ঢাকা শনিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৪
লাখো প্রবাসী অবৈধ হওয়ার আশঙ্কা

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট নীলনকশায় বন্দি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৪, ১২:৫৮ এএম

মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট নীলনকশায় বন্দি

রূপালী বাংলাদেশ

প্রবাস জীবনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো পাসপোর্ট। সেই পাসপোর্ট নিয়ে ভোগান্তি চলছে চরমপর্যায়ে। মালয়েশিয়াতে সময়মতো পাসপোর্ট হাতে পায় না এই অভিযোগ অনেক পুরোনো। বিগত সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের পাসপোর্ট সেবা প্রদানে তৎকালীন সরকার কোনোরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দরপত্র ছাড়াই এক্সপাট সার্ভিস কুয়ালালামপুর (ইএসকেএল) নামক একটি বেসরকারি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়।

এরপর থেকে পাসপোর্ট সময়মতো পাওয়া তো দূরের কথা, ভোগান্তি বেড়েছে আকাশচুম্বী। পাসপোর্ট সেবার অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, দূতাবাসের পাসপোর্ট ডিপার্টমেন্টকে অকার্যকর করার নীলনকশা চলছে। ন্যাশনাল আইডি বা জন্মনিবন্ধনের সঙ্গে পাসপোর্টের তথ্যের মিল না থাকায় ই-পাসপোর্টের দিকে আগ্রহ কম মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী প্রবাসীদের মধ্যে।

ইএসকেএল সাবেক স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। যার কর্ণধার শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, ফুফাতো ভাই সাবেক চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী ও তার ভাই মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আছে মাওয়া হিলসা প্রজেক্টের মালিক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, মার্কেটিং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে অভিনেতা আরমান পারভেজ মুরাদকে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীরের সহায়তায় টেন্ডারবিহীন ইএসকেএল কোম্পানিকে বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ার ই-পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিংয়ের দায়িত্ব প্রদান করে। এ কাজে সহায়তা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে অন্যতম শাহ মোহাম্মদ তানবির মনসুর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, যাকে সম্প্রতি ওএসডি করা হয়েছে।

অতিরিক্ত সচিব মো. আলী রেজা সিদ্দিকী, যাকে গত ১৭ অক্টোবর ২০২৪ সালের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে পরিকল্পনা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ইএসকেএলের পরামর্শদাতা ই-পাসপোর্ট প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নুরুস ছালাম, যিনি বিগত সরকারপ্রধানের খুবই ঘনিষ্ঠজন ও তার একান্ত সহযোগী ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সাল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ না করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে তড়িঘড়ি করে ২২ সেপ্টেম্বর-২০২৩ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ইএসকেএকেলের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করে বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়া। ডেপুটি হাইকমিশনারের তত্ত্বাবধানে এই চুক্তি সম্পাদন করা হয়। চুক্তি সম্পাদনে ডেপুটি হাইকমিশনারের একান্ত সহযোগী হিসেবে কাউন্সেলর প্রণব কুমার ভট্টাচার্য দায়িত্ব পালন করেন। এই প্রণব কুমার ভট্টাচার্যকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইএসকেএল কোম্পানিকে সফল করার দায়িত্ব প্রদান করে মালয়েশিয়ায় পদায়ন করা হয়। ডেপুটি হাইকমিশনার খাস্তগীর, কাউন্সেলর প্রণব কুমার ভট্টাচার্য ও তৎকালীন কাউন্সেলর (এনএসআই কর্মকর্তা) জিএম রাসেল রানার তত্ত্বাবধানে চুক্তি সম্পাদন থেকে শুরু করে ইএসকেএল কোম্পানিকে ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা কার্যক্রমের দায়িত্ব ইএসকেএলকে হস্তান্তর করা হয়।

১৮ এপ্রিল-২৪ মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের ই-পাসপোর্ট ও ভিসা সেবা প্রদান কার্যক্রম ইএসকেএল অফিস, সাউথগেইট কমার্সিয়াল সেন্টারে উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পরেই দূতাবাসের পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার থেকে সরকারি সার্ভারসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি ইএসকেএল কোম্পানির অফিসে স্থানান্তর করা হয়। চুক্তি অনুসারে ইএসকেএল কোম্পানির কর্মচারী কর্তৃক পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টারে ই-পাসপোর্ট আবেদন জমা ও বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করার কথা থাকলেও ডেপুটি হাইকমিশনার খাস্তগীরের সহযোগিতায় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ইএসকেএল কোম্পানি ই-পাসপোর্ট সার্ভারসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতি তাদের অফিসে খুলে নিয়ে যায়।

আরবি/এস

Link copied!