ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি, ২০২৫

বিশ্বব্যাপী ফয়ছল চৌধুরীরাই তুলে ধরছেন লাল-সবুজের পতাকা

জুবায়ের আহমেদ, লন্ডন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪, ০২:১১ পিএম

বিশ্বব্যাপী ফয়ছল চৌধুরীরাই তুলে ধরছেন লাল-সবুজের পতাকা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন বাংলাদেশিরা। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশিদের অবস্থান ও সাফল্য গাঁথাই দেশের ভাবমূর্তি ও অবস্থানকে সুসংহত করেছে। ঠিক এই বাংলাদেশিরাই পৃথিবীর বুকে তুলে ধরছেন লাল-সবুজের পতাকা। বিশ্বের প্রভাবশালী দুটি দেশ ব্রিটেন ও আমেরিকায় একাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সফলতা এনেছে দেশের জন্য এক অনন্য সম্মান। যা দেশ ও জাতিকে নিয়ে গেছে বহির্বিশ্বের গ্রহণযোগ্যতার উচ্চতায়। এসব বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে অন্যতম সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জের কৃতিসন্তান ফয়ছল চৌধুরী।  তিনি ২০২১ সালের স্কটল্যান্ডের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ঐদেশের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি সংসদ সদস্য হিসেবে দেশকে গর্বিত করেন।

ফয়ছল চৌধুরী রুপালী বাংলাদেশকে জানান, তিনি মুলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ২০১৭ সালে। লেবার পার্টি সদস্য হিসেবে স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ এর সাউথইষ্ট আসন থেকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও সেই নির্বাচনে তিনি অল্প ভোটে হেরে যান। কিন্তু হাল ছাড়েননি ফয়ছল চৌধুরী। তার সংসদীয় আসনের মানুষের মন জয় করতে বিভিন্ন কর্মসুচীর উদ্যোগ নেন এবং দ্রুতই মানুষের আস্থা অর্জন করেন। যার ফলে ২০২১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আসে তার চূড়ান্ত সাফল্য।

জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার বদরদী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করা ফয়ছল চৌধুরী তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন খোয়াই নদীর তীরবর্তী হবিগঞ্জের পুরান মুন্সেফী এলাকার রামচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে ঐতিহ্যবাহী হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। স্কুলে পড়াকালীন সময়ই তিনি বাবার সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। কিছুদিন ম্যানচেস্টার থাকলেও পরবর্তীতে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গ এ বসবাস শুরু করেন। পড়াশোনা করেন স্থানীয় স্কুল-কলেজে। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই বাবার অসুস্থতা কারনে বড় ছেলে ফয়ছল চৌধুরীকেই পরিবারের হাল ধরতে হয়। প্রথমে ক্যাটারিং ব্যবসা দিয়ে শুরু করলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সর্বমহলে পরিচিতি লাভ করেন।

ব্যবসার পাশাপাশি তিনি স্কটল্যান্ডের বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন।  বিভিন্ন সমাজ সেবামুলক কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহন করে তিনি নেতৃত্বে দক্ষতা অর্জন করেন যা পরবর্তীকালে রাজনীতিতে তার সফলতার ভিত্তি রচনা করে।  ঐতিহ্যগতভাবেই বংশ পরিক্রমায় চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা সামাজিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। তার দাদা মরহুম শামসুল আলম চৌধুরী ও বাবা মরহুম গোলাম রাব্বানী চৌধুরী ছিলেন স্থানীয় সমাজে পরিচিত এবং সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। পরিবার থেকে পাওয়া এই সমাজসেবার শিক্ষা ফয়ছল চৌধুরীকে ভবিষ্যতে বড় মাপের সমাজসেবী ও নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছে বলে জানান তিনি।

ফয়ছল চৌধুরীর কর্মস্পৃহা, সমাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং দায়িত্ববোধকে স্বীকৃতি দিয়ে ২০০৪ সালে তিনি ব্রিটিশ রানীর কাছ থেকে এমবিই (মেম্বার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) খেতাবে ভূষিত হন। এটি ছিল তার জীবনের এক বিশাল অর্জন এবং দীর্ঘদিনের সমাজসেবার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এমবিই খেতাবের প্রাপ্তি ফয়ছল চৌধুরীকে শুধু একজন সফল রাজনীতিবিদ নয়, বরং একজন সমাজকর্মী এবং নেতা হিসেবে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করে। এই খেতাবের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে তাঁর নেতৃত্বের জন্য আরো বেশি সম্মানিত হন ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার গণভোটের সময় তিনি ‘বাংলাদেশীজ ফর বেটার টুগেদার ক্যাম্পেইন’ এর সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন। এ সময়ে তিনি বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কোভিড-১৯ মহামারির সময়, স্কটল্যান্ডে বসবাসকারী দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ এথনিক মাইনরিটি পরিবারের জন্য খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এডিনবার্গ এলরেক প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়ে তিনি ফুড সাপোর্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন এবং অসহায় পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। তার এই সমাজসেবামূলক কাজ স্থানীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।

২০০৭ সালে ভয়াবহ ঘুর্নিঝড় ‘সিডর’আঘাত করলে বাংলাদেশে দক্ষিণ অঞ্চল লন্ডভন্ড হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ হয়ে পড়ে গৃহহীন। সেই সব মানুষদেরকে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ফয়ছল চৌধুরীর নেতৃত্বে স্কটল্যান্ড বাংলাদেশ সমিতি।  গৃহনির্মাণ, আর্থিক সাহায্য করেন অসহায় মানুষদের, তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল, স্কুল নির্মাণে তার সাহায্য সবার নজর কাড়ে।

ফয়ছল চৌধুরী বলেন, যারা প্রবাসে থাকেন, দেশের প্রতি তাদের ফিলিংস একটু বেশিই। ব্যতিক্রম আছে। তবে সাধারণভাবে এটাই আমার অভিজ্ঞতা। আমরা যারা পার্লামেন্টে আছি তারা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি। দেশের জন্য আমাদের কিছু করার স্বপ্ন অবশ্যই আছে। সেটা কোন কিছু অর্জনের জন্য নয়।

কমিউনিটি নেতা আব্দুস সালাম বলেন, ব্রিটেনে যারা পার্লামেন্ট মেম্বার হয়েছেন তারা এখন আমাদের অনুপ্রেরণা। বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা সবাই জেনেছি তাদের সাফল্যের কথা। তাদের এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত, গর্বিত।

আরবি/জেআই

Link copied!