ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে প্রবাসে থাকা উচিত নয়

আব্দুল্লাহ আল শাহীন

প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৪, ০২:০৮ পিএম

ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে প্রবাসে থাকা উচিত নয়

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের মন অনেক চঞ্চল। সেই চঞ্চলতার কারণে সুযোগ বুঝে প্রায়ই মনের মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়। বিশেষ করে মনে আঘাত এলে চঞ্চল মন অতিমাত্রার ক্ষমতা নিয়ে সে পরিবর্তন চায়। আর সেই পরিবর্তন দুঃখ, কষ্ট অপমানের হয়। মনের ভেতর লুকিয়ে থাকে ধার্মিকতা, আপন চরিত্র, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতির হিসাবসহ সবকিছু। এক কথায় মন হচ্ছে মানুষের ‘সেফ বক্স’। সেই সেফ বক্সে সবকিছু রাখা হয়। যখন অনাকাক্সিক্ষত ভাবে সেফ বক্সে আগুন লাগে তখন সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেফ বক্সআব্দুল্লাহ আল শাহীন।

পোড়ানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র হচ্ছে মুখের ভাষা। ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে পরকে আপন এবং আপনকে পর করা সহজ। মুখের ভাষাকে সম্পর্ক বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়, যা বলতে চাচ্ছি তা হলো কারও মনে আঘাত দিয়ে আর যাই হোক সম্পর্ক ধরে রাখা যায় না বরং দূরত্ব সৃষ্টি হয়। ক্ষেত্র বিশেষে এ দূরত্ব শত্রুতায় গিয়ে ঠেকে। দেশে দেশে প্রবাসীরা তথাকথিত আঞ্চলিকতার নামে ফাটল তৈরি করছে। মাত্রাতিরিক্ত আঞ্চলিকতার কুফল হিসেবে প্রবাসীদের মধ্যে হিংসাবিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে আঞ্চলিকতার রেষারেষি এখন খুব বেশি। যেমন আমি যদি সিলেটি হই তাহলে অন্য এলাকার মানুষকে কখনো বলতে পারি না ‘শুধু সিলেটিরা ভালো। অন্যান্য জেলার সব খারাপ’ ‘কিন্তু তা অনেকে বলেন। এক জেলার লোক অন্য জেলার লোককে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেই চলছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক বিভাগের লোক অন্য বিভাগ নিয়ে তামাশার ট্রল বানিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এসব ট্রল তৈরিতে প্রবাসীরাও জড়িত, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।  প্রবাসে বিভিন্ন জেলার নামে ব্যাঙের ছাতার মতো একাধিক সমিতি রয়েছে। জেলাভিত্তিক সমিতি থাকতেই পারে। কিন্তু একটি জেলার নামে একাধিক সমিতি তৈরিতে প্রশ্ন দেখা দেয়। সমাজ সংস্কৃতির উন্নয়নের বদলে নিজেদের কোন্দল দানা পাকিয়ে উঠছে। এতে জেলার মধ্যে বিভক্তি তৈরি হচ্ছে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

ফলে সামাজিক যে বন্ধন আছে, সেটা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো ভ্রাতৃত্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়। আমাদের ছোট একটা দেশ- এর মধ্যে যে পরিমাণ অঞ্চল ভেদাভেদ রয়েছে, তাতে আমাদের সামগ্রিক উন্নতি সাধনে চরমভাবে বাধা সৃষ্টি করবে। আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে নিজেদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করা কাম্য নয়। আঞ্চলিকতা বা ইজম একটি মারাত্মক ব্যাধি। এ ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষদের কাছে দেশের চেয়ে জেলা-উপজেলা বড়। মাত্রাতিরিক্ত আঞ্চলিকতার কারণে ক্ষেত্র বিশেষে দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসের কর্মস্থল থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনেও এর প্রভাব রয়েছে। আঞ্চলিকতার ফায়দা নিয়ে সংগঠনের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। এতে ঐক্যবদ্ধ থাকার আকাক্সক্ষা অনেকটা হ্রাস পায়। মাত্রাতিরিক্ত আঞ্চলিকতার কারণে দূর প্রবাসে বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিতে অনেক প্রবাসীই কাজের মূল্যায়ন পাচ্ছে না, অনেক ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। যোগ্যদের পদোন্নতির পরিবর্তে আঞ্চলিকতার দৃষ্টিতে অযোগ্যদের পদোন্নতি হয়। বর্তমান সময়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিদেশি আগ্রাসনের শিকার।

তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশেই বাংলাদেশি প্রবাসীরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে একই পদে কর্মরত থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশের প্রবাসীরা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, আমরা তা পাচ্ছি না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব আগ্রাসন ও সমস্যার মোকাবিলা করার কথা ছিল। অথচ আঞ্চলিকতার নামে দূরত্ব সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি সময়ের দাবি। দূরপ্রবাসে আমরা সবাই বাংলাদেশি; প্রবাসে একই রকম পাসপোর্ট নিয়ে আসি। আমরা একই পতাকাধারী লোক সবার পাসপোর্টেই লেখা আছে, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। তা ছাড়া বিদেশিরা আমাদের একইভাবে মূল্যায়ন করে। তাই মাত্রাতিরিক্ত আঞ্চলিকতার নামে কাদা ছোড়াছুড়ি থামাতেই হবে। অন্যকে ঘায়েল করার অপচেষ্টার কূটকৌশল বন্ধ করতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি সীমারেখাকে আপন ভাবার মানসিকতা তৈরি করতে হলে প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ ও সংস্কৃতিকে সম্মান দেওয়া শিখতে হবে।

মাত্রাতিরিক্ত আঞ্চলিকতা ও বৈরী মনোভাবযুক্ত মানসিকতা পরিহার করে সুস্থ, সুন্দর সামাজিক পরিবেশ গঠনের লক্ষ্যে সব প্রবাসীদের একযোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। নতুবা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ রেখে বহির্বিশ্বে দেশের সম্মান সমুন্নত রাখা সবার প্রত্যয় হওয়া চাই।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!