ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাধারণ ক্ষমা; কতটা সুফল পাচ্ছেন প্রবাসীরা?

এসএম শাফায়েত (ইউএই-ব্যুরো)

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ১২:১৫ পিএম

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাধারণ ক্ষমা; কতটা সুফল পাচ্ছেন প্রবাসীরা?

ছবি: সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলছে সাধারণ ক্ষমা। চলতি মাসের এক তারিখ শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে পুরো সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস জুড়ে। অনেকেই নতুনভাবে ভিসার প্রক্রিয়া শুরু করছেন। আবার কেউ দেশে ফিরে যাচ্ছেন। তবে সাধারণ ক্ষমার সুবিধা পেতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিজ দেশের পাসপোর্ট। অনেকের পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকা, পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়া, কোম্পানিতে জমাকৃত পাসপোর্ট ফেরত না পাওয়ার কারণে নতুন করে পাসপোর্ট আবেদন বা নবায়নের জন্য ভিড় করছেন প্রবাসীরা। তবে সাধারণ ক্ষমার সময়সীমার মধ্যে এ আবেদনকৃত পাসপোর্ট সরবরাহ করা সম্ভব না হলে এই সুবিধা বঞ্চিত হতে পারেন অনেকে।

দায়িত্বশীলরা বলছেন, ‘আমরা চাই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হোন।’ এ অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাধারণ ক্ষমা প্রত্যাশীদের সব ধরণের পাসপোর্ট আবেদন চায় কনস্যুলেট।

পাসপোর্ট নবায়ন

সাধারণ ক্ষমা শুরু হবার পর গত ২০ দিনে অর্থাৎ দুবাই-বাংলাদেশ কনস্যুলেটে ১-২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন করেছেন ১১,৯৭৬ জন। আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করেছেন ৪,৮৬১ প্রবাসী। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে তামিমকৃত বা আটকে রাখা প্রায় দুই হাজার পাসপোর্ট বাংলাদেশ কনস্যুলেটের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। কনস্যুলেটের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এসব পাসপোর্টের তালিকা প্রকাশ করে সংগ্রহের ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। 

প্রবাসীদের সেবা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টার কথাও বলেন কনসাল জেনারেল। তবে সেবা নিতে আসা প্রবাসীরা বলছেন ভিন্ন কথা। গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে পেতেই নানান অভিযোগের কথা তুলে ধরেন তারা। অধিকাংশ প্রবাসীর অভিযোগ, পাসপোর্ট আবেদন জমা দেয়ার পরও বেশ কিছু জটিলতা থেকে যাচ্ছে আবেদন প্রক্রিয়ায়। যে কারণে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে কনস্যুলেটে এসে। তারা জানান, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করা না হলে আবেদন বাতিল করা হচ্ছে। এরপর নির্দিষ্ট টাইপিং সেন্টার থেকে কাগজপত্র ঠিকঠাক করে নিয়ে আসা হলে তা জমা নেয়া হচ্ছে।

এরপর সাক্ষাতের জন্য আবারও একটি তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। এতে বেশ কিছু সময় অপব্যয় হচ্ছে বলেও জানান প্রবাসীরা। কোম্পানি থেকে কোন ভাবে একদিনের ছুটি নিয়ে পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কনস্যুলেটে আসতে পারলেও পরবর্তী সাক্ষাতের দিনে আবারও আসতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। এরপর পাসপোর্ট সরবরাহে বেশ লম্বা সময় চলে যাচ্ছে প্রবাসীদের। এতে নির্ধারিত সময়ে সাধারণ ক্ষমার কতটা সুফল নিতে পারবেন প্রবাসীরা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে দ্রুত সময়ে পাসপোর্টগুলো সরবরাহের কথা জানালেন কনসাল জেনারেল।

তিনি বলেন, ‘আমরা পাসপোর্ট আবেদন নেয়ার পর সেটির ডেটা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রিন্ট হয়ে আমাদের হাতে আসে। আমরা ঢাকা পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। ইতিমধ্যে মিনিস্ট্রিয়াল মিটিংও করেছি। আমাদেরকে আশ^স্ত করা হয়েছে, যথা সম্ভব স্বল্প সময়ে আমাদের পাসপোর্ট তারা পাঠিয়ে দেবেন।’

অপরদিকে আবুধাবি দূতাবাস জানায়, বৈধতার লক্ষ্যে আবুধাবি অঞ্চলেও বেড়েছে  প্রবাসীদের তৎপরতা। দূতাবাস ছাড়াও আল আইন ও বেদা যায়েদে অস্থায়ীভাবে কনস্যুলার সেবা দিচ্ছেন তারা। গত ৯ দিনে আবুধাবি অঞ্চলে এক হাজার ৬৩০টি ই-পাসপোর্ট ও ৭৫৫টি এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করেছেন তারা।

ভিসা জটিলতা

সাধারণ ক্ষমা কার্যকরের পর থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিসা না হবার গুঞ্জন শোনা যায়। অভিযোগকারীরা জানান, তারা বৈধ হলেও ভিসা পেতে জটিলতার সম্মুখিন হচ্ছেন। এ ব্যাপারে যে কোন ধরণের সমস্যা বা জটিলতা সামনে এলে ইমিগ্রিশন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলেও জানান কনসাল জেনারেল। তবে যারা সাধারণ ক্ষমা শুরু হবার ভিসা বাতিল বা স্থানান্তরিত হতে চাচ্ছেন তাদের ভিসা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, সাধারণ ক্ষমা শুরু হবার পর অবৈধ হওয়া কোন প্রবাসী সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিতে পারবেন না।

ট্রাভেল পারমিট

কোন প্রকার জেল-জরিমানা ছাড়াই দেশে ফেরার সুযোগ পেয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম দশ দিনের ছয় কার্যদিবসে ট্রাভেল পারমিটের আবেদন করেছেন চার শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি। দেশটিতে থাকা দুটি বাংলাদেশ মিশন সূত্র জানা যায়, দুই থেকে নয় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করেছেন ৩৭৯ জন। এরমধ্যে নানা অভিযোগে কারাবন্দি ৭৫ জন বাংলাদেশির আবেদনও রয়েছে। যা জেল কর্তৃপক্ষ সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া আবুধাবি-বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিট সংগ্রহ করেছেন ২৯ জন প্রবাসী।

দেখা দিতে পারে কর্ম সংকট 

বৈধ হবার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেকে নতুন করে ভিসা নিতে পারলেও দেখা দিয়েছে চাকরি বা কাজের সংকট। অধিকাংশ প্রবাসী এক শ্রেণির ভিসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ভিসা কিনছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেখানে শুধু মাত্র বৈধ হবার জন্য দুই বছরের ভিসা প্রদান করা হচ্ছে। যাকে বলা হচ্ছে ‘ফ্রি ভিসা’। সাধারণত নির্দিষ্ট কোম্পানিতে চাকরি বা কাজ থাকা সাপেক্ষে সেখানে ভিসা নিয়ে কাজ করা বা বৈধ হবার নির্দেশনা থাকলেও নিয়মকানুনের বেড়াজালে শুধুমাত্র ভিসা স্থানান্তর করেই দায় সারছেন অনেকে। বিপরীতে কোন কাজ নেই এসব নাম সর্বস্ব ভিসা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোতে। এতে বৈধ হওয়া প্রবাসীরা পরবর্তীতে নতুন করে কর্ম সংকটে পড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজতন্ত্রের দেশটিতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের বসবাস ও কাজের নিয়মকানুন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং পরিবর্তন করা হয়। ফলে নির্দিষ্ট কোম্পানি ব্যাতিত ভিন্নস্থানে কর্মরত অবস্থায় পাওয়া গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন অনেক প্রবাসী।

আরবি/ আরএফ

Link copied!