ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫

নববর্ষ বরণে যে চমক দেখাবে বুর্জ খলিফা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম

নববর্ষ বরণে যে চমক দেখাবে বুর্জ খলিফা

ছবি: সংগৃহীত

বরাবরের ন্যায় ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করতে স্বমহিমায় প্রস্তুত দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা, বুর্জ আল আরব, পাম জুমাইরাহ, দুবাই মেরিনা, দুবাই আইসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গা। ২০২৫ সালের ইংরেজি নববর্ষ বরণে দুবাই এবং পুরো সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) জুড়ে এবারও এক অপূর্ব উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। একদিকে, বিশ্বব্যাপী আগত পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় সব ইভেন্ট এবং বিশেষ আয়োজন, অন্যদিকে স্থানীয়রা নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে অটুট রেখে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর মহোৎসব। এরই মধ্যে রাজধানী আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, আল আইন, রাস আল খাইমাহসহ অন্যান্য শহরগুলোতে নববর্ষ উদযাপনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আরব আমিরাত জুড়ে নববর্ষ বরণের খবর লিখেছেন ইউএই ব্যুরো প্রধান, এসএম শাফায়েত

ফায়ারওয়ার্কস: বিশ্বের সুউচ্চ ও আকর্ষণীয় ভবন বলা হয় দুবাইয়ের বুর্জ খলিফাকে। প্রতিবছর নববর্ষ বরণে তার আয়োজনের অন্তনেই। এবারও বর্ণিল আয়োজনে তাই ২০২৫ নতুন বছরকে বরণে প্রস্তুত বুর্জ খলিফা। বুর্জ খলিফা জুড়ে সাজানো হয়েছে লক্ষ লক্ষ আতশবাঁজি। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই ভবনে ফায়ারওয়ার্কস ও লেজার শো এক অন্যরকম দৃশ্য তুলে ধরে। বছরের এই সময়টি মূলত দুবাইয়ের অন্যতম বড় আকর্ষণ হিসেবে পরিগণিত হয়। ৩১ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে পুরো শহর আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে ওঠে, যেখানে বুর্জ খলিফার উপর দিয়ে বিশাল ফায়ারওয়ার্কস প্রদর্শনী দেখার জন্য হাজার হাজার পর্যটক ও স্থানীয়রা সমবেত হয়। এছাড়া, দ্য পাম জুমেইরা, দুবাই ফাউন্টেইন, বুর্জ আল আরব, দুবাই মেরিনা, দুবাই আইসহ অন্যান্য প্রমিনেন্ট স্থানেও ফায়ারওয়ার্কস এবং আলোকসজ্জা দেখা যায়। ২০২৫ সালকে বরণ করতে দুবাইসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতে জমকালো ফায়ারওয়ার্কস আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। রাজধানী আবুধাবীর কর্নিশ এলাকাতে এক বিশাল ফায়ারওয়ার্কস আয়োজন করা হয়েছে। প্রতি বছর এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ সমবেত হয় এবং এটা শহরের অন্যতম বড় আকর্ষণ হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্রাদেশিক শহর আল আইন, শারজাহ, আজমান, ফুজাইরাহ, উম্ম উল কোয়াইন ও রাস আল খাইমাহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বর্ণিল আলোকসজ্জা এবং ফায়ারওয়ার্কসের আয়োজন করা হয়েছে।  

আমিরাতি সাংস্কৃতিক আয়োজন: সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নতুন বছরের অনুষ্ঠানে বিশেষ গুরুত্ব পায়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং মিউজিয়ামগুলোতে ঐতিহ্যবাহী গান, নৃত্য এবং কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। দেশটির প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়, থিম পার্ক এবং রিসোর্টগুলোও বিশেষ করে পর্যটকদের জন্য সুবিশাল উৎসবের আয়োজন করেছে। দুবাইতে থাকা জনপ্রিয় থিম পার্ক যেমন: ‘ডিজনি-আইএমজি ওয়ার্ল্ডস’, ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ ও ‘লেগোল্যান্ড’সহ ছোট বড় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নববর্ষ উপলক্ষে আকর্ষণীয় অফার এবং বিশেষ শো আয়োজন করেছে। বিশেষত ‘বিচ রিসোর্টস’ ও ‘লাক্সারি হোটেলস’ গুলোতে রয়েছে বিশেষ ডিনার পার্টি। এখানে আগত অতিথিরা বিশ্বের নানা প্রকার সুস্বাদু খাবারের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। সেই সঙ্গে থাকবে বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে অতিথিরা উজ্জ্বল পরিবেশের মধ্যে নববর্ষের যাত্রা শুরু করবেন।

নববর্ষের শপিং ফেস্টিভাল: দুবাই শপিং ফেস্টিভাল, যা সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় শপিং ফেস্টিভাল হিসেবে পরিচিত। ২০২৫ সালের নববর্ষে অনেক নতুন আয়োজন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এই ফেস্টিভালটি চলবে জানুয়ারি মাসজুড়ে। এতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রয়ে বিশাল ছাড় চলছে। শপিংমলগুলোতে অধিকাংশ পণ্যেই ২৫ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় চলছে।  

নিরাপত্তা ব্যবস্থা: নববর্ষের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দুবাই ও অন্যান্য শহরের পুলিশ এবং সিকিউরিটি বাহিনী কঠোর প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সিসিটিভি ক্যামেরা, নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট এবং স্বাস্থ্যসেবা দল প্রস্তুত থাকবে যাতে কোনও ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে। দুবাই পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে বর্ষবরণের আয়োজনে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সাধারণ পুলিশের পাশাপাশি মাউন্টেড পুলিশ, ডগ স্কোয়াড, সাদা ও কালো পোষাকে বিশেষায়িত বাহিনী ও সেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন। 
প্রবাসীদের জন্য আয়োজন: নববর্ষ বরণ উপলক্ষে অধিকাংশ কোম্পানির পক্ষ থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। নতুন বছর বরণে প্রবাসীরাও একে অপরের সঙ্গে উৎসবে সামিল হন। এ উপলক্ষে শ্রমঘন বা লেবার ক্যাম্প এলাকায় সরকারি ভাবে বিশেষ আয়োজন করা হয়। যেখানে বিশাল মঞ্চে সন্ধ্যার পর থেকে সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি ও এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হয় বুর্জ খলিফার বর্ষবরণ ও ফায়ারওয়ার্কসের আয়োজন। এ উপলক্ষে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে উন্নত মানের খাবার ও উপহার বিতরণ করতে দেখা যায় অনুষ্ঠান স্থলে। বিশেষ করে দুবাইয়ের সোনাপুর বা মুহাইসিনা, আল কুজ ও জাবেল আলীতে এমন আয়োজন করতে দেখা যায়।  

যাতায়াত: নববর্ষকে কেন্দ্র করে দুবাইয়ের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত বা আয়োজন স্থলে যাতায়াত একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতকারীরা পার্কিং নিয়ে বড় ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে বুর্জ খলিফা তথা দুবাইয়ের ডাউনটাউন অঞ্চলে গাড়ি নিয়ে প্রবেশের কোন সুযোগ থাকে না। এ অবস্থায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট একমাত্র ভরসা। তাইতো দুবাইয়ের রোডস অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (আরটিএ) নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ ‘সার্ভিস টাইম’ ঘোষণা করে থাকে। এবারও বিভিন্ন জায়গায় যেতে বিশেষ বাস ও একটানা ৩৬ ঘন্টা মেট্রো পরিচালনা করবে দুবাই মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও নববর্ষ উদযাপনে দুবাইতে দর্শনার্থীদের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গেলো বেশ কিছুদিন অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছে। যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ট্যাক্সি ও লিমুজিন সার্ভিস আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

সবমিলিয়ে নতুন বছর বরণে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশেষত দুবাই, বিশ্বের অন্যতম সেরা উদযাপনস্থলে পরিণত হয়েছে। এখানকার জমকালো আয়োজন, দৃষ্টি নন্দন ফায়ারওয়ার্কস, বিশ্বমানের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম এবং বিশেষ শপিং ফেস্টিভ্যালের সুযোগ নববর্ষ উদযাপনকে আরও রঙিন করে তুলবে। বছরের শুরুতে এসব আয়োজন দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। 

আরবি/ আরএফ

Link copied!