সি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
ইউরোপে বৈধভাবে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে এবং আপনার উদ্দেশ্য ও যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে আপনি উপযুক্ত উপায়টি নির্বাচন করতে পারেন। তবে, অভিবাসন প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে, তাই সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং অভিবাসন নীতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপে বৈধভাবে বসবাস বা কাজ করার জন্য আপনার ভিসা আবেদন যথাযথভাবে পূরণ এবং নিয়ম অনুসরণ করা উচিত।
আপনার মতামত লিখুন :