ঢাকা বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

কমছে সময় বাড়ছে শঙ্কা

এসএম শাফায়েত, ইউএই ব্যুরো

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৩:৫৫ পিএম

কমছে সময় বাড়ছে শঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাধারণ ক্ষমার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী হাতে সময় আর মাত্র সাত দিন। অবৈধ অবস্থায় দেশটিতে এখনও বসবাসকারী প্রবাসীদেরকে এই সময়ের মধ্যে নিজেদের কর্মক্ষেত্র বা ভিসা পরিবর্তন করে বৈধ হতে হবে। অন্যথায় নতুন বছরের শুরু থেকেই আবারও অবৈধ হয়ে পড়বেন তারা।

এরপর পড়তে হবে বড় ধরনের আইনি জটিলতায়। সাধারণ ক্ষমার সুযোগে যেখানে কোন প্রকার জরিমানা বা জটিলতা ছাড়াই বৈধ হবার সুযোগ রয়েছে। চাইলে নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই ফিরে যেতে পারেন নিজ দেশে। সেখানে নির্ধারিত সময় শেষ হবার পর ভিসা পরিবর্তনের জন্য গুনতে হবে মোটা অংকের জরিমানা। আর তখন দেশে ফেরাও হবে অনিশ্চিত। তবে এ বিষয় নিয়ে তেমন বিচলিত হতে দেখা যায়নি প্রবাসীদের। মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রম বাজার এখন স্থবির হয়ে আছে ভিসা বন্ধ ও কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন জটিলতায়। ভিসা বন্ধের কারণে দেশটিতে যেতে পারছেন না ভ্রমণকারী বা ব্যবসায়ীরাও। আর এ কারণে দেশ থেকে নতুন কর্মী প্রেরণ একেবারেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় কর্মী পাঠানোর সংখ্যাও অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। তবে এই ভিসা জটিলতার জন্য খোদ প্রবাসীরা নিজেই দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যার অন্যতম কারণ, ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে আর নিজ দেশে ফিরে না আসা, জাল শিক্ষাগত সনদ উপস্থাপন ও দেশটির রক্ষণশীল আইন ভঙ্গের মতো গুরুতর অভিযোগ। সেসঙ্গে রয়েছে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ ও দক্ষ শ্রমিকের অভাব।

এর আগে ২০১২ অপরাধ প্রবণতার অভিযোগে দীর্ঘ নয় বছর বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরণের ভিসা বন্ধ করে রাখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সালের শেষের দিকে আবারও শর্ত সাপেক্ষে ভ্রমণ ভিসা ও উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা সাপেক্ষে কর্মসংস্থান ভিসা প্রদান শুরু করে আরব আমিরাত। এই সুযোগে দেশটিতে পাড়ি জমান প্রায় দুই লাখ কর্মী। যাদের প্রত্যেককেই নিতে হয়েছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) প্রশিক্ষণ এবং ছাড়পত্র। বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালজুড়ে প্রশিক্ষণ ও বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে আরব আমিরাতে গেছেন ৯৮ হাজার ৬১৪ জন নারী ও পুরুষকর্মী। চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৪৭ হাজার ১৬৫ জন কর্মী দেশটিতে গমন করেছেন।

ভিসা জটিলতার জন্য খোদ বাংলাদেশিরাই দায়ী। রক্ষণশীল নীতির এই দেশে নিজেদের তৈরি ফাঁদে নিজেরাই পতিত হয়েছেন বলে ক্ষোভ নিয়ে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব, ইউএই-এর সভাপতি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ, আইনকানুন, ভাষা সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা না নিয়েই কোনো রকমে একটা ভিসা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা রয়েছে এক শ্রেণির প্রবাসীদের। দক্ষ কর্মী ছাড়া যখন আর অদক্ষকর্মীদের ভিসা দিতে নারাজ আমিরাত সরকার। তখনও এক শ্রেণির অসাধু ভিসা ব্যবসায়ীরা নকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বানিয়ে ভিসা আবেদন করেছে। অদক্ষ, নিম্ন শিক্ষিত এসব কর্মীদের উচ্চ পদের ভিসা দিয়ে নিয়ে এসে সাধারণ শ্রমিকের মতো যেখানে সেখানে কাজে লাগানো হয়েছে। যা আমাদের শ্রম খাতে চরম শঙ্কা তৈরি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন আর শুধু শ্রমিক নয়। আমাদের বিশাল সংখ্যক শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তিকে আরব আমিরাতের উচ্চ পদমর্যাদা সম্পন্ন পদে কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। 
যেখান থেকে মোটা অংকের রেমিট্যান্স যেমন আসবে, তেমনি বাড়বে আমাদের দেশের সুনাম।’

সম্প্রতি দুবাই ইমিগ্রেশনের জেনারেল ডিরেক্টরেট অব রেসিডেন্সি এন্ড ফরেনার্স এ্যাফেয়ারস (জিডিআরএফএ)-এর ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আহমদ আল মারীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন দুবাই ও উত্তর আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মুহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। সাক্ষাৎকালে চলমান ভিসা সমস্যা ও কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনসহ বেশকিছু বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। সেই সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যহত রয়েছে বলেও জানা যায়।

সাধারণ প্রবাসীরা বলছেন, দ্রুত ভিসা সমস্যার সমাধান করা না গেলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শ্রম বাজারটি হারাতে পারে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সমাধানের জন্য এখন শুধু বাংলাদেশ মিশন নয়, প্রয়োজন অন্তর্বর্তী সরকারের 
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি হস্তক্ষেপ। তবেই আবারও আলোর মুখ দেখতে পারে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!