আজান ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দশন। এর সঙ্গে জরিয়ে আছে ইসলামের অন্যতম বিধান নামাজ। আজানই মুসলমানদের নামাজের কথা মনে করিয়ে দেন। ইসলামের ফরজ বিধান নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ আহ্বানকে আজান বলা হয়। দিনে পাঁচবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন আজান দিয়ে থাকেন। আজান শোনার পর দোয়া পড়তে হয়।
আজানের দোয়া
আল্লাহুম্মা রব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কায়িমাতি আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাতা ওয়াদ দারজাতার রফিআতা ওয়াবআসহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়াআত্তাহু; ওয়ারজুকনা শাফাআতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিআদ।
আজানের দোয়ার অর্থ
হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বানের ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠিত নামাজের আপনিই প্রভু। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে ওয়াসিলা ও সুমহান মর্যাদা দান করুন এবং তাঁকে ওই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন আর কিয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশ আমাদের নসিব করুন; নিশ্চয়ই আপনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।
আজানের পর দোয়া পড়ার ফজিলত
মুয়াজ্জিনের আজান শুনে উত্তর দেওয়া এবং আজানের পর দোয়া পড়ার ফজিলত অত্যাধিক। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আজানের পর দোয়া পাঠকারীর জন্য রয়েছে ফজিলতপূর্ণ পুরস্কার।
আজানের পর দোয়া ও মুনাজাত মূলত নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরুদ ও প্রশংসা। নবিজির দরুদ পাঠ ও প্রশংসায় মিলবে পরকালের সুপারিশ। এর চেয়ে বড় পুরস্কার মুমিনের জন্য আর কী হতে পারে!
হাদিসের বর্ণনায় এসব ফজিলত, দরুদ ও দোয়া ওঠে এসেছে। তাহলো-
১. হজরত জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে এ দোয়া পড়বে-
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াছ ছালাতিল ক্বায়িমাহ, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াবাআছহু মাক্বামাম্ মাহমুদানিল্লাজি ওয়া আত্তাহ।‘
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও আসন্ন ছালাতের তুমি মালিক। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওয়াসিলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন। এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত কর। যার ওয়াদা তুমি করেছ।’
কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ পাওয়ার অধিকারী হবে।’ (বুখারি, মিশকাত)
২. হজরত সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শুনে এ দোয়া পড়বে-
উচ্চারণ : ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসুলাও ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা।’
অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে খুশি হয়েছি।’
তার গুনাহসমূহ মাফ করা হবে।’ (মুসলিম ও মিশকাত)
আজানের বাক্যগুলো
আল্লাহু আকবার ৪ বার
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ২ বার
আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ ২ বার
হাইয়া আল্লাস সালাহ ২ বার
হাইয়া আলাল ফালাহ ২ বার
আবার ‘আল্লাহু আকবার’ ২ বার এবং সবশেষে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ১ বার উচ্চারিত হয়।
ফজরের নামাজের আজানে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’র পর ‘আস সালাতু খাইরুম মিনাননাউম’ অর্থ: ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম’ ২ বার বলা হয়।
আজানের বাংলা অর্থ
আল্লাহ মহান
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল’
নামাজের জন্য আসো
কল্যাণের জন্য আসো’
আল্লাহ মহান
আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই’
নামাজের ইকামত
ফরজ নামাজের আগে ইমামের পেছনে দাঁড়ানোর পর মুয়াজ্জিন আবার আজান দেন। একে ইকামত বলা হয়।
ইকামতে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’র পর ‘কাদকামাতিস সালাহ’ বলা হয় ২ বার।
আজান শুনলে শ্রোতা মনে মনে আজানের শব্দ বলবেন। ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’র পরিবর্তে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবেন।
আজানে ‘আল্লাহু আকবার’ ৪ বার, ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ ২ বার, ‘আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ ২ বার, ‘হাইয়া আল্লাস সালাহ’ ২ বার,
‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ ২ বার, আবার ‘আল্লাহু আকবার’ ২ বার এবং সবশেষে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ একবার উচ্চারিত হয়।
ফজরের নামাজের আজানে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’র পর ‘আস সালাতু খাইরুম মিনাননাউম’ দুবার বলা হয়।
ফরজ নামাজের আগে ইমামের পেছনে দাঁড়ানোর পর মুয়াজ্জিন আবার আজান দেন। একে আকামত বা ইকামত বলা হয়। ইকামতে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’র পর ‘কাদকামাতিস সালাহ’ বলা হয় দুবার। আজান শুনলে শ্রোতা মনে মনে আজানের শব্দ বলবেন। ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’র পরিবর্তে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবেন।
ইকামতের বাক্যগুলো
আল্লাহু আকবার, (৪ বার)
আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, (২ বার)
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ, (২ বার)
হাইয়া আলাস সালাহ, (২ বার)
হাইয়া আলাল ফালাহ (২ বার)
কদ কমাতিস সালাহ, (২বার)
আল্লাহু আকবার, (২ বার)
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (১ বার)।
ফজরের নামাজের আজানে পঞ্চম বাক্যের (হাইয়া আলাল ফালাহ) পর বলতে হয়, আস সালাতু খায়রুম মিনান নাওম, ‘ঘুম অপেক্ষা নামাজ উত্তম’ (২বার) এবং ইকামতে এই স্থানে বলতে হয় কদ কমাতিস সালাহ, ‘জামাত প্রস্তুত’ (২ বার)।