ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

"আসুন বাংলাদেশটাকে ভালবাসি", ৩৮তম ওয়াশিংটন ফোবানার সফল সমাপ্তি

জুয়েল সাদত, যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪, ০৩:৪১ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র: ওয়াশিংটনডিসি ভার্জিনিয়ায় তিনদিনের ফোবানা সফল ভাবে সম্পন্ন। ৩৮ তম ফোবানার সফলতার পর ২০২৫ সালের ৩৯ তম আটলান্টার পথে  ফোবানা।

ভার্জিনিয়ায় ডিএসএ এয়ারপোর্ট এর পাশেই মেরিয়েট ক্রিষ্ট্রাল গেইট ওয়ে ছিল তিনদিন প্রবাসী বাংলাদেশী মিলন মেলা। মেরিয়েট এর বিশাল হেটেলের লবি,কনভেনশন সেন্টার ছিল ৩৫ টি স্টেটের প্রবাসী দের পদচারনায় মুখরিত। 

১ম দিন ৩০ আগস্ট ঊদ্ভোধনী ছিল জাকজমকময়। উত্তর আমেরিকার ওয়াশিংটনডিসির ভার্জিনিয়ায় ৩৮ তম ফোবানার তিনদিনের কনভেশন এর উদ্ভোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথি  ভয়েস আফ আমেরিকার সাংবাদিক ও ফোবানার প্রতিস্টাতা ও ১৯৮৭ সালের ১ম ফোবানার কনভেনর ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, আমি কালের সাক্ষী। আজ ফোবানা নানা মাধ্যমে কাজ করে। ফোবানার  ৩৮তম আসরে আমি উপস্থিত হয়ে গৌরববোধ করছি। ৩৭ বছর আগে বেশী প্রবাসী ছিলেন না, আমরা একটি স্বপ্ন বুনেছিলাম আজ ফোবানা পুর্নতা পেয়েছে। ফোবানা যেন প্রবাসীদের বিভাজন মুক্ত রাখে।

আবীর আলমগীর ও শামীম আহমদের পরিচালনায় ফোবানায় উদ্ভোধনী অনুষ্টান শুরু হয় বাংলাদেশ, আমেরিকা ও কানাডার জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। উদ্ভোধনী অনুস্টানে  ফোবানার নির্বাহী সংসদ ও আগত অতিথিরা মঞ্চে আসন গ্রহন করেন।

বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন স্কটল্যান্ডের  শ্যাডো মিনিস্টার ফয়সাল আহমদ এমবিই, তিনি বলেন ফোবানার পজিটিভ বিষয়গুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, আমি বাংলাদেশের সকলকে মুলধারার রাজনীতিতে যোগ দেবার আহবান জানাব। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি সায়েন্স এন্ড ট্যাকনোলজি এর ভিসি ইন্জিনিয়ার আবু হানিফ বলেন, ফোবানার জন্ম ওয়াশিংটনে, আজ আমরা ৩৮তম আসরটিও ওয়াশিংটনে করছি, এটা একটা মাইলস্টোন। ফোবানার সাথে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি সব সময় একসাথে কাজ করবে।

ভয়েব অব আমেরিকার রোকেয়া হায়দার বলেন, ফোবানার নানা মুখি কাজ সমাজকে আলোকিত করছে। 

আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে বক্তৃব্য রাখেন ভার্জিনিয়া স্টেট  সিনেটের ডক্টর গাজালা এফ হাসমী ও সাদ্দাম এজলান সেলিম। আরলিংটন কাউন্টি বোর্ডে সোসান কানিংহাম, রিজিওনাল ডায়রেক্টর তানিয়া টলেনটো ও ইউ এস সিনেটর মার্ক আর ওয়ার্নার।

ফোবানার নির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ট্রেজারার ডক্টর প্রিয়লাল কর্মকার, জয়েন্ট সেক্রেটারি খালোদ আহমদ রউফ, এক্জিকিউটিভ সেক্রেটারি আবীর আলমগীর, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুদ রব চৌধুরী ও চেয়ারম্যান এটর্নী মোহাম্মদ  আলমগীর।  ৩৮তম হোস্ট কমিটি বাগডিসির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মেম্বার সেক্রেটারি আবু রুমী, প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু ও কনভেনর রোকশানা পারভীন।

কনভেনর রোকশানা পারভীন বলেন, আপনাদের সকলের সহযোগীতায় আজ ৩৮তম ফোবানা সফল হতে যাচ্ছে। আশা করছি আগামী তিন দিন আপনারা উপভোগ করবেন। হোস্ট কমিটির প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন বলেন, আমাদের চেস্টার ত্রুটি ছিল না, যদি কোন ভুলত্রুটি আগামী তিনদিন চোখে পড়ে, আপনারা তা সহজ ভাবে নিবেন।

ফোবানার চেয়ারম্যান এটর্নী আলমগীর বলেন, আপনারা ৩৮তম ফোবানা সফল করতে অনেকেই সহযোগীতা করেছেন। সবাইকে ধন্যবাদ।। 

রাত ৯ টা ৩০ মিনিটে ফোবানার ভেটারান ইকবাল বাহার চৌধুরী আনুষ্ঠানিক ভাবে ৩৮তম ফোবানার উদ্ভোধন করেন। সে সময় মঞ্চে ছিলেন ফোবানার এক্স চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং ফোবানার প্রতিস্টাতা সময়কালের গোলাম ফরিদ আক্তার  ও মাজহারুল ইসলাম।

উদ্বোধনী মুল অনুষ্ঠানের পুর্বে সন্ধ্যা ৬ টা ব্লাক টাই ডিনারের মাধ্যমে ৩৮ তম ফোবানার তিনদিনের কনভেনশন শুরু হয়।

রাত ৯.৪৫ মিনিটে বাংলাদেশের দেশের গানের সাথে ঐতিহ্যগত নাচের পরিবেশনা ও  বাংলাদেশ থেকে আগত নৃত্যশিল্প মৌ ও লায়লা হাসানের দেড় ঘন্টার গীতিনাট্য পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর। নতুন প্রজন্মের নাচের শিল্পীদের পরিবেশনায় দর্শকরা উপভোগ করেন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এর ভেন্যুতে নানা ভেন্ডরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। ফোবানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাত ১ পর্যন্ত চলে।

ওয়াশিংটনডিসির ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পাশে ছোট হল রুমে ১৯৮৭ সালে ফোবানার ১ম সম্মেলন শুরু হয়ে ধারাবাহিক ভাবে তা ৩৭ টি সফল সমেলন এর ধারাবাহিকতায় ৩৮তম ওয়াশিংটন ফোবানার শুরু হয়।

৩১ আগস্ট শনিবার, ছিল ফোবানা কনভেনশনের দ্বিতীয় দিন। দুপুর ১২ টায় ছিল ইউথ ফোরামের সেমিনার সহ বেশ কয়েকটি সেমিনার, ১১ টায় শুরু হয় ফোবানার ইসি কমিটির মিটিং। সাড়ে ১২ টায় ছিল ফোবানার আকর্ষনীয় বিজনেস লাঞ্চ। স্পন্সর্ সহ সফল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিজনেস লাঞ্চে কথা বলেন,  আমেরিকার নানা শহর ও নানা দেশের ব্যবসায়ীরা। অতিথি হিসাবে  ছিলেন স্কটল্যান্ড এর মেম্বার অফ পার্লামেন্ট ফয়সাল আহমদ এমবিই। আগত ব্যবসায়ীরা তাদের সফলতার কথা বলেন এবং কিভাবে কমিউনিটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়  তার গল্প বলেন। তাদের ধন্যবাদ জানান, ফোবানার চেয়ারম্যান এটর্নি মোহাম্মদ আলমগীর, কনভেনর রোকশানা পারভীন ও বিজনেস লাঞ্চ এর চেয়ারম্যান আজাদুল হক।

দ্বিতীয় দিনের সকালে ছিল বাচ্চাদের সায়েন্স ফেয়ার ও বিকাল ৩ টায় কাব্য জলসা। উত্তর আমেরিকার ৫৪  জন স্বনামধন্য কবিদের উপস্থিতিতে কবি ও সাহিত্যিকদের পদচারনায় মুখরিত ছিল কাব্য জলসার ভেন্যু।  

কাব্য জলসা উপলক্ষে মৃদুল রহমানে সম্পাদনায় একটি সুভেনির প্রকাশিত হয়। কাব্য,জলসায় কবিরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

সন্ধ্যায়  শুরু হয় ফোবানার মুল ভেন্যুতে সাংস্কৃতিক অনুস্টান। কালচারাল শো তে ছিল নানান শহরের সংগঠনগুলোর নানান পরিবেশনা। নাচ, গান, নাটক, ও বাচ্চাদের পরিবেশনায় মুখরিত ছিল মেরিয়ট এর বলরুম। 

সন্ধায় শুরু হয়ে তা রাত ২ টায় কুমার বিশ্বজিৎ এর শেষ পরিবেশনা দিয়ে শেষ হয়  । ফোবানার ভেন্যুতে একটি খাবারের দোকান ছিল, সেখানে খাবারের কমতি ছিল না। ছিল অনেকগুলো কাপড়ের দোকান,বইয়ের দোকান সহ নানান রকমারি বিজনেস প্রমোশনাল বুথ।

 দুবাই থেকে ও ঢাকার রিয়েল এস্টেট এর প্রতিনিধিরা ছিল কনভেনশনে। শনিবারের পুরোটা দিন জুড়ে ছিল সায়েন্স ফেয়ার, ওমেন এমপাউয়ারিং, ইউথ ফোরাম,বই মেলা, ক্রাফট এন্ড ক্লথিং শো, ফোবানা ফিল্ম শো, কাব্য জলসা, সেমিনার -ইমিগেশন ডিসকাশন। ৩১ শে ডিসেম্বর উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্বাদের সম্মামনা  প্রদান করা হয়। 

১ লা সেপ্টেম্বর, রোববার ছিল ফোবানার ৩য় দিন। দুপুর ১২ টায় শুরু হয় ফোবানার এজিএম। ৩ ঘন্টা ব্যাপী এজিএম এ ফোবানার বিগত বছরের পর্যালোচনা, আয় ব্যায়ের হিসাব, আইন কানুন পরিবর্তন , ভোটিং সিস্টেম আপডেট,  নতুন কমিটির পরিচিতি, ২২ টি সাব কমিটির কার্যক্ষম সহ নানা বিষয় অপেন ডিসকাশন ছিল।

সকাল ১১ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত ছিল বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেমিনার। সেমিনার গুলোর সমন্বয় করেন রোপম ও ড্ক্টর তারেক।

বিকাল ৫ টায় ছিল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। ছিল  "বায়োগ্রাফি অফ নজরুল" নামের ৯০ মিনিটের একটি অনবদ্ধ ফিল্ম। ফোবানার তিনদিনের কালচারাল শোর উউপস্থাপনায় ছিলেন শামিম আহমদ, রাহি ও ইভা। তৃতীয় দিনের মুল শিল্পী যারা শো এর শেষ পর্যায়ে ছিলেন আখি আলমগীর, মোজা ও জেফর। মোজা ও জেফারের এর গানের উন্মাদনায় নতুন প্রজন্ম উপভোগ করে। 

আরো যে সব শিল্পী শেষ দিনে পারফর্ম করেন,কালাচাঁদ সরকার,শিল্পী রোজারিও, বনানী চৌধুরী,অপর্না মিত্র,মম, মিমি আলাউদ্দিন, সারজিল, স্বপ্নিল  ও হাসনাথ সানী ও বাচ্চাদের পরিবেশনা। মোট কমবেশী ২৫০ জন পারফর্মার ফোবানাকে জমিয়ে রাখেন, আটলান্টার বাংলাধারা,ড্রামা সার্কেল সহ নানান শহরের সংগঠনগুলো নানান পরিবেশনা উপস্থাপন করেন। 

শেষ দিনের রাত ১১টায় মঞ্চে ২০২৪ সালের ফোবানার নির্বাহী সংসদের দায়িত্ব গ্রহন ও ২০২৫ সালের আটলান্টা ফোবানা হোস্ট কমিটির দায়িত্ব হস্থান্তর। সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে এটর্নী মোহাম্মদ আলমগীর, আবীর আলমগীর, মাসুদ রব চৌধুরী, খালেদ আহমদ রউফ, ডক্টর প্রিয়লাল কর্মকার, রেহান রেজা, মাহবুব রেজা রহিম, নুরুল আমিন নুরু, রোকশানা পারভীন, মাহবুব রহিম, দিলু মওলা ও ডিউক খান।

২০২৫ সালের ৩৯তম আটলান্টা ফোবানার কনভেনর নাহিদুল খান সাহেল ও মেম্বার সেক্রেটারি মাহবুব ভুইয়া আটলান্টা ফোবানায় সকলকে উপস্থিত থাকার আহবান জানান। 

ফোবানার তৃতীয় দিনে “ফোবানা স্কলারশীপ” প্রদান করা হয়, রেহান রেজার পরিচালনায় ফোবানার স্কলারশীপ প্রাপ্তদের পুরস্কার প্রদান করেন স্কলারশীপের স্পন্সররা।

৩৯ তম ফোবাবায় নানা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় আাউটস্টেন্ডিং সম্মামনা দেয়া হয় এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন এবং যারা ক্রেস্ট গ্রহন করেন এন্থনী গোমেজ, সেমিনার কমিটির রোপন ও ড্ক্টর তারেক, সাংবাদিক প্রথম আলোর  জুয়েল সাদত ও   বিজনেস লাঞ্চ এর আজাদু্ল হক।

ফোবানার তৃতীয় দিন, রোববার রাত ১১ টায় ১৯৮৭ সালে প্রতিস্টিত বাংলা স্কুলের বাচ্চাদের পরিবেশনা  ছিল অসাধারন। ৩৭তম ওয়াশিংটনডিসির ফোবানায় দর্শকদের উপস্থিতি কম বেশী হলেও কালচারাল অনুস্টান গুলো ছিল অসাধারন, যা ফোবানার মুল আকর্ষন। সাংস্কৃতিক কমিটির চেয়ারম্যান তাসকিন অসাধারন ভাবে তিনদিনের পুরো সাংস্কৃতিক অনুস্টানমালা পরিচালনা করেন। এই কঠিন সাংস্কৃতিক অনুস্টানমালা পরিচালনা ও টাইমিং হ্যান্ডলিং করাটা দুরুহ কাজ ছিল, তাসকিন সকলের ধন্যবাদ অর্জন করেন। 

ফোবানার ৩৮তম আসরটি সকল মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে অসাধারন ভেন্যু সহ নানা কারনে, যে ছোট খাট ভুল ত্রুটি ছিল তার জন্য হোস্ট প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন নুরু ও কনভেনর রোকশানা পারভীন সকলকে সহজভাবে নেবার জন্য আহবান জানিয়েছেন। সামগ্রিক বিচারে ওয়াশিংটনডিসি র ফোবানা উত্তর আমেরিকায় প্রশংসা কুড়িযেছে। নতুন বাংলাদেশ গঠন ও প্রবাসী নতুন প্রজন্ম কে দেশীয় সংস্কৃতিতে।আরো সম্পৃক্ত করার আহবান জানান, নানান বক্তারা। 

আরবি/জেডআর

Link copied!